বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩

একটা কুড়িয়ে পাওয়া চিরকূট


একটা কুড়িয়ে পাওয়া চিরকূট...
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দরজায় কে যেন এসে কড়া নাড়লো। একবার...দুবার...তিনবার। ঘুম চোখে উঠে দরজা খুলে দেখি হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক। আমার দিকে তাকিয়ে। আমি কিছু বলার আগেই নমস্কার করে বললো “ আমাকে আপনি চিনবেন না। খুব দুঃখিত এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য। আমার নাম হিমু। একটু ঘুরে আসবেন নাকি শাহবাগ থেকে? হাঁটতে কোনো অসুবিধে হবে না তো?” কিছু বলার সুযোগ দিল না লোকটা। আমার দিকে একটা চাদর এগিয়ে দিয়ে বললো “পরে নিন। ঠান্ডা তেমন নেই...তবে।” রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। মোড়ে মোড়ে থমথমে বিষণ্ণতা।
আপনাকে খুব চেনা লাগে। আপনাকে কোথায়...?
“দেখেননি...। কী করে দেখবেন? হিমালয়কে সচারচর দেখা যায় নাকি?”
শাহবাগের মোড়ে আলোর রোশনাই। শাহবাগের মোড়ে চিৎকার। “রাজাকারের ফাঁসি চাই।”
একটু এগিয়ে গিয়ে হিমু দাঁড়িয়ে পড়ে। রাস্তার মাঝে সাদা পর্দা টাঙিয়ে একটা ছবি দেখানো হচ্ছে। সামনে বসে আছে কিছু মানুষ। স্লোগান...
জানেন...এই ছবিটা আমার চেনা।




ভদ্রলোক হাসে। শীতের হাওয়ায় চাদর উড়ছে। “মুক্তির গান। আপনারা ক্লাসে দেখতেন। একটা লেখা লিখেছিলেন...। মনে আছে?”
আপনাকে আমি কোথায় যেন একটা...
“দেখেননি...কী করে দেখবেন? আমি ওই ভিড়টায় মিশে থাকি।”
রাস্তার পাশে তরুণদের মিছিল। রাস্তার পাশে বড় ফেস্টুনে লেখা এগিয়ে আসছে ‘বিজয় উৎসব...।’
কিন্তু আমি আপনাকে...
লোকটা ঘুরে তাকায় আমার দিকে।
“কেমন একটা হাস্যকর পরিস্থিতি না ভাই? আমাদের দুই দেশের? আপনাদের মহান আইন ভালবাসাকে ক্রাইম বলে। আর আমাদের দেশ...। না থাক...আপনার এ্যারেস্ট হবার ভয় আছে।”
আমি থমকে দাঁড়াই।
“বাড়ির সামনেটা পৌঁছে গেলে আমাকে একটা মিসড কল দেবেন। আমি বেকার কিনা। মোবাইলে টাকা ভরার টাকা নাই...। ও ভালো কথা...আমার নাম আসলে হিমু নয়...আমি আসলে ছিদাম...আবার ঠিক ছিদামও নয়...আমি আসলে মানুষ...। যে মানুষের মৃত্যু মিছিল আপনি ইতিহাসের বইতে পড়েছেন...। জানি লেটার মার্ক্স ছিল মাধ্যমিকে আপনার।”
**** চিরকূটটা এখানেই শেষ। লেখকের নাম জানি না। ঘটি গরম কেনার সময় হয়তো কেউ ফেলে গেছে নোংরা কাগজ হিসেবে। কিম্বা ফেলেনি...ইচ্ছে করে রেখে গেছে কেউ পড়বে বলে।*****

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন