রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৩



                      দু মুঠো লাল আবীরে রঙিন হয় দৃশ্য
                             ঠোঁট থেকে ঠোঁটে।
                             


ভালোবাসতে তো সবাই পারে কিন্তু তুমি যেভাবে চাও সেভাবে কজন ভালোবাসতে পারে?  প্রেমিকের অভাব তোমার নেই কৃষ্ণকলি কিন্তু কেন বার বার নিজেকে সমর্পণ কর খুব সাধারন একটা মানুষের কাছে? তুমি উত্তরে চোখ দিয়ে ইশারা করেছিলে। ঠিক যে কারনে লীলা বার বার রামের বাহুজোড়ে আশ্রয় পেতে চায়। কিন্তু রাম তো যুদ্ধ করতে পারে না। সে শুধু ভালবাসতে পারে। বন্দুকবিক্রি করা মহল্লার একমাত্র মানুষ যে বিশ্বাস করে “প্রেমে” । অনেকদিন পর সঞ্জয় লীলা বনশালীর একটা রঙিন ছবি  সুরু হয় “রামলীলা” যে ছবির ট্যাগ লাইন “ গোলি মারো তো পাঙ্গা আখ মারো তো পেয়ার” ।


পাশাপাশি দুই পাড়া , পরস্পর বিরোধী যুযুধান দু’পরিবার যাদের ব্যবসা বন্দুক, ড্রাগ , স্মাগ্লিং । এক পরিবারের ছেলে রাম, মহল্লার হিরো প্রত্যেক মেয়ে তার জন্য পাগল। অন্য পরিবারের সুন্দরী লীলা তার রুপে মুগ্ধ গোটা পুরুষকূল এই ফরমুলা তো হিন্দি ছবিতে চিরকালের । তাদের দেখা , চোখে চোখ দিয়ে ইশারা করা সব কিছু তো নিয়ম মেনেই হয়। কিন্তু আমদের কাছে অন্যরকম লাগে শিল্প নির্দেশক ওয়াসিক খানের জাদুতে। হোলির দিনে তাদের “প্রথম দেখা” সব ছেলেরা নীল আবির মাখা আর মেয়েরা লাল আবিরে যেন একদল কৃষ্ণের সাথে একদল সখী। তাদের মাঝে কামুক দৃষ্টি নিয়ে পুরুষালী চেহারার রাম রূপী রনবীর ও লীলা রূপী দীপিকা। দু মুঠো লাল আবীরে রঙিন হয় দৃশ্য ঠোঁট থেকে ঠোঁটে। কবিতা লিখতে সুরু করেন পরিচালক যৌবনের কবিতা, প্রেমের কবিতা।


কিন্তু এই বিরাট রুপকথার মত সেট, ভিন্ন ভিন্ন টেম্পারেচারের আলোতে ভীষণ পরিশ্রম করে সুট করতে হয় চিত্রগ্রাহকদের এখানে সেটাও রবি ভার্মা করেছেন। তবুও গল্পটাকে কেন এভাবে গলা টিপে খুন করেন সঞ্জয় ? ছবির চল্লিশ মিনিটে প্রথম খুন সুরু হয় তার পর সারা ছবি জুড়ে প্রচুর খুন আর গোলাগুলি চলতে থাকে বড্ড রদ্দি মনে হয় এই “ লাভ অ্যান্ড ব্লাড” থিমকে । কেন পালিয়ে যেতে হয় রাম-লীলা কে? কেন ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত বার বার “হাম দিল দে চুকে সানামে”র ঐশ্বর্য কে ফেরত আসতে হয় লীলার একাকি দৃশ্যে ? কেন সেই একই “পরিবারতন্ত্র ও প্রেমের মৃত্যু” সংক্রান্ত গুল্প দেখি? লীলা ও রামের নতুন ঘর খোজা , তাদের ঘর ভাঙ্গা পরিবারের চক্রান্ত দেখতে দেখতে “ইসকজাদে” ছবির কথা খুব করে মনে পড়বেই।






এই সঞ্জয় কে তো আমি চিনিনা, বরং দু তিনটি আউট ডোর ফ্রেমে ওয়াড অ্যাঙ্গেল লেন্স এ মরুভূমি ও আকাশের মাঝে পিপাসার্ত ঘর খোজা প্রেমিক-জুগলকে দেখে মনে হয় এটা ওনার কাজ। ইনডোর সেট এঁর রঙের বৈচিত্রের মধ্যে পর্দা ওড়া ঘরে লীলার “অঙ্গ লাগা দে রে মোহে রঙ্গ লাগা দে রে” গানটির দৃশ্যে মনে হয় এটা সঞ্জয়ের ঘরানা।


কিন্তু উত্তরহীন এল-ডোরাডোর  মত প্রেম , চেনা গল্প তো এই পরিচালক কখনো বলেন না। সঞ্জয় তো চিত্রকার যে নতুন নতুন রঙের ছবি করেন, আমাদের কে নতুন প্রেমের কবিতা বলেন, প্রেমে কি? ঠিক কি ভুল সেই দর্শন যার ছবিতে থাকে সেই মানুষটা ২০১৩ তে এসে বাজার চলতি “ উদ্যম প্রেম ও সমাজের চাপে হিন্দি বলয় ভিত্তিক যুগল মৃত্যু” জ্বরে আক্রান্ত? নাকি এই ঘরানার ছবির বাণিজ্যিক দিক থেকে সাফল্যের হার বেশী ?


কয়েক দিন আগে পরিচালক বলছিলেন “ সাওরিয়া ও গুজারিশ সেই ভাবে চলেনি , আমি দীপাবলি রাত ঘরে বসে একা কাটিয়েছি আর সারা শহর জুড়ে আতসবাজির আলো দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা রঙিন ছবি করব” 
সেই অর্থে
“ বুলেট ভি এক হে, এক-ই হে জান
 হর বুলেট পে লিখহা হে মরণে বালো কি নাম”
সব দিক থেকেই রঙিন ছবি। কিন্তু এত রঙের মাঝে কি কোথাও সঞ্জয় তার নিজের কাটা গণ্ডিতে আটকে আছেন?


রনবীর ও দীপিকা অভিনয়টা করেছেন মন ও শরীর দিয়েই, সুপ্রিয়া পাঠক এঁর মত একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীর পাশে দীপিকা যত বার আসেন সেই চিরাচরিত দুটো পরস্পর বিরধি স্রোতে ভেসে যেতে থাকে ফ্রেমে ভালোবাসা না হিংস্রতা , খুন না আশ্রয় এই মুহুর্ত গুলতে সিদ্ধার্থ এবং গরিমার সাথে সঞ্জয়ের নিজের লেখা কিছু সংলাপ সিনেমা শেষ হওয়ার পরেও মুখে মুখে ঘোরে। যতেচ্ছ গানের ব্যবহারে ছবিটি অতি দীর্ঘ লাগে এবং এই অবান্তর মেদ কিছুতেই অতি সুন্দর  সেট আর অসাধারন রঙিন ক্যামেরার ফ্রেম কাটতে পারে না।  তবুও রঙিন আলোর লেন্স ফ্লেয়ার আর আবির ওড়া  প্রেমে দর্শক সম্মোহিত হয়। ১৯৯৮ সালের একটা প্রতিভাধর ছেলে ওয়াসিক খান “দিল সে” ছবির সহকারী আর্ট ডিরেক্টর আজ   ২০১৩ তে এসে “রাম-লীলা” তে একজন সম্পূর্ণ শিল্পী । এই ছবিতে সেট তৃতীয় চরিত্র হয়ে উঠেছে পরিচালক যদি সেই ভরসাতেও ছবি থেকে অবান্তর গোলাগুলি , গান বাদ দিয়ে একটা উত্তরণের প্রেমের গল্প বলতেন, যদি রাম সত্যি দায়িত্ব নিয়ে সাম্রাজ্য চালাতেন , যে রাম কে বন্দুক নয় প্রেমে বধ করেন লীলা। সেই লীলা যদি তার চারপাশের ছোট ছোট রাবণদের বধ করতেন তবে দশরাটা অন্যরকম হত। প্রেম বেচে থাকত । রামলীলা উত্তর খুজে পেত প্রেমের পথেই। সঞ্জয় লীলা এটা বোঝেন নি আমি বিশ্বাস করিনা। হয়ত বাজারের কথা ভেবে এই উত্তর মেলাতে চান নি।



পরের কোনও ছবির অপেক্ষায় থাকলাম যেখানে আর অনেক কবিতা থাকবে আর থাকবে উত্তর। সঞ্জয় লীলা বনশালী আপনাকে যে বড় ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি । প্রায় একা একটা অন্ধকার হলে বসে “সাওরিয়া ও গুজারিশ” দেখেছি, মানুষ ছবি দুটো নিতে পারেনি কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু আপনাকে নিয়ে আলোচনা বন্ধ করিনি । জানি আপনি ফিরে আসবেন নতুন আঙ্গিকে নতুন রঙে , নতুন প্রেমে। ভালো থাকবেন ।  



পরিচালকঃ সঞ্জয় লীলা বনশালী
চিত্রগ্রাহকঃ  রবি ভার্মা
সঙ্গীতঃসঞ্জয় লীলা বনশালী 
আর্ট ডিরেক্টরঃ ওয়াসিক খান
অভিনয়ঃ রনবীর ও দীপিকা



                                             কৃতজ্ঞতাঃ অনসূয়া। 
                                             লেখাঃ মৌন। 

1 টি মন্তব্য:

  1. মৌন ছবিটা দেখিনি অথবা দেখার মত অবস্থায় পাইনি ছবিটি এখনো, তবে দেখার আগে যিনি দেখেছেন তার অবস্থান থেকে একটা কথা বলছি....‘ছবিটা আমার ভাল লাগেনি তবে সারা ছবি জুড়ে শুধু দিপিকাকে দেখেছি, সঞ্চয় একটা জিনিসই রামলীলাতে দেখিয়েছে।’...সঞ্চয় লীলা বানসালীর ছবি আমি যতগুলো দেখেছি আমার অবস্থানে সেগুলোর সবগুলোই অযাচিত সেটের বাহুল্য ছাড়া আর কিছু না... শুধু আগুন থাকলেই রান্না হয় না, শুধু তরকারী থাকলেই রান্না হয় না.. তাতে মশলাও দিতে হয়।

    উত্তরমুছুন