“প্রেম তো সঞ্চয়”
তবুও
কেন লুঠ হয়?
“প্রেম তো সঞ্চয়” যেদিন একটু
একটু করে জমানো সোহাগ চুরি হয়ে যায় মেনে নিতে কষ্ট হয় একাকীত্ব, তারপর ভালোবাসার
সমান্তরালে জমে ওঠে অভিমান , যে অভিমান বলে “ফিরে এলেও আর ফিরিয়ে নেবো না”। আসলে
কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায়না “প্রেম” নামক আমানত যে তালা বন্ধ হৃদ কোঠরে আছে সেই চাবি।
কেন লুঠ হয়? “কেন একবার অন্তত
‘মন’ রাখার জন্য বলতে পারনা যে আমি তোমাকে ভালবাসি” অনেকদিন পর হিন্দি ছবির পর্দা
জুড়ে প্রেম আলপনা তৈরি করে নিজের মত করে। “লুটেরা” সদ্য স্বাধীন একটা দেশে জমিদার
কন্যা আর এক ঠগ ছেলের রূপ কথার মত প্রেমের / না প্রেম নামক ফাঁদের কথা বলে? কিন্তু
এগল্প তো প্রথমবার বলা হচ্ছে এমন তো নয় তবে কিসের এতো আবেশ?
বাংলাদেশের মানিকপুরের
জমিদারের বিরাট রাজত্ব আর আদরের কন্যা ‘পাখি’ নিয়ে ভীষণ সুখের দিন এর মাঝে বরুন
শ্রীবাস্তব এর আগমন , পেশাগত ভাবে যে ‘প্রত্নতত্ববিদ’ । এক মিষ্টি গাড়ি দুর্ঘটনাটতে
প্রথমবার দু চোখের দৃষ্টি বিনিময় আর নিস্তব্দতার মাঝে হাল্কা সুরে বেজে চলা আবহসঙ্গীত
ফিস ফিস করে আমাদের কানে বলে প্রেম আসছে প্রস্তুত হও। ‘পাখি’ বড় হয়ে লিখতে চাই,
বরুন এর দ্বারা খনন কাজ ছাড়া আর কিছু হয় না। এমত অবস্থাতে তাদের আড্ডা বা প্রেম
জমানো একমাত্র পথ হয়ে ওঠে “ছবি আঁকার ক্লাস”। কিন্তু সে ক্লাস জুড়ে আমরা ছবির
পরিচালক আর চিত্রগ্রাহকের মুন্সিয়ানাতে দারুন সুন্দর বাংলার রূপ দেখি। ছবি যত
এগোতে থাকে জমিদারের ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক শক্তি কমতে থাকে। হঠাৎ ছন্দ পতন হয়, বরুন জমিদারের মন্দিরের দেবতার
সোনার মুর্তি ও “পাখির” মন চুরি করে পালিয়ে যায়। প্রেমের ছবিতে এতক্ষণ যে “ভালোবাসা”
একটু একটু করে জমা হয়েছিলো , যে ভালোবাসা আগের দিন রাতে পাখিকে সবথেকে বেশি সুখে
রাখতে চেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিল সেই ভালোবাসা চুরি হয়। বরুন শ্রীবাস্তব , পাখির
প্রেম আসলে সমান্তরাল পথ ঘুরে “লুটেরা”। সিনেমা সেকেন্ড স্পেস এ প্রবেশ করে। এখান
থেকে কেন যেন কিছুটা সময় ব্যক্তিগত ভাবে আমার আর ছবিটাকে ভালো লাগে না । মনে হয় “ফানাহ”র মত বড্ড চেনা ছকে চলছে ছবিটা। ধীরে ধীরে
সেরকম ঘোটতে থাকে । ডালহৌসি নামক কোনও এক পাহাড়ি শহরে সে এখন একা থাকে, তার বাবা
গত হয়েছেন, ‘পাখি’ এখন লেখে । এই রকম পটভূমি আবার সেই ভালোবাসা ফেরত আসে মুখমুখি দাড়ায় ঘেন্নার , অপছন্দের।
তবুও প্রেম সুগন্ধি হয়ে রয়ে যায় ছবির সঙ্গীতে ।
কোথাও গিয়ে পরিচালক কি
বানিজ্যের কথা ভেবে ছবির যে সেকেন্ড স্পেস তৈরি হয়েছিলো সেই পথকে অস্বীকার করে কেন
পাখিকে অসুস্থ করেন? কেন এতো দ্রুত বরুনকে এর দ্বিতীয়বার পাখির কাছে ফিরে আসতে হয়?
কেন বরফ শহর? কেন গুলিবিদ্ধ হয়ে বরুন আশ্রয় খোঁজে ? এই চেনা পথ তো অতিপরিচিত “ফানাহ” সিনেমার দ্বিতীয়ভাগের মত সব
মশলাদার রসদে থাসা। ও হেনরির “দ্যা লাস্ট লিফ” অবলম্বনে এ ছবি নির্মিত হয়েছে কিন্তু অন্য পথে হাটার সব
উপাদান তো পরিচালক নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন। যদি এমন হত যে বরুন অন্য কোথাও স্থির,
পাখির লেখা বই তার কাছে পৌঁছল কোনও একদিন। যদি দুটো সমান্তরাল গল্প একসাথে চলত একে
ওপরের অভিমুখে যেমন ভাবে পাখি তার অতীত ভালোবাসার স্মৃতিচারনা করে শেষের দিন
গুনছিল , সেই দিনগুলো কি হতে পারতোনা পাখির লেখা বইয়ের এক একটা পাতা। তারপর না হয়
আবার দৃষ্টি বিনিময় আবার অভিমান আবার প্রেমজ্বর। আবার রূপকধর্মীগাছটির এক একটা করে পাতা গুনে জীবনের অবশিষ্ট
দিন গোনা। এটুকু সাহস কিন্তু দেখানো যেতো। কারন ছবির সঙ্গীত ও আবহ সঙ্গীত তো ততক্ষণ দর্শককে প্রেমে ডুবিয়ে
রেখেছে।
সম্ভবনার বাইরে ছবিটি কিন্তু
একটু হলেও মনে করিয়ে দেয় আমাদের একান্ত ব্যাক্তিগত ভালো লাগার কথাগুলো এমন অনেক
লুটেরা আজও তো আছে যারা রূপকথা দিয়ে চিঠি লেখে, যে রূপ কথার একটা চরিত্র তুমি আর
একটা ............। তারপর একদিন শীতের ময়দান বা বৃষ্টির প্রিন্সেপ ঘাটে অন্য কারো হাত ধরে ভো কাট্টা
বা প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করা গালেটোল পড়া বা না পড়া মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে
দুটো যারা এপর্যন্ত একবারও লুটেরা হতে চেষ্টা করল না। বা সেই ‘২০১৩’ র পাখি যে ঘুম
জড়ানো ভোরে এসএমএস লিখতে থাকে “হ্যাঁ বলিস আর না বলিস এই বৃষ্টি ভেজা দিনে আমি তোর প্রেমে
পড়েই গেলাম , একটা কদম গাছ দেখে রাখ দুজনে ...............” । আমার খুব একটা ভালো
না লাগা ছবির দ্বিতীয় ভাগটা জুড়ে না হয় এ সব মানুষের ভালো লাগা থাক।
পরিচালকঃ বিক্রমাদিত্য
মাতয়েন।
দৃশ্যগ্রহণঃ মহেন্দ্র জে
সুর ও আবহসঙ্গিতঃ অমিত
ত্রিবেদী।
লেখাঃ মৌন।
কৃতজ্ঞতা ঃ সুরঙ্গমা
খুব সুন্দর লাগলো পড়ে। স্বপ্ন রূপকথা মানুষ ভালোবাসা সব মিলিয়ে দুটো জীবনের কথা, বেশ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন