সোমবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১২

দিস ইজ নট আ ফিল্মঃ ইয়েস দিস ইজ আ ফিল্ম।


অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছি। খানিকটা সিনেমা নিয়ে পড়ে ও ফেলেছি। যাদবপুরের প্রথম সেমিস্টারটাও দেওয়া হয়ে গেছে। ক্লাসে বসে, কফি কাপ হাতে এর সাথে তার সাথে বারবার তর্ক শুরু করেছি সিনেমা কি সত্যিই সত্যি কথা বলে নাকি কালের যাত্রায় সে দিনদিন তার নিজস্ব ভাষা হারিয়ে বর্তমানে শুধুমাত্র আকর্ষণের কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হয়েছে? এ প্রশ্ন আজকের দিনে এসে বড় তাত্ত্বিকেরও করা ভুল হবে। বর্তমান টেকনোলজির যুগে এসে ডিজিটালের রমরমা স্টেজ থেকে ঘোষণা করে “আপনার বাড়ির ছোট ছেলেকেও মোবাইলটা দিন সেও তার মত করে তুলে একটা ছবি বানাক আর আমাদের কাছে এসে জমা দিন আমরা সে ছবি দেখাবার ব্যবস্থা করব”। সুতরাং আজকের দিনে এসে ছবি বানানোটা নিছক একটা ফুলের মালা গাঁথার মত হয়ে গেছে, ওটা যে কেউ পারে। কিন্তু তত্তগত ভাবে তার মূল্য বিচার হয় না, শুধুমাত্র হিসেবের নিরিখে তাকে মাপা হয়। ধুস কি সব হাবিজাবি বলছি কি নিয়ে লিখব ভেবেছি আর কি সব বলে যাচ্ছি। মূল লেখার কথায় আসি।
সেই ক্লাসরুমে কল্লোল বাবুর মুখ থেকে প্রথমবার শুনেছিলাম। ওনার বলার মধ্যেই এমন একটা ভঙ্গিমা ছিল যে ছবিটা দেখার জন্য তখন থেকে মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে ছবি তৎক্ষণাৎ তখন পাওয়া যায় নি। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হল। কিন্তু এই অবসরে তার দু একটি ছবি আরও দেখে ফেললাম। তার দেশের আরও কিছু পরিচালকেরও কিছু ছবি দেখে ফেললাম। কিছুটা হলেও তার দেশ কে চিনলাম। তার দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা জানলাম। আমি জাফর পানাহির কথা বলছি। মধ্যপ্রাচ্যের ইরানের পরিচালক জাফর পানাহি। দেখতে শুনতে সুন্দর। ফর্সা। ছোট চুল। গালে দাড়ি নেই। কোন দিক থেকেই তাকে জঙ্গি বলা যাবে না। তবুও তিনি বন্দী। হ্যাঁ গৃহবন্দী। স্বৈরাচারী শাসন তন্ত্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন সরি ক্যামেরা চালিয়েছিলেন। তার আগের ছবি “অফসাইড” এর মুক্তির পর তাকে গৃহবন্দী করে দেওয়া হয়। আর তাকে সিনেমা বানানো থেকে বিরত করে রাখা হয়। হ্যাঁ আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা জানে যে কখন মুখ খুলতে হয়, আর কখন না। বড় বুদ্ধিমান তারা সেই জন্যই না বুদ্ধিজীবী। আসলে তারা জানেন না অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সবসময় হয়ে এসেছে। যখন আমার চারপাশে বর্ম থাকবে তখনই মুখ খুলব আর যখন থাকবে না তখন চুপসে থাকব। আসলে ওই মুখ খোলাটাও যে ক্ষমতার লোভেই। তারা ভাল করে জানেন কখন কেমন রূপ ধরতে হবে। খুব ক্যামেরা কনসাস তারা।
পানাহিও আসলে বুদ্ধিমান। খুব বুদ্ধিমান। তিনিও জানেন কি ভাবে তার মুক্তি মিলবে। আসলে হয়ত এ আমার ভুল। আমারই অত্যাধিক প্রত্যাশা ছিল। যেভাবে ছবির গল্পটা শুনেছিলাম আর যে মানুষটার “মিরর”, “সার্কেল” দেখেছিলাম তার কাছে যে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি হবেই। তাকে ছবি না করতে দেওয়ার কষ্টটা যে কি আমিও অতি সামান্য হয়ে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সারা ছবি জুড়ে তার প্রতিফলন আমি কোথাও দেখতে পেলাম না। কোথাও দেখতে পেলাম উত্তাল ইরানের অবস্থা তাকে কিভাবে বিরক্ত করে। আসলে মিঃ পানাহি এসবের উপরে উঠে গেছেন। এ ছিল তার সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ। অতি শান্ত নরম গলায় বিন্দুমাত্র ভনিতা না করে হাসিমুখে গোটা একটা ফুল থেকে তার পাপড়ি গুলো ছিড়ে ফেলার মত অহিংস প্রতিবাদ। তাদের কে দেখিয়ে দেওয়া যে শিল্পীকে কখনও বিরত রাখা যায় না সে তার সৃষ্টির পথ ঠিক খুঁজে নেয়। তাই তো মিঃ পানাহিকে বলতে হয় আমরা যদি সিনেমার গল্পটা বলতেই পারি অভিনয় করে দেখাতেই পারি তাহলে সিনেমা বানাব কেন?
সারা ছবি জুড়ে আমরা পানাহিকে দেখলাম। তার কথা শুনলাম। তার আইনজীবীর কথা শুনলাম। জানলাম একমাত্র আন্তর্জাতিক চাপই তাকে মুক্তি দিতে পারে এই বন্দীদশা থেকে। পানাহি বারবার চা খান। মেয়ের আদরের গোসাপকে ইগি বলে ডাকেন। তার সিনেমার দৃশ্য দেখিয়ে আমাদের বোঝান সেই দৃশ্যের সাথে তার অবস্থার মিল কোথায়।  বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন তার ক্যামেরা নিয়ে আসতে কোথাও অসুবিধা হয় নিতো? রাস্তায় পুলিস দেখে কি বলল। বন্ধুকে বলতে শোনা যায় না তেমন কোন অসুবিধা হয় নি ওরা চেক করেই ছেড়ে দিয়েছে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
তিনি নিজের মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করতে থাকেন। ময়লা নিতে আসা আর্ট কলেজের ছেলেটি যখন জানতে পারে যে তিনি ছবি রেকর্ড করছেন সে তখন নিজেকে আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়। পানাহি মোবাইল ছেড়ে বড় ক্যামেরা নিয়ে আসে। লিফটে তার সাথে নামতে থাকে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে কি করবে তুমি এরপর সে বলে কোথাও যাব একটা যেখানে একটু শান্তি পাওয়া যাবে। পানাহি ক্যামেরা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে ছেলেটি বারন করে আপনি বাইরে আসবেন না ওরা দেখে ফেলবে। আমরা দেখতে পাই প্রথমবার তার ঘরের বাইরের দৃশ্য আগুন জ্বলছে বাইরে। পুড়ছে মানুষ পুড়ছে সমাজ পুড়ছে দেশ। ছবি শেষ। আমার বারবার মনে পড়ছে দুটি লাইন
“কাছে থাকো। ভয় করছে। মনে হচ্ছে।
এ মুহুর্ত বুঝি সত্য নয়। ছুঁয়ে থাক।”
নিঃশব্দে কিভাবে ছবি বানানো যায় সে ছবিও আলমারির পিছনে লুকিয়ে থাকা প্লেবয় ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠা ছিড়ে কিভাবে মানবতার সামনে এসে দাড়ায়। প্রশ্ন করে আর কতক্ষন লুকিয়ে থাকবে। এবার যে বেরিয়ে এস নিজের হাতে তুলে নাও অস্ত্র রুখে দারাও সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এভাবেও ছবি বানানো যায়। এভাবেও নিজের কথা মানুষকে জানানো যায়। এভাবেও মুক্তি পাওয়া যায়। এভাবেও সিনেমা বানানো যায়।
নতুনভাবে পানাহি এক ডিক সরি দিকদর্শন দিয়ে গেলেন। যা কোথাও লুকিয়ে থাকা সেই সমস্ত মানুষদের উজ্জীবিত করে গেল যারা নিজেদের ভাষা হারিয়ে ফেলার ভয়ে ছিলেন, তারাও নিজেদের ভাষা রক্ষার নতুন পথের সন্ধান পেলেন।
তাই দিস ইজ নট আ ফিল্ম, দিস ইজ আ ফিল্ম হয়ে দাড়ায়। সমস্ত রঙবেরঙের আদিখ্যেতাকে দুরে সরিয়ে রেখে নতুন এক ভাষার সৃষ্টি করে। যে ভাষায় আবারও কেউ ভেবে উঠে হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে সেও কলমের মত খাতায় প্রতিবাদের অক্ষর লিখে চলবে।। 
ছবিঃ দিস ইজ নট আ ফিল্ম
ধন্যবাদন্তেঃ .....................।
অসংখ্য ধন্যবাদন্তেঃ ............।
উৎসর্গঃ সমস্ত ইরানিয়ান পরিচালকদের।
পরিচালনাঃ জাফর পানাহি
সহযোগিতায়ঃ মোজতাবা মিরতামহ্সব।


সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১২

লাইফ অফ পাইঃ অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম।।





হতাশা আর আশা ভঙ্গের আশা দুটোই কি এক? বেঁচে থাকা আর বাঁচার জন্য লড়াই করা দুটোই কি এক? আমরা হয়ত সবাই একমত হই যে প্রতিনিয়ত আমরা লড়াই করছি বেঁচে থাকার জন্য। হ্যাঁ লড়াই হয়ত করছি কিন্তু কার সাথে লড়াই করছি আর কিসের জন্য করছি? উত্তরটা হয়ত সবারই জানা যে আমরা আমাদের প্রতিনিয়ত জীবনে আগত সমস্যার সাথে চলার পথে বাঁধার সাথে লড়াই করছি কারন যত বেশি সময় আমরা এই পৃথিবীতে থাকতে পারি তার জন্য। আসলে আগেই বলেছি এই লড়াইটা বেঁচে থাকার জন্য। কিন্তু কিসের জন্য বেঁচে থাকা? আমরা সবাই বলি জীবনের জন্য, নিজের জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য, আমাদের সমাজের জন্য, আমাদের দেশের জন্য, আমাদের পৃথিবীর জন্য। কিন্তু এ সবের উপরে অস্তিত্বের জন্য। সেই কবে চার্লস ডারউইন বলে গেছেন এ লড়াই আসলে অস্তিত্বের জন্য, তার প্রবন্ধ “অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম”অধুনা হয়ত এই তত্ত্বের সামান্য পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এ সত্যের বিচ্যুতি হয়নি। পরবর্তীকালে দার্শনিক জঁ পল সাত্রে থেকে শুরু করে কাফকা সবাই এই অস্তিত্বের জন্য লড়াইয়ের কথাই বলে গেছেন। ঐশ্বরিক চিন্তাভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে আমরা নিজের জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যখন লড়াই করি আসলে সেটাই তখন অস্তিত্বের জন্য লড়াই করা হয়। ঈশ্বরে বিশ্বাস ভাল, কিন্তু ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। জীবনে বাঁচার পথটা আমাদের নিজেদেরই তৈরি করতে হয় আর নিজেদেরকেই সে পথে হাঁটতে হয়। সমস্যার সম্মুখিন হলে নিজেদেরকেই সেই সমস্যার সমাধান করতে হয়, সমাধান হলে ভাল, না হলে নিজেদেরকেই সেই সমস্যার কবলে পরে পুনরায় সঠিক পথটার জন্য ভাবতে হয় নতুন ভাবে আবার প্রস্তুতি নিতে হয় এগিয়ে যাওয়ার। যদি সঠিক ভাবে আমরা ভাবি তাহলে আমাদের নিজেদের নিজস্ব কোন পরিচয় নেই, নামটাও বাবা মায়ের দেওয়া, তাহলে নিজের পরিচয় কি? উত্তর হয়ত অনেক আসবে কিন্তু সর্বোপরি এটাই সত্য প্রতিনিয়ত আমরা নিজের নিজস্বতাকে পাওয়ার লক্ষ্যেই, নিজের অস্তিত্বকে প্রমানের লক্ষ্যেই লড়াই করে চলেছি। এই লড়াইতে কখন ঈশ্বরের উপস্থিতি আমাদের সবল করে তোলে, আশা জাগায় সমগ্র ক্ষমতার অধিকারী আমাদের সাথে আছেন, আবার কখনও পরাজয়ের গ্লানি আমাদের তার কাছ থেকে বিরত রাখে। তর্ক হয়ত অনেক হবে কেন আমরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হব আর কেনই বা হব না। কেন তার ওপর আস্থা রাখব আর কেনই বা আস্থা রাখব না। কিন্তু এ অবসর তর্কের নয় এ অবসর পিস্কিন মলিতর প্যাটেলের জীবন আলচনা করার।
সেই ছোটবেলায় পন্ডিচেরির নীল সাদা জীবনে যখন সারা ক্লাস জুড়ে বোর্ডের পর বোর্ড জুড়ে ৩.১৪৫..... এর পরবর্তী সংখ্যা গুলো লিখে চলেছে তখনই তো সবাই আশ্চর্য অবাক বিস্ময়ে এই “মিরাকেল বয়” এর দিকে তাকিয়ে ছিল। আর এই থেকেই তো তার নামের উৎপত্তি “পাই”। আসলে সে যে সংখ্যা গুলো লিখে চলেছে তা আসলে গাণিতিক এক রাশির সাঙ্খ্যেতিক মান। কিন্তু এ যে আসলে তার সহপাঠীদের তাকে অপমানের উত্তর ছিল।
ছোটবেলা থেকেই তার ওপর ঐশ্বরিক চিন্তাভাবনার প্রভাব পড়েসে চার্চে যায়, ফাদারের কাছে জানতে যায় কেন প্রভু যীশু শেষ জীবনে অমন কষ্ট করেছেন, অথচ নিজে বাড়িতে রোজ সকালে নামাজ পড়ে। অস্কারজয়ী পরচালক অ্যাং লি হয়ত এটাই বলতে চেয়েছেন যে ঈশ্বর এক ও অবিনশ্বর ধর্মের দোহাই দিয়ে তাকে বিভক্ত করা যায় না। আমি বিশ্বাস যীশুতে রাখতে পারি কিংবা আল্লায়, আমি বিশ্বাস কৃষ্ণে রাখতে পারি কিংবা বুদ্ধে সেটা নিতান্ত ব্যাক্তিগত কিন্তু আমাদের এক ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখা উচিত। সে ক্ষমতা হয়ত ঈশ্বর। আসলে এক ক্ষমতা বর্তমান কিন্তু তার বিভক্ততা মানুষের সৃষ্টি। তাই বিপদে পড়লে আমরা তার সম্মুখীন হই, এই তিনিই কখনও আল্লা হন, কখনও বা যীশু। কিন্তু পাই সে তো “গড” কে ডাকে। যেহেতু ইংরাজি ভাষায় ছবি তাই হয়ত গড, ছবি অন্য ভাষায় হলে সেটাও পরিবর্তন হয়ে যেত। কারন সেই ছোটবেলা থেকেই তো পাই এক ও অবিনশ্বর ঈশ্বরে বিশ্বাস করে এসেছে। পরিচালক তো এটাই আমাদের বলতে চেয়েছেন।
ছবি এগিয়ে চলে প্রথমে প্রাপ্তবয়স্ক পাই যে নিজে তার গল্প বলা শুরু করে এখন সে ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়। আর এই ছোটবেলাই কিছুক্ষন আগে তার সাথে পরিচয় হয় রিচার্ড পার্কারের। রিচার্ড পার্কার কে সে? কেমন তিনি? আর কিভাবেই বা পাই এর সাথে তার বন্ধুত্ব হল? ছবির সমস্ত মজাটা এখানেই। না হলে এটাও সেই আর পাঁচটা হলিউডের ঝিঞ্চ্যাক রঙচঙে অ্যাকশনে মাতোয়ারা বেঁচে থাকার গল্প হয়ে যেত। ইয়ান মরটালের কাল্পনিক উপন্যাসের সার্থকতা এখানেই। যে উপন্যাস পড়ে রিচার্ড পার্কারকে কল্পনা করা একটু মুশকিল হয়ে পড়েছিল, অ্যাং লি সেই কল্পনাকেই দৃঢ় করতে এই উপন্যাসকে পর্দার উপস্থিত করেছেন। বলা বাহুল্য পাতার রিচার্ড পার্কারকে পর্দায় নিয়ে এসেছেন।
ছোটবেলায় রিচার্ড পার্কারের সাথে প্রথমবার দেখাও এক মজার, আসলে সাধারন মানুষ যা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না সেটাই যদি কেউ বাস্তবে করতে যায় তাহলেই সাধারনের চোখে সেটা যেমন মজার হয়ে ওঠে তেমনি বড় বিস্ময়েরও হয়ে ওঠে, যেমন আমার হয়েছিল। আসলে এই রিচার্ড পার্কার একজন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। মানুষ ও প্রাণীর মধ্যেও যে অন্তরাত্মা ঘটিত একটা সম্পর্ক আছে সেটাই ধীরে ধীরে ছবি যত এগিয়েছে তত পরিস্ফুত হয়েছে।


দেশান্তরের সময় যখন প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে তাদের জাহাজ প্রচণ্ড ঝড়ের সম্মুখীন, প্রবল বাতাস আর জলরাশির ঝাপটা যখন জাহাজ কে তোলপাড় করে চলেছে সেই সময়ই এই প্রাকৃতিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে জাহাজ যখন নিম্নমুখী পতনের দিকে এগিয়ে চলেছে, ছোট একটি লাইফ বোটে তখন নিজের জীবনের প্রদীপখানি জ্বালিয়ে পাই অজানার উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে আর তার চোখের সামনে তার পরিবারের তার বাবার সাধের পশুপাখির সলিল সমাধি ঘটছে। রাতের প্রলয়ের তাণ্ডব, স্বজন হারানোর জ্বালা, আর কোন এক অজানার উদ্দেশ্যে রওনা, সেখানে আদও কি জীবনের আলো অপেক্ষা করেছে কিনা কেউ জানে না। তাই পাই এর এই সমস্যাসংকুল সময়ে সে যেন যে পথের উদ্দেশ্যে জীবন মৃত্যুকে উপেক্ষা করে রওনা দিচ্ছে এ যেন তার নিজের অস্তিত্ব প্রমানের নতুন লক্ষ্য। যে নিজে হাতে বাঘকে মাংস খাওয়াতে যায় এই ভেবে যে পশুদেরও মানসিক আত্মবুদ্ধি থাকে যা দিয়ে তারাও মানুষের মত ভাবতে পারে চিন্তাশক্তি দ্বারা নিজেকে চালনা করতে পারে, তার তো বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই উপলব্ধি আরও গভীর হবেই। তাই তো সে সমুদ্র বক্ষে যখন একা একা নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লাঠি হাতে রিচার্ড পার্কারকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
একটা জেব্রা, একটা শিম্পাঞ্জি একটা শিয়াল আর একটা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। সাথে বছর কুড়ির এক বালক পাই। যে সবেমাত্র তার সদ্য প্রস্ফুটিত হওয়া ভালোবাসার কমলকে বিদায় জানিয়েও পুনরায় ফিরে আসার অঙ্গীকার নিয়ে বিদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কিন্তু অতল সাগরে সব কিছুর সমাধি হওয়ার পর সে এই চার প্রাণীকে কে নিয়ে জীবনের আশা যখন দিগ্বিদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই সময় ক্ষুদার তাড়নাও সকলকে তারিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই তো তাকে একে একে সবাইকে হারাতে হয় সাধের অরেঞ্জ কিংকেও। কিন্তু প্রশ্নটা অন্য যায়গায়। আমরা জানি যে পশু মাত্রই তাদের চিন্তাশক্তি শূন্য। ক্ষুদার জ্বালায় যখন একে একে সবাই নিজের প্রান দিল একমাত্র বোটে সঙ্গী দুজন পাই আর রিচার্ড পার্কার, সেই সময় বাধ্য হয়েই পাইকে কাচা মাংস খেতে হয়, কিন্তু রিচার্ড পার্কার যার দিনে কমপক্ষে ৫ কেজি মাংস লাগে সে সামান্য গুটি কয় উড়ুক্কু মাছ খেয়েই শান্ত থাকল, একবারের জন্যও পাইকে আক্রমণ করলো না? কেন? এর উত্তর বোধহয় আমাদের কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। যারা এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সক্ষম হয় তারাই শ্রেষ্ট হয়ে থাকে যুগে যুগে আমরা এদের উদাহরন দিয়েই মানুষ হওয়ার কথা বলি মানুষের মতন ভাববার কথা বলি, আর যারা পারে না তারা সংখ্যায় অনেক হলেও প্রকৃত মানুষ হিসাবে বিবেচিত হয় না। আসলে সবটাই আমাদের মনের ব্যাপার, মন যা মানতে বলে আমরা তাই মানি, তাই করি, মনও যে আসলে মগজের অংশ, হৃদয় তো মগজেই থাকে। তাই সবকিছু একটু বিচার বিবেচনা করে করলে হয়ত পৃথিবীটা আজকের দিনে এসে এত অশান্ত হত না। আজকে যখন মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কই তিক্ততার গভীরে প্রবেশ করেছে, তখন একটা প্রাণীর সাথেও যে হৃদয় ঘটিত সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে, এটাই ছিল ছবির মূল মন্ত্র, যা আসলে ছিল অতি সূক্ষ ভাবে তথাকথিত সামাজিক প্রাণীদের ব্যঙ্গ করা। এই সামাজিক প্রাণীরা কারা সেটা আর বলার মুল্য রাখে না। কারন আমি যখন দুটো মাতৃহারা বিড়াল শাবককে প্রয়োজনীয় সেবা না করার ফলে তাদের মৃত্যুতে নিজেকে দণ্ড দেওয়ার কথা বলেছিলাম তখন আমার চারপাশের সামাজিক প্রাণীরা দাঁত কেলিয়েছিল।
সারা ছবি জুড়ে কিছু অসাধরন মুহূর্ত আছে যা সত্যিই ছেড়ে দেওয়া মানে এক অসম্ভব দৃশ্য সুন্দর মাধ্যম থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা। আমার আফসোস এখানেই পকেটে জুড়ে গড়ের মাঠের দরুন খুব সামান্য মুল্যের টিকিটের বিনিময়ে আমাকে এই ছবি ঘাড় উঁচু করে দ্বিমাত্রিক মাধ্যমেই দেখতে হয়। এবারও অন্ধকারে চোখে রঙিন চশমা পড়ার সুযোগ হল না। তাই বলাই বাহুল্য সে অভিজ্ঞতা কেমন হবে সে আমি বলতে পারব না। কিন্তু ছবির প্রথম ১০ মিনিট দেখে যখন বারবার মনে হচ্ছিল আমি এক অসম্ভব সুন্দর অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত হোলাম এবং বাড়ি ফিরে এসে যখন জানলাম এই ছবির প্রথম ১০ মিনিটের অংশ নাকি ত্রিমাত্রিক ছবির অন্যতম সেরা অংশ, আর হবে নাই বা কেন জেমস ক্যামারুন নিজে ছিলেন এ দায়িত্বে, প্রতিটা ফ্রেমকে আলাদা আলাদা করে ত্রিমাত্রিক আকার দেওয়া হয়েছে, তখন আর আফসোস করারও ইচ্ছে রইল না। আপনাদের সেই অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করার জন্যই এত গুলো কথা লিখলাম এই যাত্রায়।
ভারত এই ছবির পটভূমিকা হওয়ায় ছবির কিছু অংশের চিত্রগ্রহন যেমন ভারতে হয়েছে, তেমনি ছবিতে মূল চরিত্রে বেশ কিছু ভারতীয় অভিনেতা অভিনেত্রীই    অভিনয় করেছেন। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ছবির সঙ্গীত। মূলত দক্ষিন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ব্যাবহার ছবিকে দু ঘণ্টা আট মিনিটের জন্য স্বল্প পরিসরে আমাদের এগিয়ে নিয়ে গেল এক অজ্ঞাত স্বর, শব্দ আর সঙ্গীত দিয়ে এক গোপন আস্তানায় যেখানে মন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। আর সে বিদ্যুতে বারবার ফিরে এসেও শক লাগে। তাই চলে যাওয়া আসলে যে ভেঙে যাওয়া নয়, মনের কাছাকাছি আজীবন থেকে যাওয়া, সমস্ত আঘাত দিয়ে, নক্ষত্রের দোষ দিয়েও যে ভালোবাসাকে বাঁধা দেওয়া যায় না, যে ভালোবাসা মানুষের সহিত মানুষের বিবাহের মতন জটিল বন্ধনেও আবদ্ধ হয়েও সরু পাঁচিলের ওপর দাড়িয়ে থরথর করে কাঁপে, আর নীচের অতল খাদের দিকে চেয়ে মাথা ঘোরার ভান করে, সে ভালোবাসা কখনও চিরস্থায়ী হতে পারে না। ভালোবাসা একটা অনুভূতি, সেটা চিরকাল থেকে যায়। তাই তো লেখক কে গল্প বলার শেষে বড় হয়ে যাওয়া পাইয়ের চোখেও অশ্রু এসে ভিড় করে। এটা চিরন্তন, চিরকালের, তাই পাইকে তার ২২৭ দিনের ভেসে থাকার ঘটনা বলতে বলা হলে সে যখন সত্যি কথা বলে তখন তা ছাপার অযোগ্য বলে বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর যখন গল্পের গরুকে গাছে ওঠাবার মতন সে একটা কাল্পনিক গল্প বলে সেই গল্পের ভিতরেও তার ভালোবাসার চিরন্তন সত্য লুকিয়ে থাকে।
পরিশেষে এটাই বলার বাকি থেকে যায় যে জীবন চলবে জীবনের মতনই কিন্তু তাকে পরিবর্তন করার দায়িত্ব নেওয়া মানেই নিজের অস্তিত্বকে প্রমানের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। আমাদের সবার জীবনেই অকস্মাৎ এমন ঘটনা ঘটে যায় যা আমাদের দিকে বাড়তি দায়িত্ব এগিয়ে দেয়। কিন্তু সেই ঘটনার অপেক্ষায় না থেকে নিজ বুদ্ধিতে নিজের চিন্তাশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে আগে থেকেই যদি আমরা সেই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি তাহলে শস্য শ্যামলা সুন্দর পৃথিবীর বুকে আবারও মানুষের বিজয় পতাকা পতপত করে উড়বে। তখন আর রিচার্ড পার্কারকে দিয়ে আমাদের নীতিশিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।
ধন্যবাদ রিচার্ড পার্কার আজকের এই মোমবাতির মিছিলেও অতি অল্প আলোয় আরও একবার আমাদের সঠিক পথের হদিস দেওয়ায়, ধন্যবাদ অ্যাং লি, ধন্যবাদ ইয়ান মর্টাল।। 

ছবিঃ লাইফ অফ পাই
অভিনয়ঃ সুরজ শর্মা, ইরফান খান, তাব্বু, আদিল হোসেন প্রমুখ।
 চিত্রনাত্যঃ ডেভিড ম্যাগি
সঙ্গিতঃ মাইকেল 
পরিচালনাঃ অ্যাং লি। 


শুক্রবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১২

জব তক হ্যায় জান-- এক উঠতি প্রেমিকের চোখে।।



               

    আমরা যারা সকাল বিকাল এমনকি রাতেও ভাত খাই তারা আসলে খুব ছাপোষা মধ্যবৃত্ত বাঙালি। বাবা সরকারি অফিসে কেরানির কাজ করে, মা সকালে উঠে আগে ক্যালেন্ডারে চোখ দেন তারপর অন্য কিছু পাছে দিন টা অন্য কিছু দেখার পরে খারাপ যাক তাই, তারপর দরজা খোলে, আর ছেলে বা মেয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমায় আগে উঠলে তো আর ফ্রিজ থেকে কমলা লেবুর রস সরি জুস টা পাওয়া যাবে না তাই একটু দেরিই হোক সেই তো ভাত ডাল আর বেগুন ভাজা খেয়েই কলেজ যেতে হবে তাই হাঁ করে ঘুমায়। এহেন বাঙালি সরি শুধু বাঙালি কেন ভারতীয়রা সকলেই এই একরকম আগাপাঁচতলা প্রায় একরকম ভাবেই জীবন কাটায় তা এরা নিজেদের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে মিলেমিশে একটু ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাবে ১০০ টা টাকা টিকিট কাটবে আর সারা ছবি জুড়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে হাত ধরে ছবির সাথে ঘুরতেও যেতে পারবে না প্রেমিকার কানে কানে বলতেও পারবে না “জানো তো আমার ইচ্ছে আছে আমাদের বিয়ের পর তোমায় নিয়ে কাশ্মীর যাব আর ওই যে বরফ পড়া ভ্যালিটা দেখছো ওখানে গিয়ে তুমি আর আমি বরফ ছোড়াছুড়ি করে খেলব।” তাহলে কি আর ১০০ টা টাকা উঠবে অনেক কষ্ট করে টিউসুনির টাকা থেকে নিয়ে যে টিকিট টা কাটলাম আর ৩ ঘণ্টা একটু একলা নিরিবিলিতে অন্ধকারে প্রেম টা করতে পারব না? ছবির ওরকম হিমশীতল পরিবেশে নায়ক যখন নায়িকাকে জড়িয়ে ধরেছে আমরা অন্তত হাত তাও দুজনে ধরতে পারব না? ধুস এসব কিছু না হলে ছবি হল নাকি। প্যান্টুল হলুদ করে “বাংলার সবচেয়ে বড় সিনেমাহল” এ হেবি হেবি ঢিসুম ঢিসুম ছবি দেখতে পাচ্ছেন আর এদিকে ভাল না লাগলেও সকালের গোটা কাগজ জুড়ে ভাললাগার সমলোচনার ন্যাকামো তে ভরিয়ে তুলছেন সেবেলা কিছু নেই আর শাহরুখ খান দুজন নায়িকার সাথে কমর দুলিয়েছে কি সারা কাশ্মীর জুড়ে খালি বোম ডিসমিস করেছে সেখানে নাক গলিয়ে একদম ঝেড়েমুছে সাফ করে দিচ্ছেন। ও দাদা অনেক আঁতলামো করেছেন কেন শুধু শুধু আবার করছেন, জানেনই তো আপনি যতই ভ্রু কুঁচকে সিনেমার জটিল জটিল তত্ত্ব বোঝান আমি সেগুলি নিয়ে অ্যানালাইসিস করি নিজেকে সবচেয়ে বড় আঁতেল করার চেষ্টা করি কিন্তু এসব ওই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাম্পাসেই ঠিক আছে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরলেই তো সেই আবার বড় বড় পোস্টারে সত্যজিৎ রায়ের সাথে এখনকার তুলনীয় সত্যজিৎ রায়ের ছবির অসাধরন কিছু  কোলাজ দেখতে পাব। তাই শুনুন ওই সব আঁতলামো করার বিন্দুমাত্র কোন মানে হয় না। মোদ্দা কথা সুন্দর মিষ্টি রোমান্টিক ঢেউ খেলানো আচল টপকানো হাল্কা চুম্বন মাখান ছবি দেখব হলে বসে আলুভাজা খাব, প্রেমিকার হাত ধরে বলব “চলো ডার্লিং আজ এই অন্ধকারে ওই পর্দার ক্যাটরিনা আর শাহরুখের মত হয়ে যাই প্লিজ” তবে না ছবি দেখার মজা আসবে অনুভব আসবে। কল্লোল বাবুর মত তো চোখে ম্যাজিক চশমা পড়ে ছবি দেখার কোন মানে হয় না, ওসব ওই কি যেন “পাই” না কি ওসব ছবিই ভাল লাগে।
এ ছবি দেখতে এসে শরীর জুড়ে প্রেম আনব না, দুচোখ ভরে ভালোবাসার অশ্রু আনব না টা কখন হয় নাকি। সেই কবে থেকে শুরু করেছি বাবাকাকারা আমার আগেও শুরু করেছেন কল্লোল বাবু ও মনে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে ওই “সিলসিলা”, “কাভি কাভি” দেখেছেন আমি তো এই “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে” থেকে শুরু করলাম। আর শুরু করেই পুরো ফ্ল্যাট হয়ে গেছি মাইরি। এ রেশ তো এখন চলছে, চলবে, নতুন নতুন জীবনে প্রেমের আবির্ভাব আর প্রেমিকাকে নিয়ে পাশে বসে প্রথমবার হাতে হাত রেখে ওরকম সাদা বরফ পড়া লন্ডনে চার্চের সামনে দিয়ে লাল গ্রাউন পরে ক্যাটরিনা ছুতে আসছে আর আমিও ভাবছি একটা সিটি দেব কি না আর তা না করে বোদ্ধাদের হাঁ করে চেয়ে চেয়ে ভাবছি এই যে লং সটে এটা কি ল্যান্ডস্কেপ বলা যায় নাকি সেটিং...। না এটা সেটিং কারন এই ফ্রেমে তো কিছু একটা হচ্ছে সুতরাং ড্যাম সিওর এটা সেটিং। ওসব থিওরি নিয়ে ভাবতে গেলে লাভ নেই থিওরি তিওরি ওই তারকভস্কি গদারের ছবি দেখে ই গুনো এ হল ফুল্টু ঝিনচাক শাহরুখ খান আর শ্রদ্ধেয় যশজির শেষ ছবি সুতরাং মন খুলে দেখ হাওয়ায় উড়ে বেরাও কলার তুলে সানগ্লাস পড়ে বাইক চালাও তবে না মনে হবে তুমি “ যব তক হ্যায় জান” দেখে বেরিয়েছো। ঘরে যাও রাতে প্রেমিকাকে ম্যাসেজ করো কিংবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দাও গুলজারের এখনো সেই মন কেমন করা ঢুলু ঢুলু চোখ লাল করা “   তেরি আঁখো কি নমকিন মস্তিয়াঁ/তেরি হাসি কি বপরওয়া গুস্তাখিয়াঁ/তেরি জুলফোঁ কি লহরাতি অঙ্গরাইয়াঁ/নেহি ভুলুঙ্গা ম্যায়/জব তক হ্যায় জান/জব তক হ্যায় জান তবে কিনা মনে হবে ছবি দেখে বেরিয়েছি একটা। সব ছবিই দেখেই যদি সমলোচনা করি তাহলে রাতে কোন ছবির গান লিখে প্রেমিকার রাগ ভাঙাবো।





যদিও সেই একরকম গল্প দেখি সেই একজন পরিবারের কথা না শুনে বিদেশে এসে ভাগ্য পরীক্ষা করতে চায়, প্রেমে পড়ে কিন্তু প্রেমিকা কিসব ভগবানের কসম টসম দিয়ে চলে যায় আর এ বাপু বাপদাদার মত ইন্ডিয়ান আর্মি তে যোগদান করেন আর দ্যা ম্যান হু কান্ট ডাই এর খেতাব নিয়ে সারা কাশ্মীর জুড়ে খালি বোম ডিসমিস করে বেরায় জার সংখ্যা এখন ৯৮ আর দুটো বাকি সেঞ্চুরি করতে কিন্তু না গল্প এখানেই শেষ নয় আরও আছে দাঁড়ান অপেক্ষা করুন একটু সবুর করুন পাগলু মার্কা ডান্স যদি সহ্য করতে এখানে তাহলে একটু অপেক্ষা করতেই হবে ফিরে আসছি বিরতির পর।
হ্যা তো বিরতি শেষ আমার পুরো একটা চিপসের প্যাকেট খতম। এবার মনোযোগ দিয়ে দেখি। তো কোথায় ছিলাম বোম ডিসমিস না, হ্যাঁ মনে পরেছে তো এর আগে একটু আছে ওই কাশ্মীরি শীতে অনুস্কা শর্মারও হট বডি আছে ছেলেদের ইভটিজিঙ করার মত ডাইলগ আছে, পুরো প্যাকেজ, সিটি আপনাকে মারতেই হবে শেষে গিয়ে আবার ট্রাইঅ্যাঙ্গেল লাভ স্টোরি আছে, দু ফোটা ফাও চোখের জল আছে হিরো হিরোয়িন এর শেষ বাহুজুগলে আবদ্ধকরণ আছে একদম পুরো বলিউডি ছোঁয়ায় আঁকরে ধরে চুমু খাওয়া আছে। বুঝলেন তো এবার, ঠিক আছে আমি আর কিছু বলব না আমি চাই আপনিও ছবিটা দেখুন মজা করুন আরে বাবা বাংলা ছবির ফেস্টিভ্যাল শুরু হতে অনেক দেরি আছে তো তার আগে দেখে আসুন কিছু না মিস করলেও অন্তত অশোক মেহেতার ক্যামেরা আর প্রোডাকশন ডিজাইনার শর্মিষ্ঠা রায়ের অনবদ্য কাজের ফলে একটা পারফেক্ট ছবি মিস করবেন। এই দুজনের কাজের জন্য ছবিটা একবার তো হক বনতাই হ্যায় দেখার। রহমানের গানের সুর হয়ত আপনার আর তার আগের কাজের সাথে ভাল লাগবে না তবুও “জিয়া রে” গানটা বা গুলজারের অনবদ্য কথার জন্য “শাস” গানটাও আপনার ভাল লেগে যেতে পারে। ক্যাটরিনার অভিনয়ের থেকে নন-অভিনয়, শাহরুখের সেই রোম্যান্টিক হিরোর চেয়ে একটু বুড়াপা, অনুস্কা শর্মার চুলবুলি আন্দাজ এসবের থেকে আদিত্য চোপরার ডাইলগ এর জন্য ছবিটা একবার দেখা যেতেই পারে। না হলে আমার মত আপনিও প্রেমে ভাঙনের সময় বলবেন কি করে “এ সায়েদ মেরা প্যার কা ভকত্ নেহি থা”
আসলে শুনুন নিজের কথা ভাবুন একবার আমার মত আপনি ও যদি প্রথমবার প্রেমিক হাত ধরে একটা ছবি দেখেন আর মাঝে মাঝেই কাশ্মীরের ভ্যালিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে আপনি কি করে বলবেন যে আপনার ছবিটা ভাল লাগে নি। সত্যি করে বলুন তো। অনেক তো আদ্যপান্ত থিওরি দিয়ে সমলোচনা হল এবার একটু আবেগ দিয়ে একটু অনুভূতি দিয়ে একটু ভালোবাসার স্পর্শ দিয়েই না হয় একটা ছবির কথা বললাম। যার পরতে পরতে সবসময় ভালোবাসার ছোঁয়া লেগে থাকে। অনেক গুরুগম্ভীর লোকেরা যতই বলুক ওইসব লৌকিক প্রেমের থেকে নিজের সাথে নিজের অলৌকিক প্রেম অনেক বেশি ভাল তারাও রাতের স্বপ্নে নাম না জানা সেই প্রেমিকার হাত ধরে শেষ ডানকুনি লোকালটা ধরে। তাই বলছি সারা দুনিয়ায় এখন ভালোবাসার খুব দরকার এইসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের থেকে একত্রিত হবার জন্য। তাই ভালোবাসার অনুভবের জন্য একবার তো বলতেই হয় “জব তক হ্যায় জান...।।জব তক হ্যায় জান...।।জব তক হ্যায় জান।। 



বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ-ছবির রিভিউ বলে ভুল করবেন না

মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১২

কাঞ্চনজঙ্ঘাঃ এক মানবিক ইচ্ছেপুরনের গল্প।।

 প্রতি বছরই অন্তত বাবা একবার করে হলেও ঘুরতে নিয়ে যায়। আমিও আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঘুরতে যাই। কখন উত্তর, কখন দক্ষিন, কখনও বা উত্তর পূর্ব। বেরাতে গিয়ে খুব শুনি বাঙালিরা নাকি খুব ঘুরতে ভালবাসে। কিন্তু কখনও কারনটা অনুসন্ধান করিনি। এটাই ভাবতাম ভাল লাগে তাই ঘুরি। অনেকে বলে হাওয়া বদল করতে যায়। আসলে হাওয়াবদলের কারনটা কি সেটা নিয়ে হয়ত কেউ কোনদিনও ভাবেনি। সবাই বলে শহরজোড়া একরাশ ক্লান্তিকর আবহাওয়া থেকে রোজনামচার পাঠ চুকিয়ে কিছুটা উন্মুক্ত বাতাসের আশায় মনকে শীতল হিমেল পরশের লক্ষ্যেই ঘুরতে যাওয়া। এতো গেল বাহ্যিক কারন তাহলে অন্তরের কারনটা কি? সবাই এটা মেনেই নিলাম যে ঘুরতে যাওয়ার প্রধান কারন হল মনকে ভাল রাখা। তাহলে কি মন আমাদের এই রোজকার জীবনের পরিবেশে ভাল নেই, সে কি খুব অতিস্ট হয়ে পড়েছে? খানিকটা হয়ত কেই সত্য বলে মেনে নেবে কেউ বা তর্ক করবে। কিন্তু আমার কি মনে হয় জানেন আসলে আমরা ঘুরতে যাই তার একটাই কারন নতুন পরিবেশে আমরা নিজেরা সব কিছু নতুন ভাবে ভাবতে পারি, কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। যে ব্যাপারটা আমাদের কাছে ফ্ল্যাটের ঘরে বসে সঠিক মনে হয় ঠিক সেটাই আবার হোটেলের বাঁদিকের খোলা জানালা দিয়ে যখন দূরের ছোট গ্রামটাকে দেখতে পাই আর নতুন মোবাইলটার উপর সূর্যের আলোর রেশ এসে পড়ে তখন মনে হয় না ওটা ভুলই ছিল, নিরাপত্তার থেকে ভালোবাসা অনেক বেশি আবেগের অনেক বেশি অনুভূতির। বাহ্যিক নিরাপত্তার থেকে অন্তরের নিরপত্তা অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। আর কারোর আন্তরিক ভালোবাসাই পারে আমার আপনার অন্তরের আত্মাকে নিরপত্তা দিতে। আর তাই এই রোজকার বাহ্যিক নিরাপত্তা বলয়ের বাইরে বেরিয়েই তো আমরা ঘুরতে যাই আসলে সব কিছুকে নতুন ভাবে ভাবতে যাই।

এই ভাবনাই কোথাও যেন বড় চোখে আঙ্গুল দিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন পরিচালক সত্যজিৎ রায় তার “কাঞ্চনজঙ্ঘা” ছবিতে। আসলে “কাঞ্চনজঙ্ঘা” শহরের কিছু বিলাসবহুল মানুষের শহরকেন্দ্রিক আবহাওয়াকে সাময়িক ভাবে পরিত্যাগ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা। এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসে তারা নিজেদের একে অপরকে আর তাদের চারিপাশের পরিজনকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে। বহুদিন বাদে কেউ আবার গান গেয়ে ওঠে, তার গানের সুরে সে যেন এতদিন লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা তার ভয়কে দূরে সরিয়ে বলে উঠতে পারে “ওকে বোলো ও যা চায় তাই যেন করে”
আবার কেউ বলে ওঠে হয়ত শহরে থাকলে চাকরিটা নিয়ে নিতাম কিন্তু এখানে আছি বলেই হয়ত ছেড়ে দিলাম। আসলে আমাদের চারপাশের পরিবেশ বেশিরভাগ সময়ই আমাদের ওপর সবকিছু চাপিয়ে দিতে চায় আর আমরা সেই দায়ভার কাঁধে নিয়ে বয়ে বেরাই। তাই সেই পরিবেশ থেকে বেরিয়ে এসে নতুন পরিবেশ তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায় কিছু চাপাতে পারে না আর তাই আমরা আমাদের মনের সেই কথা যা  শহরের ক্যাকফনির  মধ্যে হারিয়ে যায় তাকে এই নিরব নিস্তব্ধ পরিবেশে এসে বড় জোরে শুনতে পাই আর তাই মন যা চায় তাই করতে বা ভাবতে সক্ষম হই। আসলে এই চাপিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমার আবার সেই ষাটের দশকের “সিনেমা ভেরিতে” আন্দলনের কথা মনে পড়ে, যারা সত্য উন্মোচনের মাধ্যম হিসাবে সিনেমাকে বেছে নেয় এবং যে সত্য উন্মচিত হয় তা আসলে বাধ্য করা হয় কাউকে সত্যটা বলার জন্য তাই আসলে তা “absolute truth”  না হয়ে “provoked truth” হয়ে যায়।
“কাঞ্চনজঙ্ঘা” আসলে শহরের কিছু বুর্জোয়া শ্রেণীর মানুষের গল্প যারা তাদের ছুটি কাটাতে এসেছে আর “কাঞ্চনজঙ্ঘা” দেখার লিপ্সা নিয়ে কোন এক পড়ন্ত বিকেলে ম্যালের চারিপাশে ঘুরতে বেরিয়ে আকস্মিক ভাবে আবিষ্কার করে নিজেকে একে অপরকে। প্রথম ছবি পথের পাঁচালিতে তিনি যেমন বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন, ধর্মকর্ম রাজারানি এসবের বাইরে বেরিয়ে ভারতীয় ছবি প্রথম বারের জন্য সাধারন মানুষের কথা বলে সাধারন মানুষের ইচ্ছের কথা বলে তাদের দৈনন্দিন জীবনের ছবি আঁকে। আর “কাঞ্চনজঙ্ঘা” তে এসে পরিচালক প্রথমবার ভারতীয় ছবিতে রিলের সময় আর রিয়েল সময়কে এক ভাবে পরিবেশন করেন। যেখানে “কাঞ্চনজঙ্ঘা” একটা বিকেলের গল্প। সময়টা এখানে বড় সীমিত তাই সীমিত সময়ও কোথাও আমাদের মানবিক ইচ্ছে আর গৃহীত ইচ্ছের মধ্যে একটা লক্ষণ রেখা এঁকে দিয়ে একে অপরকে আলাদা করে দেয়।
তাই বহু বছর আগে বিবাহ বন্ধনে লিপ্ত হওয়ার পর ও তাদের ভাবতে হয় “elligable” আর   “acceptable” এর মধ্যের বিস্তর ফারাকটাকে। আর তাই কেউ সাহসী হয়ে সদ্য প্রাপ্ত চাকরিটাকে ছেড়ে দেয় কেউ তার বিবাহ এর জন্য মনোনীত পাত্রকে না বলে দেয়। তাদের কাছে নিজের জন্য লড়াই করাটাই আদর্শ হয়ে যায়,  শহুরে কালো ধোয়া সেখানে তাদের মনের পবিত্রতাকে জড়িয়ে ধরে না। “কাঞ্চনজঙ্ঘা” তাই এক বুর্জোয়া শ্রেণীর গল্প বলতে এসে মানুষের মানবিক ইচ্ছের সাথে গৃহীত ইচ্ছের লড়াইয়ের ছবি আঁকে।
পুরাতন প্রেমিক এতদিন পরেও যখন চিঠি লেখে, তা পড়বার ইচ্ছে নিয়্‌ সকলকে আড়াল করে একাকি কোনে বসে পড়ে ফেলে কিন্তু স্বামী যখন জানতে পারে তখন তাঁকে সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য বলতেই হয় সে তাঁকে বলে দেবে আর যেন চিঠি না লেখে। আমাদের কাছে জীবনের স্থিরতা, স্থিতিশীলতা, আস্থা, ভরসা, আশা, নিরাশা সর্বোপরি জীবনের আবেগ অনুভূতি আর বেঁচে থাকা মুহূর্তের স্মৃতি সবকিছুই নির্ভর করে ওই নিরাপত্তা বলয়ের ওপর  আর যারা ওই নিরাপত্তা বলয় ভেঙে এসে নিজের মত করে বাচতে চায় তাদের কপালে ভবঘুরে তকমাটাই জুটে যায়। আমরা নিজেদের বদলে জীবনের ওপর এতো বেশি করে নির্ভরশীল যে জীবনের নিরাপত্তাটা কোথাও প্রশ্নের সম্মুখিন হলে আমরা নিজেদের মনের ইচ্ছেটাকে চেপে রেখে আবার সেই নিরাপত্তা বলয়ে ঢুকে পরি। এক্ষেত্রেও তাকে সেই একই কাজ করতে হয় কারন দলছুট হলে তার জন্য এখন আর লড়াই করার কেউ নেই কারন সামাজিক রীতিনিয়ম সব কিছুর উর্দ্ধে যাওয়ার সামর্থ্য অনেকেরই থাকে না। তাই তো মনির হয়ে লড়াই করার জন্য তার মা থাকলেও তার দিদির হয়ে কেউ নেই। কারন এক্ষেত্রে সেই বলয়টা যে এক নয়।
আর সেই ছেলেটা যে ৫০ টাকার টিউসুনি পড়ায় কিন্তু ৩০০ টাকার চাকরির সুযোগ ছেড়ে দেয়, যার পরনের প্যান্টটাও নিজের নয়। তার কাছে এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করার কোন আক্ষেপ নেই কিন্তু সে বলে যদি সে শহরে থাকত তাহলে হয়ত সে চাকরি তা নিয়ে নিত কিন্তু এই পরিবেশ তাকে, যে নিজেকে নিজের মত করে বাঁচতে সেখায় নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে সেখায়। তাই সে চাকরিটা নিজের যোগ্যতাতেই পেতে চায়  অন্য কারোর সুপারিশে নয়। এই অসীম সাহস এর উদাহরন আমাকেও বারবার আমার চিন্তাশক্তির ক্ষমতার ওপর গর্ব করতে বাধ্য করে। তাই তো মনি তাকে বলে যায় তার নাম মনীষা না মনিকা। আর আবার মনে করিয়ে দেয় তার বাবার কাছে বিনা অনুমুতিতে যাওয়া মানা থাকলেও তার বন্ধুদের অগাধ বিচরন সম্ভব তার বাড়িতে।
কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে এসে কেউ বিভিন্ন পাখির সন্ধান করে বেরান কেউ বা পাখির রোস্ট খাওয়ার কথা ভাবেন কেউ বা তার প্রেমিকাকে একটু আলিঙ্গন করার চেষ্টা করেন কেউ তার মনের দ্বিধাকে দ্বিধাহীন করার চেষ্টা করেন আবার কেউ সুন্দরী মহিলাদের ছবিও তুলে বেরান। আসলে ঘুরতে এসে মনকে নতুন ভাবে প্রস্তুত করার সবাই একটা নতুন রাস্তা খোঁজে। তাই তো মনি বলে বাকি পথটা আমরা চুপ করে হাঁটি। হয়ত এই চুপ করার মধ্যেই সে তার শব্দগুলো কে সাজাচ্ছিল যাতে মনের কথাটা সরাসরি বলতে পারে। আর কেউ গান গাওয়ার আছিলায় নিজের চিন্তাশক্তিকে লড়াইয়ে পরিণত করার বাহ্যিক আবরণ খুঁজে বেরাচ্ছিল আর শেষ করে বলে ওঠে ওকে বোলো ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই।
ছবি আসলে কি রঙচঙে আদিখ্যেতা না স্থান কাল পাত্রের চরিত্রের মনের একাত্রতা? তাই এদের গল্প দেখতে দেখতে আমি দার্জিলিঙের ম্যালের পরিবেশ টাকেও খুঁজে পাই। সেখানে ভিখারিরা ইংরাজিতে ভিক্ষা চায়, কোন এক বাচ্চা ছেলে ওদের পিছু নেয় কোন কিছু পাওয়ার আশায়। আর কোন এক রায়বাহাদুর দার্জিলিঙের ইতিহাস বলে আর নিজেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ না দেওয়াকে নিয়ে গর্ব করে। আর মনে করে ব্রিটিশরা ছিল বলেই আজ আমরা এত উন্নত হতে পেরেছি। আমি তাই এখনকার স্বনামধন্য পরিচালকের ছোটবেলায় কোথায় গিয়ে সে মদ খেত আর তার স্মৃতিতে দার্জিলিঙের উপলব্ধির বাইরে গিয়েও অনেক বেশি ভাবে মানবিক উপলব্ধি করি এটাই ছবি আসলে নিজের আদিখ্যেতামো ন্যাকামো দেখাবার স্থান নয় ছবি আসলে সকল কিছুর সমন্বয়ে বাস্তবতাকে তুলে ধরারই প্রধান অস্ত্র।
যেখানে ছবি তার নিজস্বতা খুঁজে পায়, অন্য কোন কলার সাথে তাঁকে মিশিয়ে দেওয়া হয় না। তাই ছবির শেষ দৃশ্যে ঝলমলে রোদে কাঞ্চনজঙ্ঘার ঝলমলিয়ে ওঠার দৃশ্য ল্যান্ডস্কেপ হিসাবেই বর্ণিত হয় ব্যবস্থাপনা বা সেটিং হিসাবে নয়। আর এখানেই আমরা চিত্রকলার সাথে ছবির পার্থক্য খুঁজে পাই। এই দৃশ্য এখানে নিজস্বতা বজায় রাখে গল্পের আড়ালে ঢেকে থাকে না।
পরিচালক তার নিজের চোখ দিয়ে গল্পটা আমাদের দেখিয়ে যান কিন্তু আমার বারবার মনে হয় আমার সাথে সাথে যেন কাঞ্চনজঙ্গাও নিরব দর্শক হিসাবে পুরো গল্পটাই দেখে গেল।
আমিও ছবিটি দেখার সাথে সাথে বারবার বুঝতে লাগলাম কেন সে আমায় প্রতি মুহূর্তেই মনে করানোর চেষ্টা করে “ভাল কিছু করতে হবে তোমায়”। আসলে আমি যতই সেই বলয়ের থেকে বেরিয়ে যেতে চাই ভালোবাসা আমায় আবার সেই বলয়ে ফিরিয়ে আনে এখান থেকে আমি আর বেরোতে পারি না কারন আমি তো ভালবাসাকে ছেড়ে পালাতে পারি না। তাই সেই পাহাড়ে বেরাতে গিয়ে ওর অনুভূতি আর শহুরে অনুভূতির মধ্যে এক বিস্তর ফারাক বুঝতে পারি। এবার পুরোপুরি ঘুরতে যাওয়ার অর্থটা পরিস্কার হয়ে যায় তাই আর মন কেমনের কথা মাথায় আনি না কেননা কোনোদিন হয়ত আমিও কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে এসে সব কিছু মানবিক ইচ্ছের  মত হয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখব।।

ছবিঃ কাঞ্চনজঙ্ঘা
পরিচালকঃ সত্যজিৎ রায়
সম্পদনাঃ দুলাল দত্ত
চিত্রগ্রহনঃ সুব্রত মিত্র