সোমবার, ৭ জানুয়ারী, ২০১৩


দাবাং-২



হেয়ার স্কুল এর সামনের ফুট পথে যে ঘুঘনি পাওয়া আমরা নাক মুছতে মুছতে জিভে শব্দ করে খাই বা বিবেকানন্দ পার্কের ফুচকাতে কোনও বিশেষ খাদ্যগুণ আছে এমনটা কিন্তু আমার জানা নেই। তবুও শুধু স্বাদ এর আকর্ষণে পেট খারাপের ঝুকি নিয়েও বিকেল হলেই মন ছুটে যাই সেদিকে। স্বাদ এর কথা যখন এলো তখন বলি এবছরের বাণিজ্যিক হিন্দি ছবির সেরা রাধুনি সলমান খান এর সেরা ডিশ কিন্তু “ দাবাং-২” । স্বাদে , গন্ধে, রূপে এক দারুন সংমিশ্রণ অকারনে সিনেমাটিক ভিউ খুজতে গিয়ে ফিল্ম স্টাডিজ এর ছাত্রদের মত খুত না ধরেলে কিন্তু এক উপভোগ্য ছবি। খুব সাধারন একটা  গল্প কিভাবে মশলা দিয়ে সুস্বাদু করতে হয় তার নিদর্শন।


চুলবুল পাণ্ডে এখন বদলি হয়ে কানপুর এসেছেন, পরিবার নিয়ে , মানে বাবা, ভাই, স্ত্রী সবাই কে নিয়ে। এখানেই তিনি ঠিক করে দেন দাবাং যদি ঘর ভাঙার কথা হয়, তবে দাবাং-২ সবাইকে নিয়ে ঘর বাধার গল্প। বাবা প্রজাপতি বা ভাই মাখন বা স্ত্রী সকলের মধ্যে সেই একসাথে থাকার সুখি ছবি স্পষ্ট। ফলে আগের ছবির বাবা ছেলে বা ভাই-ভাই লড়াই এখানে নেই, তাহলে দাবাং-২ মারামারি নেই? আল্ বাত আছে এখানে ছেদি শিং নেই তাতে কি হয়েছে বাচ্চা ভাইয়া তো আছেন তবে তার সাথে পুলিশ চুলবুলের লড়াই কিন্তু সারা ছবি জুড়ে নয়। কানপুরে বরং তিনি অনেক ছোটো ছোটো দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন করেন তা মেয়ের বিয়েতে বাধা দেওয়া গুন্ডা কে মেরে হোক বা বয়স্ক মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করা পুলিশ কনেস্টেবল কে “ বাবার সাথে এই ভাবে কথা বল নাকি?” এই ভাবে ধমকে হোক। ফলে সারা ছবি জুড়ে এক বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা দেওয়া পুলিশ কে দেখি। দাবাং এর তুলনাতে মারামারি অনেক কম করেছেন ঠিক কিন্তু যে টুকু করেছেন তা কিন্তু টেকনিক্যালি ভয়ানক শক্তিশালী যেমন এক ঘুষিতে গুণ্ডাদের ক্যামম্বিস বলের মত বাউন্স করিয়ে দিতে পারেন বা এক লাথিতে রোলারের মত গড়িয়ে দিতে পারেন ।




এই চুলবুল ঘরে ফিরলে অন্যরকম স্ত্রীর সাথে খুনসুটি করেন , যা দেখে বিবাহিতা নারীদের ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া স্বামীদের ওপর যথেষ্ট রাগ হতেই পারে। আবার বাবার সাথে ছাদে পাশাপাশি শুয়ে ফেলে আসা অতীতের গল্প শোনার জন্য বায়না করতে পারেন। মৃত মা এর ছবির সামনে দাড়িয়ে ছবির সাথে কথা বলতে পারেন। আবার ভাই মাখন এর অল্পবুদ্ধি নিয়ে মজা করতে পারেন। কিন্তু  জামা খোলা সলমান এতো সংসারি হয়ে গেলে “ঝান্ডুবাম খ্যাত” মুন্নিদের কি হবে ? অবশ্যই কিছু হবে আর হবে বলেই তিনি করিনার সরু কোমর এর জাদু দিয়ে “ফেভিকল” আটকেছেন, আমাদের জন্য নিজে আইটেম নেচেছেন। গরম মালাইকা কে পর্দাতে এনেছেন দারুন ভাবে।


ছবির সেরা অংশ সন্তানসম্ভবা স্ত্রী কে নিয়ে আর বড় পরিবার গড়ার প্রস্তুতি চলাকালীন বাচ্চা ভাইয়ার অত্যাচারে  সন্তান- ভ্রুন নষ্ট হয়ে গেলে প্রতিশোধকামী স্বামী হিসাবে পুলিশ চুলবুল এবং সন্তান হারার যন্ত্রণা ক্লিষ্ট নারী হিসাবে তার স্ত্রীর বাকরুদ্ধ মুহূর্তে প্রতিশোধ এর প্রতিজ্ঞার জন্ম দেওয়া দৃশ্য, ছবির ক্লাইমাক্স এর জন্ম দেয়। এরপর আমরা বহু প্রতীক্ষিত নায়ক কে দেখি।


কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন উঠে আসে কেন সারা ছবি জুড়ে এতো মুখমুখি লড়ায় এর সম্ভবনা থাকা সত্তেও , বাচ্চা ভাইয়া আর চুলবুল কে মাত্র একবার সামনাসামনি লড়তে দেখি ছবির শেষে আসলে। এখানে আমার ব্যাক্তিগত একটা মনে হওয়া আছে বাচ্চা ভাইয়ার চরিত্রে অভিনয় করা প্রকাশ রাজ এর আগের হিট ছবি “সিঙ্ঘম” এর সাথে এই ছবির চরিত্রটা এক হয়ে যাক এটা বোধ হয় চান নি পরিচালক বা সলমান নিজে।


ফলে এক নতুন সম্ভবনা তৈরি হয় ছবির শেষে গিয়ে , যেখান থেকে খুব সম্ভবত দাবাং-৩ হবে। কি সেই সম্ভবনা তা বললে তো সব বলা হয়ে গেল বরং নিজে এই ছবি দেখুন বুঝতে পারবেন নিজেই।


দাবাং এর পরিচালক ছিলেন অনুভব কাশ্যপ এখানে তিনি অনুপস্থিত তার জায়গা সামলেছেন আরবাজখান। ফলে কিছু ফাঁকফোকর থাকা টা স্বাভাবিক এবং ছিলও কিন্তু ব্র্যান্ড চুলবুল তার নিজের সাত রঙের ঝলকানিতে তা ঢাকার চেষ্টা করেছেন খুব করে। সে মারামারির দৃশ্যে ক্রেন এর ওপরের ক্যামেরাকে হাতের ইসারাতে নিচে ডেকে হোক বা উত্তরপ্রদেশ , বিহারের এর দর্শক দের কথা মাথায় রেখে একাধিক আইটেম নম্বর রেখে হোক, বা মাহিগিল এর মত সুন্দরী কে খুব ছোট্ট অংশে পর্দাতে এনে হোক বা সাজিদ- ওয়াজিদ এর মিউজিক দিয়ে হোক , বা প্রকাশ রাজ এর হাড়হিম করা চাহনি দিয়ে হোক। আসল কথা সলমান হলেন সেই পাক্কা রাধুনি যিনি সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না করতে এবং খুব তাড়াতাড়ি বেচতে পারেন। যে কারনে প্রথম চারদিনে ছবির বিক্রি ১০০ কোটি পেরিয়ে যেতে পারে নিশ্চিন্তে।  তবে ফিল্মবোদ্ধা দের আশঙ্কা “ যে পরিমান অ্যাকসান–কমেডি গোছের ছবি হচ্ছে তাতে দর্শক খুব তাড়াতাড়ি স্বাদ বদল করার জন্য অন্য কিছু খুজে নেবে না তো?”  ফ্রেম চলতে থাক বক্স অফিস এর উত্তর নিশ্চয় দেবে।




ভিনয় : সলমন খান, সোনাক্ষি সিংহ, প্রকাশ রাজ,
করিনা কপূর, বিনোদ খন্না, আরবাজ খান, মাহি গিল প্রমুখ পরিচালনা : আরবাজ খান
প্রযোজনা : আরবাজ খান ও মালাইকা অরোরা খান

সঙ্গীত : সাজিদ-ওয়াজিদ
সিনেম্যাটোগ্রাফি : অসীম মিশ্র

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন