বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫


“রোগা হওয়ার সহজ উপায়”

ফ্রায়েড রাইস , চিলি চিকেন আর চাকরি চলে যাবে এমন অবস্থার মাঝের সময় চুলের ডি এন এ টেস্ট আর খাবারের প্রেমে পড়তে গিয়ে সুন্দরী প্রেমিকা জুটে যাবার অঘটনের নাম “রোগা হওয়ার সহজ উপায়” । কবে থেকে শুনে এসেছি পেট রোগা বাঙ্গালির খাবারের প্রতি আসক্তির কথা, মধ্যপ্রদেশ এর মাপ যখন ম্যাপের বাইরে তখনও প্রানের মানুষের মুখ ঝামটানি শুনেও হাসিমুখে ডাবল ডিমের চিকেন রোল নিয়ে দুজনে রেলিং এ পা দোলাতে দোলাতে খাওয়ার যে স্বর্গীয় অনুভূতি পেট রোগারা তাঁর কি বুঝবে?


সেই নাক কোঁচকানো , ওয়াক্সিং করা সরু কোমরের নারী পুরুষ জাতির প্রতি পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য’র প্রশ্ন “পৃথিবীর ইতিহাস আসলে কার ইতিহাস?”। একা থাকা সুন্দরী নারী ফোন করে হোম ডেলিভারি তে খাবারের অর্ডার করতে চান, ভুল করে বার বার ফোনটা ‘বাল(চুল)’ কেলেঙ্কারি তে চাকরি হারাতে চলা শেফ এর কাছে এসে পড়ে। তাঁর পর সিনেমার নিয়ম মেনেই খাবার পৌঁছে দেওয়া, ঘনিষ্ঠতা ও প্রেমএ পর্যন্ত কোনও দুষ্টুমি নেই।যা দুষ্টুমি করার সেটুকু অভিনেতারা কেউ করেন নি। পরিচালকের লেখা ডায়লগ ঠিক দুষ্টু নয়, বরং সরু কোমরের প্রেমিকার তীক্ষ্ণ উচ্চারণে “নটি” বলা যায়। এর পর বেগুন ক্ষেতে প্রেম নিবেদন ......... অদ্ভুত তো ‘হুম’ করার কিছু হয়নি , সুস্বাদু খাবার নিয়ে যার কাজ, তাঁর জীবনে বাঙালির অতি প্রিয় লম্বা ঝোলা বেগুনি রঙের বেগুন না থাকলে কিকরে জমবে শুনি?



 বিয়ের পর বন্ধুবান্ধব , পাড়া পড়সির ছোট্ট ছোট্ট চিমটি “রোগা হ্যান্ডসাম ছেলের কিনা মোটা ধ্যাবড়া মার্কা বউ?” এই চিমটি গুলো নিমেষে দুজনের হাবুডুবু পায়ে পা দিয়ে সুড়সুড়ি দেওয়া প্রেমের ভিলেন হয়ে দাঁড়ালো ? এক নিমেষে প্রেম কিনা মনের ডাক্তার ঘুরে অভিমানী পথে ধরে , থলে-থলে কোয়ানটিটি মাপা বাটুলের প্রেমিকার কাছে? সেই লাস্যময়ির ইশারা ইঙ্গিত এবং কথাতে আশ্বস্ত হয়ে দু সপ্তাহের ক্রাশ কোর্স “ বউ রোগা হয়ে ছিপ ছিপে তন্বী হবেন”। এ পর্বের কথার দুষ্টুমি প্রায় ট্যাংগোর মত সুস্বাদু। আচমকা হোটেলের বসের তলবে সেফ স্বামীকে দু সপ্তাহের জন্য বিদেশ যেতে হয়।



ফিরে এসে অন্য ঝামেলা বউ তো না হয় রোগা হয়ে এফ টিভি মডেল হয়ে এলো কিন্তু এ নারী আসলে সেফের আদরের ‘রঞ্জু’ তো? নাহ সন্দেহ কিছুতেই কাটে না, এই সুন্দরী যতয় সংসার করুক না কেন এ সেই মানুষ টা নয়। তাহলে কোথায় গেল জোর করে রোগা করে দিতে চাওয়া নিজের আদরের ‘রঞ্জনা’। এবার সেফ এর ভূমিকাতে অভিনয় করা পরমব্রত কে খুজতে বেরোতে হয় তাঁর একান্ত প্রিয় , একান্ত আপন রঞ্জু “ রাইমা” কে। এরপর? সে অংশ কিছু আর থল-থলে , কল-কলে দাঁত কেলানো গল্প নয়বরং প্রেম হারানোর যন্ত্রণাবিদ্ধ মানুষের প্রেম খুঁজে পাবার গল্প। এই অংশটা বরং সিনেমার জন্য তোলা থাক। ওটা সিনেমার পর্দাতেই মানায়।    


বরং কথা হতে পারে চিকেন স্ট্রিপটিস এক্সপেরিমেন্টাল নামক ডিশ নিয়ে,  সিঙ্গাপুরি কলা নিয়ে, ম্যাসেজ করাতে করাতে জাপান আবিষ্কার নিয়ে, “নুন ছাড়া খাবারের মত ভালোবাসি” নিয়ে, ঋ লেখা টি শার্ট পরা মোটা লোকেটা গোপন মন্ত্রবলে রোগা সুন্দর “সুরেশ” হয়ে যাওয়া নিয়ে, এমনকি প্লাস্টিকের হাত দিয়ে লাস্যময়ীর পিঠ চুলকানো নিয়েও। মোদ্দা কথা ছবির ভাষা নিয়ে খেলার পর্যায়টা সত্যি অন্যরকম। দেবালয় ভট্টাচার্য’র ছবির ভাষা আগামী দিনের সিনেমার ভাষা কি না? এ ছবির বক্স অফিস কি হবে? এসব প্রশ্ন কে পাশে সরিয়ে রেখে বরং ইলিশের মরসুমে এছবিকে উপভোগ করবার হলে গিয়ে দেখা যেতে পারে।

আসলে রোগা বা মোটা নয় পৃথিবীর ইতিহাস তো মানুষের ভালোবাসার ইতিহাস, এই ভালোবাসার তীব্রতা সুন্দর করে দিতে পারে সম্পর্ক, বেঁচে থাকার মুল কথা একটা নির্ভেজাল প্রেম ,সাইজ দাজ নট ম্যাটার কান খুলে শুনে নাও স্লিম বালক বালিকারা। আর দ্বিতীয় এবং সমান গুরুত্বপূর্ণ কারন “জিভে জল আনা সুস্বাদু খাবার”. খাও এবং খাওয়াও আর প্রেমে পড়, জীবন খুলে বাঁচো। জয় ঝালে, ঝোলে, অম্বলে, ভালোবাসা- প্রেমে বেঁচে থাকা প্রজন্মের জয়।
যেখানে খাবারের গন্ধ আছে সেখানে ক্যামেরা , লাইট , সাউন্ড, ডিরেকসন অমুক তমুক নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করার থেকে খাবারের প্রতি মন না দিলে যে পাপ হবে, তাই এই পর্বটা আজ তোলা থাক।  



লেখা: মৌন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন