গুড রোড (The Good Road): ভাল রাস্তা নাকি মার্গ অথবা একটা জার্নি
থাকব নাকো
বদ্ধ ঘরে/ দেখব এবার জগতটাকে- কার লেখা বলো ত? কার? কার? ধুর এ কবিতা সিলেবাসে
নেই; অনেক আগে থাকত। আর তা ছাড়া জগত ত এখন ঘরেই, পারসোনাল কম্পিউটারের ভিতর সারা
জগতকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে; যখন ইচ্ছে তাকে জাগিয়ে তোলো। তবু বাসে ট্রেনে উঠে
জানালার ধারে সিটটা পেলে একটা অদৃশ্য হাসি তোমার মুখে ঝিলিক দেয় কেন? কেন না আমরা
সবাই দৃশ্য ভালবাসি, চলমান রাস্তার দৃশ্য,জীবনের
দৃশ্য। রাস্তার দৃশ্য নিয়ে কম ছবি
হয়নি। তবু আবার ও একটা ছবি, রাস্তার ছবি।
দূর, দূরের রাস্তা
বললেই একটা ট্রাকের চিত্র অনায়াসে মনে ভাসে। ট্রাক ডাইভার পাপ্পু তার সঙ্গী সওকতের চোখে
মুখে, শরীরের
গড়নে দূর যাত্রার স্থায়ী ছাপ। মিতভাষী, জগত সম্বন্ধে
নিরুদ্বেগ তাদের যাপন। যাত্রার শুরুতেই দেখছি সওকত জ্বালিয়ে নিল ধূপ অন্যদিকে ড্রাইভার
পাপ্পু জ্বালাল বিড়ি। কঠিন মাটির
দেশ, গাছপালা হীন রুক্ষ ভূমি, গুজরাতের মানুষগুলোকেও
তেমন রেখেছে। বৃত্তের কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা মানুষগুলি কিন্তু এই রুক্ষতার হল্কা
বাতাস থেকে বেশ তফাতে। ছুটি কাটাতে আঠাঙ্গাসার পথে চলেছে ডেভিড, সঙ্গে বউ আর ছেলে।
নাগরিকতার সমস্ত উপাদানই ঠরে পড়ছে তাদের শরীরীভাষায়। রাস্তায় এই বিচিত্রতা বিভিন্নতা থাকবেই কারন
রাস্তা কারো একার নয়। হ্যাঁ এই রাস্তা কিন্তু নয়নাভিরাম নয় বরং অনেক বেশি শুখা
অনেক বেশি একঘেয়ে, লম্বা।
শিশুটি
বাবা মার খুচরো ঝগড়ায় নিজেকে সামিল করতে অরাজী, চাদর ঢেকে নেয় নিজেকে। বড় রাস্তায় ড্রাইভক্লান্ত ডেভিড একটু ব্রেক নিয়ে নিজেকে
তাজা করার জন্যে পথের ধারে গুমটির সামনে গাড়ি থামায়। ধূমপানের ইচ্ছেটা ব্যক্তিগত
রাখতে নাকি অন্য কারনে সে
চুপিচুপি নেমে যায়। এদিকে আদিত্য, শিশুটির ঘুম ভেঙে গ্যাছে, সে মা কে জল চায়। ঘুমন্ত কিরন
গুরুত্ব দিল
না, বাইরে তখন সে বাবা কে দেখে
চুপি চুপি নেমেও গেল গাড়ি থেকে। বাইরে
এসেই রাস্তা তাকে পেয়ে বসল, পেয়ে বসল একটা কুকুরছানা। ওদিকে কেয়ারলেস
ডেভিড নিশ্চিন্তে দেশীয় সিগারেট নিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে দিয়েছে। এখানেই শুরু হচ্ছে
রাস্তার গল্প। গাড়ি স্টার্টের শব্দে আদি সম্বিত ফিরে পায়, তখন তার চোখের সামনে বেরিয়ে
যাচ্ছে বাবা মা,তাদের লাল গাড়ি। আসলেই সে সাত
বছরের একটা স্মার্ট শহুরে ছেলে, সে আমাদের
রাহুল নাকি যে ম্যা বলে কান্না জুড়বে! সে দৌড় লাগাল যথাসম্ভব। কিন্তু রাস্তার গতি
কে সে ধরবে কীভাবে! অন্যদিকে সমান্তরাল একটি রাস্তার গল্প ছোট্টো পুনমের, সে
মুম্বাই ফেরত, চলেছে আঠাঙ্গার পথে তার ঠাম্মার কাছে। পথই তাকে নিয়ে আসে রংমহলায়, এক অন্য দুনিয়ায়, যেখানে
সে অনেকটাই অনভিজ্ঞ। দূরের রাস্তায় ভেসে যায় শুখা সুর।
দৃশ্যে ফিরে আসে রাস্তার ট্রাক। ট্রাকের গন্তব্য
স্থির হয়, রাস্তার নিয়ম, নিয়মের অনিয়ম,তার সরষে ও সরষের ভূত সবাই আছে রাস্তায়। ক্রিমিনাল মালিকের জন্য স্মাগলিংয়ের কাজ নিতে হয় যার জন্য নগদ অর্থও হাতে পায়
পাপ্পু। বাইরে উঠোনে বসে থাকা আদি বাব মায়ের ফিরে আসার অপেক্ষা করছে। গুমিটির
মালিক এই অযথা ঝামেলা চান না। আঠাঙ্গার পথে ছেলে টিকে তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছে
দেয়ার ভার দেয় ড্রাইভার পাপ্পুকে। শিশু আদিত্য উঠে পড়ে ট্রাকে, সঙ্গে মনোহরন কুকুর
ছানা। এক রাস্তার গল্পে মিশে গেল অন্য রাস্তা অন্য গল্প। কেন্দ্র এসে দাঁড়াল প্রান্তে।
অন্যদিকে ডেভিড ও কিরন আবিস্কার করে, তাদের ছেলে উধাও। ক্যাজুয়াল নগর সিরিয়াসলি
তাদের ছেলেকে খুঁজে
বেড়ায় তন্ন তন্ন করে। এখানেই দেখা মেলে পুলিশের সহযোগ, বাস্তব টুকরো চিত্র।
প্রান্তিক
হাওয়া বাতাস লাগছে নগরের গায়। ঘটি তুলে জল খেয়ে, ট্রাকবাসীর ঢিলে জামা পরে, ঝাল
খাবার খেয়ে আদি পাপ্পুদের কাছের মানুষ হয়ে যায়, স্নেহ জন্মায়, নিজের ভাইঝির
কথা মনে পড়ে পাপ্পুর, রুক্ষ মুখে হাসি ঝিলিক দেয়। একসাথে তারা গান হায় হাম
হ্যা হিন্দুস্থানী। হ্যাঁ হিন্দুস্থানই বটে, পরিচালক এক আসনে বসালেন
হিন্দুস্থানকে।
পরের গল্প
রাস্তার মোড় বদলের। আদি কে খুঁজে পাওয়ার গল্প। সমান্তরাল গল্প এখানে এসে টুকুস করে
ছুঁয়ে দেয় মূল গল্প কে।ছোট্টো পুনম বারাঙ্গনা সভা থেকে মুক্তি পায়,তাকে একটি ট্রাকে
তুলে দেয়া হয় তার গন্তব্যের পথে। পাপ্পুর ট্রাক ওই ট্রাকের গতির কারনেই দিশা
হারিয়ে খাদে পড়ে যেতে থাকে। পুনমকেও জেনে যেতে হয়,এই সব বড়
রাস্তায় থামা মানেই কিন্তু সমস্যা।
তাদের ট্রাক অন্য ট্রাকের নিচে গড়িয়ে পড়াকে ভ্রুক্ষেপ না করেই চলে যায়, রাস্তার এই ত
নিয়ম। ছবির স্বার্থে পাপ্পুদের বড় আঘাত লাগেনি। নাকি এমনও হয়!
আদিত্য কে
খুঁজে পেয়ে প্রাণ পেল ডেভিড ,কিরন। উলটে থাকা ট্রাকের অদূরে বসে পাপ্পু বিড়ি
ধরায়,তার মুখে সেই চেনা নিস্পৃহ ভাব। বয়সে যুবক সওকত কিছুবা আবেগ তাড়িত হয় আদির
জন্য। পাপ্পু অভিজ্ঞ,তার কপালের বলি রেখার মতন কন্ঠ ও স্থির। উঠে চলতে শুরু করেছে
সে তখন, রাস্তার পথে।
ছবিঃ দি গুড রোড(The Good
Road) / ডি ও পিঃ অমিতাভ সিংহ
লেখা ও পরিচালনাঃ জ্ঞান কোরেয়া
কাস্টঃ
ডেভিডঃ অজয় গেহি
কিরনঃ সোনালি কুলকারনি
পাপ্পুঃ শামজি ডি. কারাসিয়া
সওকতঃ প্রিয়ঙ্ক উপাধ্যায়
আদিত্যঃ কেবল কাটরোডিয়া
পুনমঃ মিস পুনম রাজপুত
রিঙ্কেলঃ রিঙ্কেল কারেলিয়া
লেখা: ঊষশী কাজলী।
Perfect... More could be said but there are some words that should be heard silently to feel them
উত্তরমুছুন