আমরা যারা সকাল বিকাল এমনকি রাতেও ভাত খাই তারা আসলে খুব ছাপোষা মধ্যবৃত্ত বাঙালি। বাবা সরকারি অফিসে কেরানির কাজ করে, মা সকালে উঠে আগে ক্যালেন্ডারে চোখ দেন তারপর অন্য কিছু পাছে দিন টা অন্য কিছু দেখার পরে খারাপ যাক তাই, তারপর দরজা খোলে, আর ছেলে বা মেয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমায় আগে উঠলে তো আর ফ্রিজ থেকে কমলা লেবুর রস সরি জুস টা পাওয়া যাবে না তাই একটু দেরিই হোক সেই তো ভাত ডাল আর বেগুন ভাজা খেয়েই কলেজ যেতে হবে তাই হাঁ করে ঘুমায়। এহেন বাঙালি সরি শুধু বাঙালি কেন ভারতীয়রা সকলেই এই একরকম আগাপাঁচতলা প্রায় একরকম ভাবেই জীবন কাটায় তা এরা নিজেদের মধ্যে প্রেমিক প্রেমিকার মধ্যে মিলেমিশে একটু ছবি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে যাবে ১০০ টা টাকা টিকিট কাটবে আর সারা ছবি জুড়ে হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে হাত ধরে ছবির সাথে ঘুরতেও যেতে পারবে না প্রেমিকার কানে কানে বলতেও পারবে না “জানো তো আমার ইচ্ছে আছে আমাদের বিয়ের পর তোমায় নিয়ে কাশ্মীর যাব আর ওই যে বরফ পড়া ভ্যালিটা দেখছো ওখানে গিয়ে তুমি আর আমি বরফ ছোড়াছুড়ি করে খেলব।” তাহলে কি আর ১০০ টা টাকা উঠবে অনেক কষ্ট করে টিউসুনির টাকা থেকে নিয়ে যে টিকিট টা কাটলাম আর ৩ ঘণ্টা একটু একলা নিরিবিলিতে অন্ধকারে প্রেম টা করতে পারব না? ছবির ওরকম হিমশীতল পরিবেশে নায়ক যখন নায়িকাকে জড়িয়ে ধরেছে আমরা অন্তত হাত তাও দুজনে ধরতে পারব না? ধুস এসব কিছু না হলে ছবি হল নাকি। প্যান্টুল হলুদ করে “বাংলার সবচেয়ে বড় সিনেমাহল” এ হেবি হেবি ঢিসুম ঢিসুম ছবি দেখতে পাচ্ছেন আর এদিকে ভাল না লাগলেও সকালের গোটা কাগজ জুড়ে ভাললাগার সমলোচনার ন্যাকামো তে ভরিয়ে তুলছেন সেবেলা কিছু নেই আর শাহরুখ খান দুজন নায়িকার সাথে কমর দুলিয়েছে কি সারা কাশ্মীর জুড়ে খালি বোম ডিসমিস করেছে সেখানে নাক গলিয়ে একদম ঝেড়েমুছে সাফ করে দিচ্ছেন। ও দাদা অনেক আঁতলামো করেছেন কেন শুধু শুধু আবার করছেন, জানেনই তো আপনি যতই ভ্রু কুঁচকে সিনেমার জটিল জটিল তত্ত্ব বোঝান আমি সেগুলি নিয়ে অ্যানালাইসিস করি নিজেকে সবচেয়ে বড় আঁতেল করার চেষ্টা করি কিন্তু এসব ওই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এর ক্যাম্পাসেই ঠিক আছে ক্যাম্পাসের বাইরে বেরলেই তো সেই আবার বড় বড় পোস্টারে সত্যজিৎ রায়ের সাথে এখনকার তুলনীয় সত্যজিৎ রায়ের ছবির অসাধরন কিছু কোলাজ দেখতে পাব। তাই শুনুন ওই সব আঁতলামো করার বিন্দুমাত্র কোন মানে হয় না। মোদ্দা কথা সুন্দর মিষ্টি রোমান্টিক ঢেউ খেলানো আচল টপকানো হাল্কা চুম্বন মাখান ছবি দেখব হলে বসে আলুভাজা খাব, প্রেমিকার হাত ধরে বলব “চলো ডার্লিং আজ এই অন্ধকারে ওই পর্দার ক্যাটরিনা আর শাহরুখের মত হয়ে যাই প্লিজ” তবে না ছবি দেখার মজা আসবে অনুভব আসবে। কল্লোল বাবুর মত তো চোখে ম্যাজিক চশমা পড়ে ছবি দেখার কোন মানে হয় না, ওসব ওই কি যেন “পাই” না কি ওসব ছবিই ভাল লাগে।
এ ছবি দেখতে এসে শরীর জুড়ে প্রেম আনব না, দুচোখ ভরে ভালোবাসার অশ্রু আনব না টা কখন হয় নাকি। সেই কবে থেকে শুরু করেছি বাবাকাকারা আমার আগেও শুরু করেছেন কল্লোল বাবু ও মনে হয় লুকিয়ে লুকিয়ে ওই “সিলসিলা”, “কাভি কাভি” দেখেছেন আমি তো এই “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে” থেকে শুরু করলাম। আর শুরু করেই পুরো ফ্ল্যাট হয়ে গেছি মাইরি। এ রেশ তো এখন চলছে, চলবে, নতুন নতুন জীবনে প্রেমের আবির্ভাব আর প্রেমিকাকে নিয়ে পাশে বসে প্রথমবার হাতে হাত রেখে ওরকম সাদা বরফ পড়া লন্ডনে চার্চের সামনে দিয়ে লাল গ্রাউন পরে ক্যাটরিনা ছুতে আসছে আর আমিও ভাবছি একটা সিটি দেব কি না আর তা না করে বোদ্ধাদের হাঁ করে চেয়ে চেয়ে ভাবছি এই যে লং সটে এটা কি ল্যান্ডস্কেপ বলা যায় নাকি সেটিং...। না এটা সেটিং কারন এই ফ্রেমে তো কিছু একটা হচ্ছে সুতরাং ড্যাম সিওর এটা সেটিং। ওসব থিওরি নিয়ে ভাবতে গেলে লাভ নেই থিওরি তিওরি ওই তারকভস্কি গদারের ছবি দেখে ই গুনো এ হল ফুল্টু ঝিনচাক শাহরুখ খান আর শ্রদ্ধেয় যশজির শেষ ছবি সুতরাং মন খুলে দেখ হাওয়ায় উড়ে বেরাও কলার তুলে সানগ্লাস পড়ে বাইক চালাও তবে না মনে হবে তুমি “ যব তক হ্যায় জান” দেখে বেরিয়েছো। ঘরে যাও রাতে প্রেমিকাকে ম্যাসেজ করো কিংবা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দাও গুলজারের এখনো সেই মন কেমন করা ঢুলু ঢুলু চোখ লাল করা “ ‘তেরি আঁখো কি নমকিন মস্তিয়াঁ/তেরি হাসি কি বপরওয়া গুস্তাখিয়াঁ/তেরি জুলফোঁ কি লহরাতি অঙ্গরাইয়াঁ/নেহি ভুলুঙ্গা ম্যায়/জব তক হ্যায় জান/জব তক হ্যায় জান’ তবে কিনা মনে হবে ছবি দেখে বেরিয়েছি একটা। সব ছবিই দেখেই যদি সমলোচনা করি তাহলে রাতে কোন ছবির গান লিখে প্রেমিকার রাগ ভাঙাবো।
যদিও সেই একরকম গল্প দেখি সেই একজন পরিবারের কথা না শুনে বিদেশে এসে ভাগ্য পরীক্ষা করতে চায়, প্রেমে পড়ে কিন্তু প্রেমিকা কিসব ভগবানের কসম টসম দিয়ে চলে যায় আর এ বাপু বাপদাদার মত ইন্ডিয়ান আর্মি তে যোগদান করেন আর দ্যা ম্যান হু কান্ট ডাই এর খেতাব নিয়ে সারা কাশ্মীর জুড়ে খালি বোম ডিসমিস করে বেরায় জার সংখ্যা এখন ৯৮ আর দুটো বাকি সেঞ্চুরি করতে কিন্তু না গল্প এখানেই শেষ নয় আরও আছে দাঁড়ান অপেক্ষা করুন একটু সবুর করুন পাগলু মার্কা ডান্স যদি সহ্য করতে এখানে তাহলে একটু অপেক্ষা করতেই হবে ফিরে আসছি বিরতির পর।
হ্যা তো বিরতি শেষ আমার পুরো একটা চিপসের প্যাকেট খতম। এবার মনোযোগ দিয়ে দেখি। তো কোথায় ছিলাম বোম ডিসমিস না, হ্যাঁ মনে পরেছে তো এর আগে একটু আছে ওই কাশ্মীরি শীতে অনুস্কা শর্মারও হট বডি আছে ছেলেদের ইভটিজিঙ করার মত ডাইলগ আছে, পুরো প্যাকেজ, সিটি আপনাকে মারতেই হবে। শেষে গিয়ে আবার ট্রাইঅ্যাঙ্গেল লাভ স্টোরি আছে, দু ফোটা ফাও চোখের জল আছে হিরো হিরোয়িন এর শেষ বাহুজুগলে আবদ্ধকরণ আছে একদম পুরো বলিউডি ছোঁয়ায় আঁকরে ধরে চুমু খাওয়া আছে। বুঝলেন তো এবার, ঠিক আছে আমি আর কিছু বলব না আমি চাই আপনিও ছবিটা দেখুন মজা করুন আরে বাবা বাংলা ছবির ফেস্টিভ্যাল শুরু হতে অনেক দেরি আছে তো তার আগে দেখে আসুন কিছু না মিস করলেও অন্তত অশোক মেহেতার ক্যামেরা আর প্রোডাকশন ডিজাইনার শর্মিষ্ঠা রায়ের অনবদ্য কাজের ফলে একটা পারফেক্ট ছবি মিস করবেন। এই দুজনের কাজের জন্য ছবিটা একবার তো হক বনতাই হ্যায় দেখার। রহমানের গানের সুর হয়ত আপনার আর তার আগের কাজের সাথে ভাল লাগবে না তবুও “জিয়া রে” গানটা বা গুলজারের অনবদ্য কথার জন্য “শাস” গানটাও আপনার ভাল লেগে যেতে পারে। ক্যাটরিনার অভিনয়ের থেকে নন-অভিনয়, শাহরুখের সেই রোম্যান্টিক হিরোর চেয়ে একটু বুড়াপা, অনুস্কা শর্মার চুলবুলি আন্দাজ এসবের থেকে আদিত্য চোপরার ডাইলগ এর জন্য ছবিটা একবার দেখা যেতেই পারে। না হলে আমার মত আপনিও প্রেমে ভাঙনের সময় বলবেন কি করে “এ সায়েদ মেরা প্যার কা ভকত্ নেহি থা”।
আসলে শুনুন নিজের কথা ভাবুন একবার আমার মত আপনি ও যদি প্রথমবার প্রেমিক হাত ধরে একটা ছবি দেখেন আর মাঝে মাঝেই কাশ্মীরের ভ্যালিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে আপনি কি করে বলবেন যে আপনার ছবিটা ভাল লাগে নি। সত্যি করে বলুন তো। অনেক তো আদ্যপান্ত থিওরি দিয়ে সমলোচনা হল এবার একটু আবেগ দিয়ে একটু অনুভূতি দিয়ে একটু ভালোবাসার স্পর্শ দিয়েই না হয় একটা ছবির কথা বললাম। যার পরতে পরতে সবসময় ভালোবাসার ছোঁয়া লেগে থাকে। অনেক গুরুগম্ভীর লোকেরা যতই বলুক ওইসব লৌকিক প্রেমের থেকে নিজের সাথে নিজের অলৌকিক প্রেম অনেক বেশি ভাল তারাও রাতের স্বপ্নে নাম না জানা সেই প্রেমিকার হাত ধরে শেষ ডানকুনি লোকালটা ধরে। তাই বলছি সারা দুনিয়ায় এখন ভালোবাসার খুব দরকার এইসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের থেকে একত্রিত হবার জন্য। তাই ভালোবাসার অনুভবের জন্য একবার তো বলতেই হয় “জব তক হ্যায় জান...।।জব তক হ্যায় জান...।।জব তক হ্যায় জান।।
bidhi-baddho satarki karon ta janar por o mone holo review mayb amone hai jeta akonkar besirvag news paper ba magazine a pai na.anyway 'chittagong' ba 'jab tak hai jaan' lekhar ai style ta bes valo laglo, kaek ta spelling mistake ache otherwise just go ahead.
উত্তরমুছুন