রবিবার, ৭ অক্টোবর, ২০১২


দিস ইজ ক্রিকেট


ভারতে ক্রিকেট একটা ধর্ম, যে ধর্মের দীক্ষিত লক্ষ লক্ষ মানুষ। কাইও ( ঋত্বিক/ রিতভিক সোরে ) তাদের একজন মুম্বাই তে থাকে বাবা আর ঠাকুরদা’র সাথে।এই বালকের সফর জুড়ে ছবি “ফেরারি কা সওারি”।


এ ছবি আসলে ক্রিকেটার এর ছবির থেকেও অনেক বেশী সাদা পোশাকের খেলাটার সততার ছবি। যে বার্তা “ যো দেখেগা ওই সিখেগা” বক্তব্যের মাধ্যমে ঘুরপাক খেতে থাকে সারা ছবি জুড়ে । ফলে ছবি শুরুর ২০ মিনিট পর থেকেও মানুষ হিসাবে আমাদের কেও প্রশ্নের মুখে দাড়াতে হয় আপোষ আর সততার। এছবি নিজের গতিতে ক্রিকেট কে কেন্দ্রে রেখে কখনো রাজনীতির মুখোশ কে আক্রমন করে তো কখনো আর্থসামাজিক ব্যবস্থা কে। এক স্কুলে পড়া বাচ্চার উত্তরণের ছবি হিসাবে আমাদের আবেগ শুষে নিয়ে ক্রিকেটীয় মহান ছবি হওয়ার সস্তা পথ ছেড়ে দিয়ে ছবি বিস্তার হল কখনো বাবা-ছেলের সম্পর্কে , যে সম্পর্ক শেষে গিয়ে রাজনীতির রং ধরে দেখাল সত্য কতটা জরুরি। বা কখনো পুলিশ –সাধারন মানুষ বা কখনো খেলোয়াড় এর নিজস্ব সব প্রতিবন্ধকতাতে।





কাইওর বাবা রুস্তম (সরমন যোশী) এক জন সাধারন সরকারি কর্মী , এ ছবি তো তারও পরীক্ষার , ছেলের স্বপ্ন পুরনে ছুটে বেড়ানো বাবা । যে বাবার হাত ধরে ছেলে ক্রিকেট মাঠে এবং মাঠের বাইরে সৎ হতে শেখে, সেই বাবা অবস্থার চাপে পড়ে অন্য রাস্তায় হাঁটতে চাইলে বদলে যেতে থাকে ছবির ভাষা এখানেই এক নতুন ন্যারেটিভের জন্ম দেন পরিচালক রাজেশ মাপ্সুকার । এ ছবি জুড়ে ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর এর বেড়ে ওঠার যে কাহিনী এতো দিন আমরা কাগজে পড়েছি তা এখানে স্পষ্ট তাই ছবি কিছুতেই সচিন এর ছায়া থেকে বেরতে পারে না ফলে বাধ্য হয়ে পরিচালক কে ম্যাজিক রিয়েলিসিম এর আস্রয় নিতে হয় । আর আমাকে আকর্ষণ করে স্টিল ছবির মাধ্যমে অতীত এর গল্প বলার পদ্ধুতি।



রাজ কুমার হিরানি এ ছবির ডায়ালগ লিখেছেন তাঁর আগের ছবির মত সব পাঞ্চ লাইন না হলেই বেশ কিছু সামাজিক বার্তা তিনি ছবির মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পেরেছেন , তাই এ ছবি প্রমান করে যে আপোষ নয় পরিস্রম, প্রস্তুতি,  লড়াই আর সততা একমাত্র রাস্তা , যে রাস্তা সফল হতে গেলে প্রত্যেক কে পেরোতেই হবে।



অভিনয় এর জন্য বোমান ইরানি এ ছবির একটা অংশ , দাদুর চরিত্রে তিনি  অসুস্থ স্তবির কখনো রাগী , অভিমানি , আবেগ প্রবন , একজন রুক্ষ বিরোধী খিট খিটে মানুষ থেকে ছবির শেষের দায়িত্বশীল অভিভাবক হয়ে ওঠা পুরটাই অসাধারন।






কাইও না হই লড়াকু বাবা দাদু পেয়ে লড়তে শিখল, কিন্তু ক্রিকেটের এ দেশে হাজার হাজার  কাইও যে আজও ফুটে ওঠার আগেই ঝরে যায়, তাদের জন্য এ ছবি কি আশার আলো হয়ে থাকবে? আমরা কি শিখব কাইওর বাবার মত সমাজের কথা ভেবে সৎ থাকতে ? রাজনীতির মুখোশ খুলে কবে সাদা আর কাল চিন্তে শিখব ? কবে দৃষ্টি এতো সাফ হবে যে আর ভাঙ্গা চশমা দরকার হবে না? এমন বেশ কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে শেষ হয় “ফেরারি কা সওারি”।


আপনিও দেখুন এই উত্তর খুজতে নয় , এই সব দ্রুত গতির  প্রশ্নের সামনে ব্যাট হাতে আপনার দাঁড়ানোর সাহস আছে কিনা মেপে নিতে? নইলে ক্রিকেট যে আর জেন্টেল ম্যান্স গেম থাকবে না।  





পরিচালকঃ রাজেশ মাপ্সুকার । অভিনয়ঃ বোমান ইরানি , সরমন যোশী , ঋত্বিক/ রিতভিক সোরে। মিউজিকঃ প্রীতম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন