অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছি। খানিকটা সিনেমা নিয়ে পড়ে
ও ফেলেছি। যাদবপুরের প্রথম সেমিস্টারটাও দেওয়া হয়ে গেছে। ক্লাসে বসে, কফি কাপ হাতে
এর সাথে তার সাথে বারবার তর্ক শুরু করেছি সিনেমা কি সত্যিই সত্যি কথা বলে নাকি
কালের যাত্রায় সে দিনদিন তার নিজস্ব ভাষা হারিয়ে বর্তমানে শুধুমাত্র আকর্ষণের
কেন্দ্রে এসে উপস্থিত হয়েছে? এ প্রশ্ন আজকের দিনে এসে বড় তাত্ত্বিকেরও করা ভুল
হবে। বর্তমান টেকনোলজির যুগে এসে ডিজিটালের রমরমা স্টেজ থেকে ঘোষণা করে “আপনার
বাড়ির ছোট ছেলেকেও মোবাইলটা দিন সেও তার মত করে তুলে একটা ছবি বানাক আর আমাদের
কাছে এসে জমা দিন আমরা সে ছবি দেখাবার ব্যবস্থা করব”। সুতরাং আজকের দিনে এসে ছবি
বানানোটা নিছক একটা ফুলের মালা গাঁথার মত হয়ে গেছে, ওটা যে কেউ পারে। কিন্তু
তত্তগত ভাবে তার মূল্য বিচার হয় না, শুধুমাত্র হিসেবের নিরিখে তাকে মাপা হয়। ধুস
কি সব হাবিজাবি বলছি কি নিয়ে লিখব ভেবেছি আর কি সব বলে যাচ্ছি। মূল লেখার কথায়
আসি।
সেই ক্লাসরুমে কল্লোল বাবুর মুখ থেকে প্রথমবার
শুনেছিলাম। ওনার বলার মধ্যেই এমন একটা ভঙ্গিমা ছিল যে ছবিটা দেখার জন্য তখন থেকে
মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু সে ছবি তৎক্ষণাৎ তখন পাওয়া যায় নি। বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে
হল। কিন্তু এই অবসরে তার দু একটি ছবি আরও দেখে ফেললাম। তার দেশের আরও কিছু
পরিচালকেরও কিছু ছবি দেখে ফেললাম। কিছুটা হলেও তার দেশ কে চিনলাম। তার দেশের
সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা জানলাম। আমি জাফর পানাহির কথা বলছি। মধ্যপ্রাচ্যের ইরানের
পরিচালক জাফর পানাহি। দেখতে শুনতে সুন্দর। ফর্সা। ছোট চুল। গালে দাড়ি নেই। কোন দিক
থেকেই তাকে জঙ্গি বলা যাবে না। তবুও তিনি বন্দী। হ্যাঁ গৃহবন্দী। স্বৈরাচারী শাসন
তন্ত্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন সরি ক্যামেরা চালিয়েছিলেন। তার আগের ছবি “অফসাইড”
এর মুক্তির পর তাকে গৃহবন্দী করে দেওয়া হয়। আর তাকে সিনেমা বানানো থেকে বিরত করে
রাখা হয়। হ্যাঁ আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা জানে যে কখন মুখ খুলতে হয়, আর কখন না।
বড় বুদ্ধিমান তারা সেই জন্যই না বুদ্ধিজীবী। আসলে তারা জানেন না অন্যায়ের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ সবসময় হয়ে এসেছে। যখন আমার চারপাশে বর্ম থাকবে তখনই মুখ খুলব আর যখন
থাকবে না তখন চুপসে থাকব। আসলে ওই মুখ খোলাটাও যে ক্ষমতার লোভেই। তারা ভাল করে
জানেন কখন কেমন রূপ ধরতে হবে। খুব ক্যামেরা কনসাস তারা।
পানাহিও আসলে বুদ্ধিমান। খুব বুদ্ধিমান। তিনিও
জানেন কি ভাবে তার মুক্তি মিলবে। আসলে হয়ত এ আমার ভুল। আমারই অত্যাধিক প্রত্যাশা ছিল।
যেভাবে ছবির গল্পটা শুনেছিলাম আর যে মানুষটার “মিরর”, “সার্কেল” দেখেছিলাম তার
কাছে যে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি হবেই। তাকে ছবি না করতে দেওয়ার কষ্টটা যে কি আমিও
অতি সামান্য হয়ে কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সারা ছবি জুড়ে তার প্রতিফলন
আমি কোথাও দেখতে পেলাম না। কোথাও দেখতে পেলাম উত্তাল ইরানের অবস্থা তাকে কিভাবে
বিরক্ত করে। আসলে মিঃ পানাহি এসবের উপরে উঠে গেছেন। এ ছিল তার সরকারের বিরুদ্ধে
তীব্র প্রতিবাদ। অতি শান্ত নরম গলায় বিন্দুমাত্র ভনিতা না করে হাসিমুখে গোটা একটা
ফুল থেকে তার পাপড়ি গুলো ছিড়ে ফেলার মত অহিংস প্রতিবাদ। তাদের কে দেখিয়ে দেওয়া যে
শিল্পীকে কখনও বিরত রাখা যায় না সে তার সৃষ্টির পথ ঠিক খুঁজে নেয়। তাই তো মিঃ
পানাহিকে বলতে হয় আমরা যদি সিনেমার গল্পটা বলতেই পারি অভিনয় করে দেখাতেই পারি
তাহলে সিনেমা বানাব কেন?
সারা ছবি জুড়ে আমরা পানাহিকে দেখলাম। তার কথা
শুনলাম। তার আইনজীবীর কথা শুনলাম। জানলাম একমাত্র আন্তর্জাতিক চাপই তাকে মুক্তি
দিতে পারে এই বন্দীদশা থেকে। পানাহি বারবার চা খান। মেয়ের আদরের গোসাপকে ইগি বলে
ডাকেন। তার সিনেমার দৃশ্য দেখিয়ে আমাদের বোঝান সেই দৃশ্যের সাথে তার অবস্থার মিল
কোথায়। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন তার ক্যামেরা
নিয়ে আসতে কোথাও অসুবিধা হয় নিতো? রাস্তায় পুলিস দেখে কি বলল। বন্ধুকে বলতে শোনা
যায় না তেমন কোন অসুবিধা হয় নি ওরা চেক করেই ছেড়ে দিয়েছে কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
তিনি নিজের মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করতে থাকেন।
ময়লা নিতে আসা আর্ট কলেজের ছেলেটি যখন জানতে পারে যে তিনি ছবি রেকর্ড করছেন সে তখন
নিজেকে আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়। পানাহি মোবাইল ছেড়ে বড় ক্যামেরা নিয়ে আসে।
লিফটে তার সাথে নামতে থাকে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে কি করবে তুমি এরপর সে বলে কোথাও
যাব একটা যেখানে একটু শান্তি পাওয়া যাবে। পানাহি ক্যামেরা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে
ছেলেটি বারন করে আপনি বাইরে আসবেন না ওরা দেখে ফেলবে। আমরা দেখতে পাই প্রথমবার তার
ঘরের বাইরের দৃশ্য আগুন জ্বলছে বাইরে। পুড়ছে মানুষ পুড়ছে সমাজ পুড়ছে দেশ। ছবি শেষ।
আমার বারবার মনে পড়ছে দুটি লাইন
“কাছে থাকো। ভয় করছে। মনে হচ্ছে।
এ মুহুর্ত বুঝি সত্য নয়। ছুঁয়ে থাক।”
নিঃশব্দে কিভাবে ছবি বানানো যায় সে ছবিও
আলমারির পিছনে লুকিয়ে থাকা প্লেবয় ম্যাগাজিনের পৃষ্ঠা ছিড়ে কিভাবে মানবতার সামনে
এসে দাড়ায়। প্রশ্ন করে আর কতক্ষন লুকিয়ে থাকবে। এবার যে বেরিয়ে এস নিজের হাতে তুলে
নাও অস্ত্র রুখে দারাও সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে। এভাবেও ছবি বানানো যায়। এভাবেও নিজের
কথা মানুষকে জানানো যায়। এভাবেও মুক্তি পাওয়া যায়। এভাবেও সিনেমা বানানো যায়।
নতুনভাবে পানাহি এক ডিক সরি দিকদর্শন দিয়ে
গেলেন। যা কোথাও লুকিয়ে থাকা সেই সমস্ত মানুষদের উজ্জীবিত করে গেল যারা নিজেদের
ভাষা হারিয়ে ফেলার ভয়ে ছিলেন, তারাও নিজেদের ভাষা রক্ষার নতুন পথের সন্ধান পেলেন।
তাই দিস ইজ নট আ ফিল্ম, দিস ইজ আ ফিল্ম হয়ে
দাড়ায়। সমস্ত রঙবেরঙের আদিখ্যেতাকে দুরে সরিয়ে রেখে নতুন এক ভাষার সৃষ্টি করে। যে
ভাষায় আবারও কেউ ভেবে উঠে হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে সেও কলমের মত খাতায় প্রতিবাদের
অক্ষর লিখে চলবে।।
ছবিঃ দিস ইজ নট আ ফিল্ম
ধন্যবাদন্তেঃ .....................।
অসংখ্য ধন্যবাদন্তেঃ ............।
উৎসর্গঃ সমস্ত ইরানিয়ান পরিচালকদের।
পরিচালনাঃ জাফর পানাহি
সহযোগিতায়ঃ মোজতাবা মিরতামহ্সব।
ছবিঃ দিস ইজ নট আ ফিল্ম
ধন্যবাদন্তেঃ .....................।
অসংখ্য ধন্যবাদন্তেঃ ............।
উৎসর্গঃ সমস্ত ইরানিয়ান পরিচালকদের।
পরিচালনাঃ জাফর পানাহি
সহযোগিতায়ঃ মোজতাবা মিরতামহ্সব।
lekhata r aktu baro kora jeto na?ato sundor age chilo mone holo hut kore ses hoe galo.pore bes laglo,THNX...
উত্তরমুছুনsumit hoyto tui thik lekhata r o aktu boro kora jeto kintu kori ni ichche kore ee re..mone holo ei manustar kache oti nogonno amra...er theke boro vabe onake bisleson kora amader pokkhe somvonb noy..tai
উত্তরমুছুন