শনিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৩




প্রথম বার কোনও শিশু শ্রমিক তৃতীয় লাইন থেকে গেয়ে ওঠে

 “ সারে জাহাসে আচ্ছা”




                  ফেলে দেওয়া, ভাঙাচোরার ডাস্টবিনের জিনিষ বাছাই করা ছেলে , কাকুর কাছে থাকে নাম ‘গাট্টু’ । জানতে পারি সে অনাথ , বাবা মা নেই ঘিনেঘিনে নোংরা গলিতে তার বসবাস কাকার সাথে। আর কাকা বাদে আর একটি প্রাণী তার কাছের “ টাইগার” , গাট্টুর প্রিয় ভেড়া। যার দিন শুরু হয় গাড়ির একটা ভাঙাচোরা সীট থেকে ,সে বিছানা হিসাবে ব্যবহার করে, কাকুকে খাবার তৈরি করে সে কাবারি/দি বাছাই এর কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু আকাশে ঘুড়ি দেখলেই তার মন উত্তাল হয়। আর কাজের ঠিক থাকে না সে বেরিয়ে পড়ে। সে অন্যদের সাথে খুব একটা মেসে না। ঘুড়ি ধরার থেকে ঘুড়ি ওড়ানোর দিকে তার ঝোঁক অনেক বেশী। সে সরাসরি লড়াইতে আসতে চায় আকাশের উচুতে ওরা ঘুড়ি গুলির সাথে। এখানেই আমরা পরিচিত হয় “ কালী” নামের এক শক্তিশালী ঘুড়ির সাথে। পরিচালক প্রথম পাঁচ মিনিটেই হানা দেন আমাদের সব থেকে প্রিয় শৈশবে। আমরা একাত্ম হয়ে পড়ি ছবির সাথে।



গাট্টু ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে , টাকা চুরি করে । নীল আকাশ তার কাছে নেশার মত। বার বার সে ঐ “কালী” ঘুড়ির সাথে অসম লড়াই তে হেরে যেতে থাকে । আর প্রতিবার তার চোয়াল সক্ত হয় জেদ বেড়ে যায় নতুন প্রস্তুতি নিয়ে আবার ঘুড়ি যুদ্ধে আসতে চায়। এই পর্বে আমাদের ভাষাতে গাট্টুর “ স্ট্রিট স্মার্টনেস” ফুটে ওঠে দারুন ভাবে । সে পাড়ার দোকানদার এর মেয়েকে ডিভিডি এনে দেওয়া হোক বা পাড়ার দর্জিরকে পোটিয়ে ছাদ পাওয়া হোক। এসবের মাঝেও কোথাও একটা নিজস্ব স্নেহ বোধ কাজ করে যে কারনে সে তার পোষা ভেড়া যাকে টাইগার নামে ডাকে তাকে নিয়মিত দুধ খাওয়াতে ভোলে না। আমরা ধীরে ধীরে গাট্টুর সাথে এক হয়ে যেতে থাকি যে কারনে টাকা চুরি করার মত কাজেও হাত তালি দিয়ে ফেলি। আমাদের মননও গাট্টুর ওড়ানো ঘুড়ির সাথে উড়তে থাকে আকাশে। ফলে দু একটা দৃশ্যে অতিপাকামিকে আশকারা দিয়ে ফেলি। কিন্তু পর্বের চেষ্টাও ব্যার্থ হয়।



পরিচালক রাজন খোসা এখানেই আসল কাজটা করেন নিছক একটা ঘুড়ি কেন্দ্রিক গল্পকে অন্য উচ্চতাতে নিয়ে ফেলেন । বিসন্ন গাট্টু জানতে পারে তার এলাকার স্কুলের ছাদ সব থেকে উচু যদি শেখান থেকে ঘুড়ি ওড়ানো সম্ভব হয় তবে “কালি”কে কাটা সম্ভব। কোনোদিন স্কুলে না পড়া গাট্টু এক অদ্ভুত চতুরতাতে ভর করে ভর্তি না হয়ে স্কুলে ঢুকে পড়ে। সে নতুন জগতের খোজ পায়। প্রথম বার কোনও শিশু শ্রমিক তৃতীয় লাইন থেকে গেয়ে ওঠে “ সারে জাহাসে আচ্ছা”। সে প্রথমবার জানতে পারে জন্মদিন নামে একটা ব্যাপার আছে। ঘরে ফিরে কাকাকে প্রশ্ন করে “ কাকা আমার জন্মদিন কবে?” কাকা উত্তর দিতে পারেন না । শুধু বলেন তোকে তোর বাবার থেকে কিনেছিলাম। এখন ঘুমিয়ে পর আর এসব পাগলামি ছেড়ে মন দিয়ে কাজ সেখ । সিনেমা হল নিঃশব্দ হয়ে যায় হটাৎ। একজন গাট্টু নয় , লক্ষ গাট্টুর কথা এভাবে প্রকাশ হয়।



ছবিটি মহান বানী দানের ছবি হয়ে ওঠার তৃতীয় এবং সবথেকে জোরালো সম্ভবনা কে বাদ দিয়ে এখান থেকে পরিচালক আবার ঘুড়ির গল্পে ফেরত আসেন । আমি আপ্লুত হয়ে পাসে বসা ফিল্ম স্টাডিস পড়া আদিত্যর দিকে চোখ ইশারা করে জানিয়ে দি । এই পরিচালক আমার প্রিয়তম পরিচালক দের তালিকাতে ঢুকে পরলেন। গাট্টু বুঝতে পারে ক্লাস করতে হলে বই নামক বস্তুর প্রয়োজন হয়, সে সেটাও চুরি করে অন্যের ব্যাগ থেকে এবং ধরাও পড়ে সহপাঠীদের হাতে । শেখান থেকে আবার অন্যভাবে বন্ধুত্বের শুরু হয় এ বারের মত গাট্টু সাস্তির হাত থেকে বেচে যায়। যারা সালাম ডগ মিলিয়নিয়ার “ স্টোরি টেলিং” পছন্দ করেছিলেন তাদের কিন্তু এছবিও ভালো লাগবে। গাট্টু শেষ পর্যন্ত স্কুলের ছাদে যেতে সফল হয় এবং একই সাথে কাকার কাছে ধরা পড়ে যায় যে সে দীর্ঘদিন কাজ না করে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। প্রবল বকুনি জোটে। হায়-রে সর্ব শিক্ষা , হায়-রে শিক্ষার অধিকার।



গাট্টুর জীবন কঠিন হয়ে ওঠে একদিকে নিজের ঘুড়ি ওড়ানোর যুদ্ধ, একদিকে কাকার বকুনি, একদিকে বন্ধুত্ব একদিকে ভালো লেগে যাওয়া স্কুল একসাথে ঘুড়ির প্যাঁচে আটকে ফেলে ছোট্টো ছেলেটাকে। যেমন আমরা আটকে পড়ি প্রতিমুহূর্তে জীবনের “কালি”র সুতোর প্যাঁচে।   গাট্টু কি পারল সফল হতে? এটুকু যারা দেখেননি তাদের জন্য তোলা থাক। তোলা থাক রাজন খোসার মুন্সিয়ানা। 



বরং কথা বলা যেতে পারে ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্যের গ্রাফিক্স নিয়ে। কথা হোক একটা ছোট্ট গল্পের মধ্যেকার এই “সময়” এর “ডকুমেন্টেশন” নিয়ে। কথা হোক শিশু শিল্পী মহম্মদ সামাদ(গাট্টু) এর পুরো ছবি জুড়ে পা টেনে টেনে হাটার অভিনয় নিয়ে। নরেশ কুমার হিসাবে গাট্টুর কাকাকে নিয়ে। তবুও এছবির অর্থনৈতিক সাফল্য নিয়ে আমার কাছে কোনও খবর নেই।



তবে অন্য এক “দেখা” দেখলাম আমি, তা কিছুটা এরকম

     ২০ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার , খুব কম প্রচার করেই রিলিজ হয়েছিলো গাট্টু একটু ব্যাস্ততা ছিল তাই ভেবেছিলাম ৩/৪ দিন পরে দেখব ছবিটা। কিন্তু আমার সময়ে যখন আমি পৌছলাম দেখলাম শো টাইম পরিবর্তন হতে হতে দিন পিছু মাত্র একটা শো হচ্ছে। চিলড্রেন ফিল্ম তো নাকি মার্কেট নেই।




     ২৮ ডিসেম্বর ২০১২, শুক্রবার , নন্দন চিলড্রেন ফিল্ম ফেস্ট সেই সন্ধ্যা ৬ টায় শো কিন্তু বিকেল সাড়ে চারটে থেকেই ভীষণ লম্বা লাইন পড়েছে। সবাই গাট্টু দেখতে এসেছেন। কতশত আলোচনা উঠে এলো শেখান থেকে কেউ বলছেন বিখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানীর ছোটবেলার গল্প তো কেউ বলছেন কোনও এক মুম্বাই খ্যাত ডাক্তার এর ছোটো বেলার গল্প। তখনও ঊশষী আসেনি ফলে আমি আর আদিত্য এসব উদ্ভট গল্প শুনছিলাম । সবটাই বাচ্চাদের মা- বাবা দের তৈরি আসলে বুঝলাম এটা সেই সংক্রামক মানসিকতা যারা তাদের বাচাকে একদিন সময় করে একাডেমিক এর বাইরে নিয়ে সেদিন এর গাট্টু দেখাতে নিয়ে যান নি। সেটা হলে নিছক ঘুড়ি ওড়ানো একজন শিশু শ্রমিক এর কথা গল্পে কিছুতেই ডাক্তার , ইঞ্জিনিয়ার এর কথা আসতো না।  মনটা খুব আবেগপ্রবন হয়ে ওঠে পকেট থেকে সেল ফোন বের করে গাট্টুর পরিচালক রাজন খোসা কে মেসেজ করি এই ভিড় এর কথা জানিয়ে। এতো মানুষ একসাথে কোলকাতাতে ওনার ছবি দেখতে ভিড় করেছে জেনে উনি খুশি হয়ে শুভেচ্ছা বার্তা জানিয়ে মেসেজ করেন। রাতে কথা হবে এই মর্মে।



প্রযোজক- চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া
পরিচালক রাজন খোশা
চিত্রগ্রহণ- সত্য রাই নাগপাল
অভিনয়- মহম্মদ সামাদ , নরেশকুমার







সোমবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৩


দাবাং-২



হেয়ার স্কুল এর সামনের ফুট পথে যে ঘুঘনি পাওয়া আমরা নাক মুছতে মুছতে জিভে শব্দ করে খাই বা বিবেকানন্দ পার্কের ফুচকাতে কোনও বিশেষ খাদ্যগুণ আছে এমনটা কিন্তু আমার জানা নেই। তবুও শুধু স্বাদ এর আকর্ষণে পেট খারাপের ঝুকি নিয়েও বিকেল হলেই মন ছুটে যাই সেদিকে। স্বাদ এর কথা যখন এলো তখন বলি এবছরের বাণিজ্যিক হিন্দি ছবির সেরা রাধুনি সলমান খান এর সেরা ডিশ কিন্তু “ দাবাং-২” । স্বাদে , গন্ধে, রূপে এক দারুন সংমিশ্রণ অকারনে সিনেমাটিক ভিউ খুজতে গিয়ে ফিল্ম স্টাডিজ এর ছাত্রদের মত খুত না ধরেলে কিন্তু এক উপভোগ্য ছবি। খুব সাধারন একটা  গল্প কিভাবে মশলা দিয়ে সুস্বাদু করতে হয় তার নিদর্শন।


চুলবুল পাণ্ডে এখন বদলি হয়ে কানপুর এসেছেন, পরিবার নিয়ে , মানে বাবা, ভাই, স্ত্রী সবাই কে নিয়ে। এখানেই তিনি ঠিক করে দেন দাবাং যদি ঘর ভাঙার কথা হয়, তবে দাবাং-২ সবাইকে নিয়ে ঘর বাধার গল্প। বাবা প্রজাপতি বা ভাই মাখন বা স্ত্রী সকলের মধ্যে সেই একসাথে থাকার সুখি ছবি স্পষ্ট। ফলে আগের ছবির বাবা ছেলে বা ভাই-ভাই লড়াই এখানে নেই, তাহলে দাবাং-২ মারামারি নেই? আল্ বাত আছে এখানে ছেদি শিং নেই তাতে কি হয়েছে বাচ্চা ভাইয়া তো আছেন তবে তার সাথে পুলিশ চুলবুলের লড়াই কিন্তু সারা ছবি জুড়ে নয়। কানপুরে বরং তিনি অনেক ছোটো ছোটো দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করেন তা মেয়ের বিয়েতে বাধা দেওয়া গুন্ডা কে মেরে হোক বা বয়স্ক মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করা পুলিশ কনেস্টেবল কে “ বাবার সাথে এই ভাবে কথা বল নাকি?” এই ভাবে ধমকে হোক। ফলে সারা ছবি জুড়ে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা দেওয়া পুলিশ কে দেখি। দাবাং এর তুলনাতে মারামারি অনেক কম করেছেন ঠিক কিন্তু যে টুকু করেছেন তা কিন্তু টেকনিক্যালি ভয়ানক শক্তিশালী যেমন এক ঘুষিতে গুণ্ডাদের ক্যামম্বিস বলের মত বাউন্স করিয়ে দিতে পারেন বা এক লাথিতে রোলারের মত গড়িয়ে দিতে পারেন ।




এই চুলবুল ঘরে ফিরলে অন্যরকম স্ত্রীর সাথে খুনসুটি করেন , যা দেখে বিবাহিতা নারীদের ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া স্বামীদের ওপর যথেষ্ট রাগ হতেই পারে। আবার বাবার সাথে ছাদে পাশাপাশি শুয়ে ফেলে আসা অতীতের গল্প শোনার জন্য বায়না করতে পারেন। মৃত মা এর ছবির সামনে দাড়িয়ে ছবির সাথে কথা বলতে পারেন। আবার ভাই মাখন এর অল্পবুদ্ধি নিয়ে মজা করতে পারেন। কিন্তু  জামা খোলা সলমান এতো সংসারি হয়ে গেলে “ঝান্ডুবাম খ্যাত” মুন্নিদের কি হবে ? অবশ্যই কিছু হবে আর হবে বলেই তিনি করিনার সরু কোমর এর জাদু দিয়ে “ফেভিকল” আটকেছেন, আমাদের জন্য নিজে আইটেম নেচেছেন। গরম মালাইকা কে পর্দাতে এনেছেন দারুন ভাবে।


ছবির সেরা অংশ সন্তানসম্ভবা স্ত্রী কে নিয়ে আর বড় পরিবার গড়ার প্রস্তুতি চলাকালীন বাচ্চা ভাইয়ার অত্যাচারে  সন্তান- ভ্রুন নষ্ট হয়ে গেলে প্রতিশোধকামী স্বামী হিসাবে পুলিশ চুলবুল এবং সন্তান হারার যন্ত্রণা ক্লিষ্ট নারী হিসাবে তার স্ত্রীর বাকরুদ্ধ মুহূর্তে প্রতিশোধ এর প্রতিজ্ঞার জন্ম দেওয়া দৃশ্য, ছবির ক্লাইমাক্স এর জন্ম দেয়। এরপর আমরা বহু প্রতীক্ষিত নায়ক কে দেখি।


কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন উঠে আসে কেন সারা ছবি জুড়ে এতো মুখমুখি লড়ায় এর সম্ভবনা থাকা সত্তেও , বাচ্চা ভাইয়া আর চুলবুল কে মাত্র একবার সামনাসামনি লড়তে দেখি ছবির শেষে আসলে। এখানে আমার ব্যাক্তিগত একটা মনে হওয়া আছে বাচ্চা ভাইয়ার চরিত্রে অভিনয় করা প্রকাশ রাজ এর আগের হিট ছবি “সিঙ্ঘম” এর সাথে এই ছবির চরিত্রটা এক হয়ে যাক এটা বোধ হয় চান নি পরিচালক বা সলমান নিজে।


ফলে এক নতুন সম্ভবনা তৈরি হয় ছবির শেষে গিয়ে , যেখান থেকে খুব সম্ভবত দাবাং-৩ হবে। কি সেই সম্ভবনা তা বললে তো সব বলা হয়ে গেল বরং নিজে এই ছবি দেখুন বুঝতে পারবেন নিজেই।


দাবাং এর পরিচালক ছিলেন অনুভব কাশ্যপ এখানে তিনি অনুপস্থিত তার জায়গা সামলেছেন আরবাজখান। ফলে কিছু ফাঁকফোকর থাকা টা স্বাভাবিক এবং ছিলও কিন্তু ব্র্যান্ড চুলবুল তার নিজের সাত রঙের ঝলকানিতে তা ঢাকার চেষ্টা করেছেন খুব করে। সে মারামারির দৃশ্যে ক্রেন এর ওপরের ক্যামেরাকে হাতের ইসারাতে নিচে ডেকে হোক বা উত্তরপ্রদেশ , বিহারের এর দর্শক দের কথা মাথায় রেখে একাধিক আইটেম নম্বর রেখে হোক, বা মাহিগিল এর মত সুন্দরী কে খুব ছোট্ট অংশে পর্দাতে এনে হোক বা সাজিদ- ওয়াজিদ এর মিউজিক দিয়ে হোক , বা প্রকাশ রাজ এর হাড়হিম করা চাহনি দিয়ে হোক। আসল কথা সলমান হলেন সেই পাক্কা রাধুনি যিনি সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না করতে এবং খুব তাড়াতাড়ি বেচতে পারেন। যে কারনে প্রথম চারদিনে ছবির বিক্রি ১০০ কোটি পেরিয়ে যেতে পারে নিশ্চিন্তে।  তবে ফিল্মবোদ্ধা দের আশঙ্কা “ যে পরিমান অ্যাকসান–কমেডি গোছের ছবি হচ্ছে তাতে দর্শক খুব তাড়াতাড়ি স্বাদ বদল করার জন্য অন্য কিছু খুজে নেবে না তো?”  ফ্রেম চলতে থাক বক্স অফিস এর উত্তর নিশ্চয় দেবে।




ভিনয় : সলমন খান, সোনাক্ষি সিংহ, প্রকাশ রাজ,
করিনা কপূর, বিনোদ খন্না, আরবাজ খান, মাহি গিল প্রমুখ পরিচালনা : আরবাজ খান
প্রযোজনা : আরবাজ খান ও মালাইকা অরোরা খান

সঙ্গীত : সাজিদ-ওয়াজিদ
সিনেম্যাটোগ্রাফি : অসীম মিশ্র

বুধবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৩


ফের চলে যাবে করে একলা আমাকে



অগুনতি তারে আটকে ছিলাম , বাইরে পারদ খুব দ্রুত নিচে নামছিলও ,এর মধ্যে আমার ছ’বছরের পুরনো সেল ফোনে একটা এসএমএস এলো“আজ বিকাল তিনটেয় ময়দান , রোদে পিঠ দিয়ে বসবো । আজও যদি দাড় করিয়ে রেখেছিস খুব মার খাবি কিন্তু । প্লিজ ভুলে যাস না যেন আমি আজ কিন্তু রিহার্সাল যাব না' তোর জন্য” আমি তাড়াতাড়ি ছুটি চেয়ে পাড়ি দি ময়দান। দেরি হলে যে আবার আয়ত চোখের শাসন জুটবে খুব করে।  আসলে এ সম্পর্কের যে নাম দেওয়া যায় না বন্ধুত্বের থেকে বেশী আবার প্রেমের থেকে কম।


ফিরতি পথে ভাবছিলাম এমন সম্পর্ক এ শহরের পাজরে প্রতিদিন নতুন রঙ নিয়ে আসে বলেই আজও অসময়ে বৃষ্টি হয়। ভাবছিলাম এমন বিষয় নিয়ে কেন ছবি হয় না। কান , বার্লিন , টরেন্টো তে যারা বাংলা ছবি পাঠান তারা এমন “বোকা–নন ইন্তেলেকচুয়াল” বিষয় নিয়ে ভাবেনা না । আর যারা ওখানকার জন্য ছবি বানান না তাদের ছবি তো আবার টার্গেট অডিয়েন্স এর জন্য হিরো কে প্রচণ্ড মারপিট করতে হবে , ভীষণ নাচতে হবে সে এক ভীষণ জটিল ঘটনা বটে।




এসব ভাবতে ভাবতে আজ দেখে ফেললাম “বোঝে না সে বোঝে না” । এবং দেখলাম অসাধারন এক গল্প বলেছেন রাজ চক্রবর্তী। সম্ভবত তার এখন পর্যন্ত সেরা ছবি । যার প্রতিটা কোনায় কোনায় উকি মারে বাংলা , উকি মারে আপনার প্রথম যৌবন এর অনুভুতি । একটা অ্যাক্সিডেন্ট , অনেক নাম না জানা সম্পর্ক আর ঘরে ফেরার টান দিয়ে বোনা এছবি।  নুর মুর্শিদাবাদ এর ছেলে প্রেমে পড়ে ছটফটে মেয়ে রিয়ার । নুর নিরীহ সুবোধ বালক যে লেদ কারখানাতে কাজ করে আর রিয়া খুব ছটফটে স্মার্ট নার্স । সারা ছবি জুড়ে অদ্ভুত তাদের বিচরন । নুর এর ওপর রিয়া এক এর পর এক প্রেম এর অত্যাচার করতে থাকে বাদ যায় না কিছুই , সে রিয়ার পুলিস অফিসার বাবা হোক বা ছ’বছরের অপছন্দের ছেলেকে দিয়ে মার খাওয়ানো । এখানেই পরিচালক আসল খেলা টা খেলেন নুর এক রক্ত মাংসের মাসে ছ’হাজার টাকা উপার্জন করা লোক সে কিছুতেই সুপার হিরো হয়ে ওঠে না । সে মারামারি করতে পারে না , মদ খেতে পারে না, বান্ধবী কে জড়িয়ে ধরতে পারে না , এমন কি ঠিক ভাবে প্রপোজ ও করতে পারে না তবু সে একটা জিনিষ পারে “ ভালোবাসতে”। আপনার আমার মত মানুষ যে শুধু ভালবেসে যেতে পারে নাই বা থাকল সেখানে শহুরে চালাকি । মালদা পর্বের এই অংশে রাজ যে মালদা কে তার চোখে ধরেছেন টা কিন্তু বাংলা ছবি থেকে বহু বছর আগে হারিয়ে গেছে । অসামান্য সেই পুরনো ইটের শহর এখানে খুব জীবন্ত , কাশ ফুল , আর ধান খেত আর জল ভর্তি ঝিল।
   

বাস দুর্ঘটনা দিয়ে শুরু হওয়া ছবি আসলে আমাদের প্রেমের সফর করাতে থাকে ছবি জুড়ে যেখানে আমরা পরিচিত হই বালুরঘাটের এক মেয়ের সাথে যে প্রথম বার কলকাতায় এসে পথ চিনতে সাহায্য নেয় কোলকাতার এক ছেলের থেকে সে পথ চলা একেবারে কোলকাতার যেখানে জীবন্ত ধর্মতলা থেকে সেক্টর ফাইভ সব খুব প্রতিদিনের মত করেয় ধরা দেয়।  আমরা চিনতে পারি ছবির শেষে গিয়ে মেয়েটি জয়ী আর ছেলেটি অভীক। যে পথ হারানোতে তাদের প্রথম পরিচয় সে পথ তাদের আবার মিলিয়ে দিল এক মৃত্যু আবর্তে। প্রত্যেক চরিত্র আমাদের ভাষা তে কথা বলে বলেই জয়ী বলে উঠতে পারে “গালে কাটা দাগওয়ালা ছেলেটি কোলকাতার হলেও ভালো ছেলে , প্রথমে বিশ্বাস হচ্ছিল না এখন তো বেশ ভরসা হচ্ছে , কখনো বালুরঘাট এলে আমাদের বাড়িতে আসবেন কিন্তু” বা রিয়া বলতেই পারে “ তুমি তো আমার চেনা কেউ না তাই রক্ত পরীক্ষা করে দেখে নিলাম তোমার এইডস আছে কিনা”


ছবির শেষ টা বলা উচিত হবে না তবে “বোঝে না সে বোঝে না” গানটি যদি ছবির অনুভূতির প্রমান হয় তবে “ না রে না” কিন্তু পরিচালক এর ম্যাজিক, ক্রমশ সংক্রমিত হচ্ছে এই পিকনিক মরসুমে। আর যান্ত্রিক সুবিধা যে শুধু মাত্র হিরোগিরীতে ব্যবহার এর ভুল ধারনা ভেঙে দিলেন পরিচালক বাস এক্সিডেন্ট এর দৃশ্যে। শেষ তিন বছরে এতো শক্তিশালী এক্সিডেন্ট এর চিত্রগ্রহন বাংলা ছবিতে হয়নি। পুরো ছবি দিনের আলতে সুট হয়েছে তাই ছবি জুড়ে আলো এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে চলে ফ্রেম থেকে ফ্রেমে ।আর ছবি শেষের পর এমনিতেই গুন করে ওঠে

         
“ এটা গল্প হলেও পারত ,
একটা আধটা পড়তাম,
খুব লুকিয়ে বাঁচিয়ে রাখতাম তাকে;
            
জানি আবার আসবে কালকে,
নিয়ে পালকি পালকি ভাবনা,
ফের চলে যাবে করে একলা আমাকে।”


মিলে যেতে থাকে আমাদের অনেক অনেক না বোঝা কথা। বুজতে পারি কেন আদিত্যর প্রোফাইল পিকচারে কেউ লিখে ফেলে “ আবার সেই পচা জামাটা পরেছে” কেন আমদের প্রিয় শিক্ষক তার শতছিন্ন ফোন টা এখনও বাদ দিয়ে স্মার্ট ফোন কেনেন না। বুজতে পারি কেন স্বর্নাঙ্ক গঙ্গার দিকে তাকিয়ে উদাস হয়ে বলতে পারে “ ভালবাসা আসলে অনুভুতি যাকে আতর এর মত অনুভব করতে হয়” কেন চুল বড় রাখা সুভঙ্কর এক আকাশ বৃষ্টি মাথায় উন্মাদ এর মত মেট্রো স্টেশনের দিকে ছুটে গিয়েও না ঢুকে ফিরে ঠায় দাড়িয়ে থাকে। কেন আয়ত চোখের জিনিয়া আমাকে মেরে , খিমচি কেটে , শাসন করে , খিস্তি করার পর ,বলে “আজ তোকে টাকা দিতে হবে না আমি খাওয়াচ্ছি” , কেন গভীর রাতে এসএমএস করে বলে “আজ আবার তুই অন্য মেয়েকে ফিল্ম মুভমেন্ট বুঝিয়েছিস? তোকে নিয়ে আর পারি না মৌন” ছবিটি শেষ হয়েও শেষ হয় না চলতে থাকে এভাবেই।


    
বিদেশে গান বা ছবি বানানোর অষ্টমী চলছে এখন বাংলা ছবিতে। সেখানে রাজ চক্রবর্তী ভীষণ সফল ভাবে ধরেছেন মালাদা শহর কে , তার ঐতিহ্যকে, ইমারতকে আসলে এছবি যে শুধু প্রেমের নয় । এতো হালি শহর থেকে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে কোলকাতাতে পাড়ি দেওয়া এক মানুষের ছাপ , ছবি বানানোর লক্ষে যার দিনের পর দিন একটা মেস বাড়িতে বাকি অভিনেতা বন্ধুদের সাথে ঠেসে থাকা। ফলে সেই মানুষ যখন ছবি বানান তাতে গ্রাম বাংলা থাকবেই, নুর ,রিয়া , জয়ী , অভিক এর মত খুব সাধারন অনুভুতি প্রবন রক্ত মাংসের মানুষ রা জীবন্ত হয়ে উঠবেন। আসলে মফস্বল এর মানুষদের যে বন্ধুত্বের কোনও পর্ব নেই , কোনও জাত নেই , ক্যাবলা বা বুদ্ধিমান এর মত ফারাক নেই আসলে বন্ধুত্বে যে এসব হয়না। ধন্যবাদ রাজ চক্রবর্তী কে এমন ছবির জন্য , এছবি যে আমার মত অনেক ছেলেকে সাহশী করে তোলে যারা ভোরের ট্রেন ধরে ছবি বানানোর স্বপ্ন নিয়ে কোলকাতা আসে আর দিনের শেষে সব হাউস ঘুরে কাজ না পেয়ে গভীর রাতের ট্রেনে খিদে পেটে বাড়ি ফেরে, কাল আবার এই ভাবতে ভাবতে।
     

 পরিচালক- রাজ চক্রবর্তী
প্রযোজনা- শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্ম
অভিনয়ে- সোহম, মিমি চক্রবর্তী, আবীর চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার , 
যুধাজিৎ ব্যানার্জি   প্রমুখ