প্রেমের গন্ধে ব্রুনি
প্রিয় রং , প্রিয় মানুষ, প্রিয় অনুভুতি,
প্রিয় মুহূর্ত ছবিতে ধরে রাখে তো সবাই কিন্তু এই প্রিয়দের গন্ধ কিছুতেই আমাদের
কাছে থাকে না।প্রিয় বন্ধুর মৃত দেহে রাখা
গোলাপের গন্ধে সেই যে খারাপ লেগেছিল আজ সেই খারাপ লাগা ছেড়ে গেলনা বলেই, গোলাপের
গন্ধ আজও আমার ভীষণ অপ্রিয়। সরস্বতী পুজর দিন তোর হাত বেয়ে আসা গন্ধ আজও আমাকে
হাঁটিয়েই চলেছে তুই পেরিয়ে আর দুরে। এই ভালবাসা বা এই খারাপ লাগা সব গন্ধ ধরে
রাখতে পারলে অন্যরকম হত আমাদের চলা । গন্ধ এক অদ্ভুত আবেগ যার থেকে কিছুতেই দুরে
থাকা সম্ভব নয়।
১৭০০ শতকের প্যারিস এর প্যাত্রিক সউকিন্দ এর গল্প তো এই গন্ধে আবর্তিত হয়
২০০৬ এর টম টোয়াইক এর ছবি “পারফিউম” এর মধ্যেI
হঠাৎ পাওয়া লেবুর গন্ধের উৎস এক সুন্দরী
নারী হাতের অদ্ভুত গন্ধের পিছু নিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করা ছেলের জন্ম মাছ বাজারের
নোংরার স্তুপে, অনাথ আস্রমে বেড়ে ওঠা শিশু কথা বলতে পারে না কিন্তু শুধু মাত্র
গন্ধ শুঁকে সে আলাদা আলাদা ভাবে বুঝতে পারে মানুষ, গাছ , রাস্তা , পাথর । ১৩ বছর
বয়েসে এক ট্যানারি মালিকের কাছে বিক্রি হয়ে “জন ব্যাপ্টিস্ট ব্রুনি” দিনে ১৬ ঘণ্টা
কাজ করা ক্রীতদাসে পরিনত হলেও তাঁর গন্ধ শোঁকার যে আলাদা ক্ষমতা আছে তা ভালো ভাবে
বুজতে পারে যখন সে আবিষ্কার করে যে , তাঁর নিজের কোনও গন্ধ নেই । মালিকের সাথে প্যারিস এসে এক বিরাট খোলা
পৃথিবীর খোজ পায় , রাস্তা , মানুষ , খাবার, সুগন্ধি , ঘোড়া, বাড়ি, পাচিল,নারী , পুরুষ, ফুল , ফল, এমন কি সুন্দরের ।
যে সুন্দর হাতের পিছু নিয়ে আবিষ্কার করে এক অপুরূপা নারী কে যার শরীরে এক
অদ্ভুত সম্মোহনী গন্ধ আছে , যে গন্ধের উৎস ব্রুনিকে জানতেই হবে কিন্তু যদি মুহূর্তকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের অবচেতনে
নিজের হাতেই দম আটকে মরে যায় সেই অচেনা নারী , তবে কি আমিও কি খুনি হব ?
আমিও তো গলা টিপে মেরেছি আমার ভালোবাসার
গন্ধকে কিন্তু তারপর আমি তো ব্রুনির মত পাগল হয়ে কখনো চেষ্টা করিনি সেই গন্ধ কে
নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখতে , হয়ত মাঝরাতে জেগে গেছি সেই অনুভূতিতে; কিন্তু কোনও
আতর শিল্পীর কাছে গিয়ে তো আব্দার করিনি যে আমার ভালোবাসার হারান গন্ধ বোতলে ভর্তি
করে দাও , আমি বাতাসে নিয়ে ঘুরব আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে।
জনপ্রিয় আতরে যে প্রেমের গন্ধ ব্রুনি
কিছুতেই খুজে পায়না , অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে সে “বাওদিনি” নামের এক বিখ্যাত
ইটালিয়ান আতর শিল্পীর সাথে কাজ করতে শুরু করে , এবং তাঁর গন্ধ শোঁকার বিশেষ ক্ষমতা
দিয়ে নতুন গন্ধ আবিষ্কার করে কিন্তু সে গন্ধে তাঁর নিজের প্রেম কিছুতেই খুজে পাওয়া
যাই না । বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চলতে থাকে , শহর জুড়ে চলতে থাকে এক এর পর এক খুন এবং
খুন হয়ে যাওয়া প্রত্যেকে নারী । ভর্তি হতে থাকে ব্রুনির আতর এর বোতল । নিরীহ প্রেমিক
ব্রুনি ক্রমশ হয়ে ওঠে এক ভয়ানক হিংস্র খুনি যে তাঁর প্রেমের গন্ধের আতর তৈরির
উপকরন হিসাবে শুধু মাত্র নারী শরীরের গন্ধ ব্যাবহার করতে যে কোনও নারীকে খুন করতে
পিছপা হয় না । বারবনিতা, ধনী মহিলা, মেশপালক, সুন্দরী ষোড়শী, চাষিস্ত্রী ; ব্রুনির
প্রেমের আতরের উপকরন যে এদের সকলের মৃত শরীর ।
প্রেমের ছবি ধীরে ধীরে নিশ্চিন্তে বদলে যেতে থাকে হিংস্রতায় , খুনের গন্ধে
ক্রমশ গা ঘিন ঘিন করে ওঠে কিন্তু আতর তো সংগীতের মত তিন ধাপের মস্তিষ্ক , হৃদয় আর
জীবন কে ছুঁয়ে যাই । প্রত্যেক একটা খুনের সাথে ব্রুনির বারোটি ছোটো শিশির এক একটা
পূর্ণ হতে থাকে আর ব্রুনি কে খুজতে সারা শহর জুড়ে প্রশাসনের তৎপরতা । ব্রুনি ছুটে
চলে নতুন নারী গন্ধের সাথে এক শহর থেকে আর এক শহরে । তাঁকে ধরার জন্য বিক্ষোভ শুরু
হয় তবুও খুন থামেনা । বারো শিশি আতর পূর্ণ হলে ব্রুনি ধরা পড়ে সেই এই বারোটি আলাদা
নারী শরীরের গন্ধ মিশিয়ে তাঁর প্রিয় নারীর প্রেমের গন্ধ সৃষ্টির মুহূর্তে ।
মিষ্টি প্রেমের গন্ধের খোঁজে যে ছবি শুরু
হয়েছিল সেই ছবির শেষ লগ্নে এসে আমিও এই ব্রুনি কে কিছু তেই মেনে নিতে পারছি না ,
কিন্তু এতক্ষণ তো আমি এই ছেলেকে সফল হতে দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন ছবিতে প্যারিস
এর সাধারন মানুষের সাথে আমিও ব্রুনির মৃত্যু চাইছি । তাহলে আমি প্রেমের গন্ধ ধরে
রাখতে পারিনি বলে আক্ষেপ করছিলাম সেই মানুষ তা কি মিথ্যা নাকি এই ব্রুনির সফর
মিথ্যা ?
ব্রুনির বিচারের দিন আসে । প্রবল উত্তেজিত
সাধারন মানুষের সামনে ব্রুনি কে আনা হয় হাতে ছোট্ট একটা শিশি নিয়ে । জল্লাদ এর সামনে
দাড়িয়ে একটা রুমালে দু ফোঁটা প্রেম ঢালে এবং আকাশে বাতাসে উড়িয়ে দেয় সে গন্ধ ,
মুহূর্তের মধ্যে আবেশ ছড়িয়ে পড়ে , প্রেম বন্ধনে আবদ্ধ হয় সারা শহর , জল্লাদ ,
বিচারক, খুন হওয়া নারীর স্বামী, পিতা । সে এক জাদু মুহূর্ত। ভালোবাসা ছড়িয়ে পড়ে
খুনের শহরে, যে হিংসার জন সাস্তির আয়োজন হয়েছিল সেই স্থানে শুধু প্রেম ছড়িয়ে
ব্রুনি শহর ছাড়ে ফিরে আসে নিজের জন্ম স্থান সেই মাছ বাজারে । নিজের মাথাতে ফোঁটা
ফোঁটা প্রেম ঢালে , আলোকিত হয় ।মানুষ এক অজানা আকর্ষণে ছুটে আসে ব্রুনি আবার
প্রেমিক হয়ে ওঠে , আমি শিউরে উঠি একি করল ব্রুনি ওর ছোট্ট শিশি ভর্তি যে প্রেম ছিল
তা দিয়ে তো বিশ্বকে দাস করা সম্ভব , হিংস্রতা বন্ধ করা যেতো , প্রেমের নেশা তে বুদ
করে রাখা যেতো নারী , পুরুষ কে। আমার ভাবনা শেষের আগেই ব্রুনি শরীর মাছ বাজারের মানুষ
দের পেটে চলে যায়, ওই ক্ষুধার্ত মানুষেরা ব্রুনোর প্রেম মাখা শরীর খেয়ে অদ্ভুত
তৃপ্তি লাভ করে।
রয়ে যায় শরীর বিহীন গন্ধ হীন প্রেম , আমি
বুজতে পারি কেন ধরে রাখতে পারিনি আমার সময়কে আমার সেই প্রেমের গন্ধকে।
gondho bichar besh valoi korli Mouna
উত্তরমুছুনjoto pori toto obak hoe re tr lekha pore....
r afsosh theke jay...nijer
jak
উত্তরমুছুনkhub khub valo hoeche re lekhata
পারফিউম ছবিটা বছর পাঁচেক আগে দেখেছি,এখন আবার দেখলাম মনে হলো। এতোটাই ভালো লিখেছিস! কয়েকটা বানান ভুল আছে,রেক্টিফাই করে নিলে আরও মনোগ্রাহী হবে।
উত্তরমুছুন