অপুর দর্শন
অপারিজিত
১৯৫৭ তে সত্যজিৎ রায় এর ছবি। আমার অনুভুতিতে ভারতের চিরকালের আধুনিক ছবির শেষ কথা
।
বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর পথের পাঁচালি
থেকে পরিচালক কিছু অংশ নিয়ে নিজের মত করে ভারতীয় সমাজ কে তুলে ধরেন পৃথিবীর সামনে।
পথের পাঁচালি , অপারাজিত , অপুর সংসার । অপু
নামের এক জীবনের চলার কাহিনী ক্রমশ বদলে গেল জীবন দর্শনে।
ছবির পটভূমি অনুযায়ী বাংলা ১৩২৭ সন প্রায় ৯০
বছর আগের এক গ্রামীণ বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারের বালক এর আধুনিক জীবন খোঁজের সফর । এ
আধুনিকতা কেবল শরীর বা পারিপার্শ্বিকতার নয়, এতো অন্য চলা যেখানে সব কিছু ছাড়িয়ে
উঠে আসে মানুষ । তাই কাশী থেকে ফিরে আসতে
হয় পিতাহীন অপুকে অন্তত পূজা করে সংসার চালাতে পারবে এই আশায়। বাংলার মাটিতে সর্ব
প্রথম সে দেখতে পারে সেই রেলগাড়ি , আধুনিক পৃথিবীর গতিময় জীবনের নিদর্শন। সকালে
পূজা চলতে থাকে কিন্তু সে মাকে জানায় “ মা
আমি স্কুলে পড়ব ?” শুরু হয় বিজ্ঞান ভিত্তিক চলা, ক্রমশ পরিচিত হতে থাকি আমরা
বাইরের বিশ্বের সাথে ।
এই আধুনিকতা বাস্তবিক হয়ে ওঠে ছাত্র অপুর
মেধা আর জ্ঞান এ। এস্কিমো , থেকে আফ্রিকা , গ্যালিলিও থেকে পাস্কেল এ জানা তো
বস্তুত বিশ্বের খবর জানা । অজ পাড়াগাঁয়ের বালক অপু যখন হ্যারিকেনের আলোতে সূর্য
গ্রহণ কি? এর উত্তর পরীক্ষার মাধ্যমে
বর্ণনা করে তখন ভারতীয় সমাজের কুসংস্কারের শাপমুক্তি ঘটে এ ছবিতে। স্কুল ফাইনাল এর
পর কলকাতা যাওয়ার প্রস্তাব মুখমুখি দাড় করায় সম্পর্ক আর উন্নত জীবন কে।
গ্লোবে কলকাতা খোঁজা তো নাম এর বাইরে
ভূগোল কে খুজে দূরত্ব মেপে নেওয়া । মা কে
ছেড়ে সেই রেলগাড়ি তে কলকাতা তো আবেগ এর মধ্যে থেকেও বার বার বধ্য জীবনকে প্রশ্ন
করে আর কত রাস্তা গেলে মানুষ নিজের কাজ বুঝতে পারবে । প্রথম চিঠি তে তার ঘরে যে
বৈদ্যুতিক বাতি আছে মাকে জানায়।
এই আধুনিক চিন্তা, মনন , দৃষ্টি এর আগে আর
কোনও ভারতীয় ছবি তে দেখা জায়নি । জন রেনয়া বলে গেছিলেন “ তোমাদের ছবির নিজস্ব ভাষা
যদি খুজে না নিতে পার তবে সেই ছবি কোনদিন চিরকালীন হবে না ” এর আগে ছিন্নমূল বা
তারও আগে বিদ্যাপতী তে আভাস পাওয়া গেলেও পথের পাঁচালি থেকে অপারাজিত তে প্রতিষ্ঠা
পায়।
আধুনিকতা মানে নিজস্বতাকে বিসর্জন নয় ,
“কোন ভাষা মরমে পুষি আকূল কোরে তোলে প্রাণ,
কোথায় গেলে শুনতে পাবো বাঊল সুরে মধুর গান ”
ছাত্র অপুর পাঠে খুশি হেড স্যার, সেই কারনেই ছবিতে অপু শহর থেকে ফিরে পুকুরে স্নান
করে , সূর্য ঘড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়াতে পঞ্জিকা তে সূর্যউদয় এর সময় দেখে, ইচ্ছা করে ট্রেন ছেড়ে মা‘র কাছে
ফিরে আসে।
তবে কোনও কিছু কে অর্জন করতে গেলে নিজস্বতা
কে কিছুটা হলেও বিসর্জন দিতে হয় , ছবি তে অপুর সাথে ক্রমশ মা এর সম্পর্ক শীতল হয় ,
মানসিক দূরত্বের হিসাব “ ও কিছু টাকা মানিঅর্ডারে পাঠিয়ে দিয়েছি” মেলে না। পরিচালক
পারতেন খুব সহজ ভাবে মা ও ছেলের মিল করিয়ে দিতে কিন্তু সেখানে আর এই বাস্তব টা
থাকত না। এটাই শিক্ষা , দর্শন যা এ ছবি কে
চিরকালীন করেছে। শেষ দৃশ্যে ভারতীয় সংস্কৃতির বেতের পাত্র যা অপুর মা ব্যাবহার
করতেন এবং অপুর আধুনিক পৃথিবীর গ্লোব কে একই সাথে বেধে মা , বাবা হীন কিশোর এর
কলকাতা যাত্রা তো আধুনিকতা আর নিজস্ব সংস্কৃতিরএকসাথে পথ চলার শুরু। এবং এ সফরে
কোথাও বধ্যতা নেই , কূসংস্কর নেই ।
আবহ সঙ্গীত , ক্যামেরা , লাইট বা অভিনয় নিয়ে
বলার ধৃষ্টটা আমার নেই। এ যে জীবনদর্শন।
খুব ভালো লাগছে, University র বন্ধুদের ব্লগ-পাড়ায় নতুন করে খুজে পেয়ে! আমার খুব পছন্দের ছবি নিয়ে লেখা, পছন্দের মানুষজনের লেখা! আমার ব্লগেও একটা পোস্ট দিলাম এই নিয়ে, আসা করি ভালো লাগবে...
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি একটি ব্লগ প্রশাসক দ্বারা মুছে ফেলা হয়েছে।
উত্তরমুছুন