রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

চাঁদের পাহাড়





উঁচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে হেলিকপ্টারে ক্যামেরা নামে আফ্রিকাতে জঙ্গল পাহাড় নদী পেরিয়ে আরও গভীরে ক্যামেরা খুজে পায় শঙ্করের প্ল্যাটফর্ম , জনমানব শূন্য এলাকা চারিদিকে শুকনো ঘাস। এই তো সেই উঁচু শুকনো ঘাসের আফ্রিকা তার মাঝে আমাদের বাংলার ছেলে শঙ্কর পেছনে মানুষ খেকো সিংহ। শঙ্কর কি করবে? হত্যা করবে? পালিয়ে আসবে? না না সিনেমার শঙ্কর এত কিছু ভাবে না । তাঁকে বুনো হাতির আগে দৌড়তে হয় , একটা লাফ দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে গুলি করতে হয় না হলে যে ১৫ কোটির চাঁদের পাহাড়ের “হিরো শঙ্করের” চরিত্রের গঠন সম্পূর্ণ হয় না।

উপন্যাস থেকে ছবি করার ক্ষেত্রে এই গল্পবলার পদ্ধুতিগত দ্বন্দ্ব চিরকালীন । কিন্তু সিনেমার শঙ্করের ক্ষেত্রে একটু বেশী অগোছালো। সারা চাঁদের পাহাড়  ছবি জুড়ে এই লড়াই চলে। কিছুটা সময় শঙ্কর নিজে গল্পটা বলে কিছুটা সময় তৃতীয় গল্পকার, সেখানেই মূল দ্বন্দ্ব। শঙ্কর প্রথমে হাতির সাথে লড়াই করে , দক্ষিণ ভারতীয় বন্ধু তিরুমলকে মেরে ফেলা মানুষ খেকো সিংহকে হত্যা করতে আফ্রিকান মাসাইদের মত নিজের সারা শরীরে রক্ত ঢেলে মাংস ছড়িয়ে যে পরিবেশ ছবিতে সংগঠিত হয় সেটা তো শঙ্কর নয় সেটা ভারতীয় বানিজ্যিক ছবির হিরো। এটা তো বহুদিনের ছক সেই শোলে থেকে দেবের রংবাজ পর্যন্ত এই সফর জুড়ে এই হিরোর দাপাদাপি ।



কিন্তু চাঁদের পাহাড়ে শঙ্করের চরিত্র ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়, সুরুতে সে একজন পরিব্রাজক তার পর অ্যাল্ভারেজের সঙ্গী শঙ্করকে আফ্রিকার জঙ্গলের জীবন একজন দৃঢ় যোদ্ধাতে পরিণত করে । জীবন তাঁকে শেখায় একটা সময় যে শঙ্করের পেছন পেছন সিংহ তার ষ্টেশনের ঘর পর্যন্ত চলে আসে , যে শঙ্কর প্রায় সারারাত সিংহের সাথে লুকোচুরি খেলে বেঁচে থাকে সেই শঙ্কর তো আবার বুনিপ নামক একটা বিরাট জন্তুকে হত্যা করে। কাজেই ছবিটা প্রচণ্ড খারাপ এটা ঠিক নয় অসুবিধাটা আসলে সম্পাদনার ক্ষেত্রে বড্ড ব্যস্ততা ছবিটাকে ঘেঁটে দিয়েছে, যে কারনে ছবি দেখতে বসলে বার বার জার্ক লাগে। দেব ছবিটা জুড়ে ভীষণ খারাপ বাংলা বলেন কিন্তু বাংলা ছবিতে ১৫ কোটির লগ্নি যে দেব ছাড়া করা এক কথায় অসম্ভব । যে প্রজন্মটা চাঁদের পাহাড় বই টা পড়েনি তারা তো কিছু একটা আকর্ষণে ছবিটা দেখতে আসবে?  মুল কথা বানিজ্য । কিন্তু একথাও তো সত্যি হাতে সব উপাদান থাকা সত্তেও শুধু বানিজ্যের দিকে তাকিয়ে একটা ননলাইনার জার্ক ভর্তি ছবি বানাতে হবে?

আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই নীতিতে বিশ্বাস করিনা , যেমন আমার ওই আগ্নেয়গিরির দৃশ্য বা বুনিপের অ্যানিমেশন প্রচণ্ড গোঁজামিল লেগেছে। আবার অ্যাল্ভারেজের সাথে শঙ্করের জার্নির প্রথম অংশ ভালো লেগেছে। তবে একথা ঠিক যদি একজন মাত্র নির্দিষ্ট গল্পকারের জবানিতে ছবিটা বলা হত তাতে দৃশ্যগুলো আরও শক্তিশালী হত। এবং বারে বারে গল্পের ডায়মেনসন বদলাতে গিয়ে ছবির শরীরে অবাঞ্জিত মেদ বাড়তে থাকে । যে কারনে ছবিকে বিরতির পর ভুগতে হয় চমকের অভাবে কিন্তু এখানেই তো চাঁদের পাহাড় ছাপিয়ে যেতে পারত সমকালিন সব ছবিকে। অ্যাল্ভারেজ বার বার পথ হারাচ্ছেন, ডেথ ট্র্যাপে পড়ছেন , আগ্নেয়গিরির সামনে পৌঁছে যাচ্ছেন , খাবার ও জল ফুরিয়ে যাচ্ছে। গুরু মারা গেলেন শিস্য একা হয়ে গেল এই জঙ্গলে।  যে নিজে    সেক্সট্যান্ট যন্ত্রের ব্যবহার জানে না , সে তারা দেখে দিক নির্ণয় করতে পারে না। যে হীরের খোঁজে জীবন বাজি রেখে এতটা পথ সে পেরিয়ে এসেছে সেই হীরের খনিতে শঙ্কর । এটা হতে পারত ছবির সব থেকে প্রভাবশালী দৃশ্য যে জীবন কত কঠিন, আজ শঙ্করের চারিদিকে হীরে আর হীরে সে হীরে চিনতে পারে না শুধু বেঁচে থাকার তাগিদে। ডেথ ট্র্যাপ ভেঙে বেরোনোর জন্য সে হীরে দিয়ে দিক চিহ্ন তৈরি করে। এখানে তো স্পেস ডিভিশন হতে পারত যেমন “মিরর”  ছবিতে হয়েছিলো। নিশ্চিন্তে পরিচালক কমলেশ্বরবাবু জীবনের সবথেকে বড় সত্য কে ধরতে পারতেন “যে হীরের জন্য জীবন বাজি রেখে এতটা পথ চলা , বেঁচে থাকার তাগিদে সেই হীরে বিসর্জন দিয়ে জীবনকে খোঁজা একটু জল আর একটু খাবার তাগিদে”।  এই অংশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভাবে ধরা যেত পর্দাতে। শঙ্করের চরিত্রের গঠন সম্পূর্ণ হতে পারত এই  ক্রাইসিসে । চাঁদের  পাহাড়ের আসল সত্য সফর , এবং অবস্থার সাথে সাথে শঙ্করের চরিত্রের পরিবর্তন এটুকু বাদে আর সব আছে কমলেশ্বর বাবুর এই ছবিতে । শৌমীক হালদারের অতন্ত শক্তিশালী ক্যামেরা আফ্রিকাকে ধরে, জুলু নাচ কে ধরে, বাঘ,  সিংহ , ব্লাক মাম্বা সহ একটা গোটা জীবন্ত সফরকে ধরেন শুধু বিভূতিভূষণের ভয়ঙ্কর অথচ সুন্দর , শান্তির অথচ হিংস্রতার নিঃশ্বাস কে ধরতে পারেন না চিত্রনাট্যের দুর্বলতার জন্য।    



কিন্তু এত কিছুর পর ও তো ছবিটা চলে, নতুন প্রজন্ম ভিড় করে । তারা জানতে পারে শঙ্কর নামক এক সাহসী বাঙালি যুবকের কথা। বাংলা পাঠ্য বই থেকে শঙ্কর বিদায় নিয়েছে অনেকদিন।  এখন সুধু আগ্নেয়গিরির অংশটা কিছু ছেলে মেয়ে পরীক্ষার জন্য পড়ে “সূর্যের নাভির মত” শিরোনামে। এরাও একদিন জানবে সেই ধুতি পাঞ্জাবি পরা মানুষটির কথা। যার উপন্যাসের ভিত্তিতে বিলেত ফেরত এক যুবক অনেক অর্থকষ্ট পেরিয়ে সরকারি অনুদান নিয়ে প্রায় চার বছর ধরে ধুকে ধুকে “পথের পাঁচালী” বানিয়েছিলেন। না সেখানে রিলিজ ডেটের তাড়া ছিল না। পাবলিসিটির প্রচণ্ড ধান্দা ছিল না।  তবে নায়ক নায়িকা বর্জিত  ছবিতে আশঙ্কা ছিল “চার বছরে অপুর ( অভিনেতা সুবীর ব্যানার্জী) বিরাট কোনও শারীরিক পরিবর্তন হয় কিনা, কিন্তু তা হয়নি, হলে হয়ত আর ছবিটা করা হতনা” । এখানেই সময় কথা বলে দামি বাজেটের মার্কেট না চিরকালীন পারফেকশন ?  এসব কোনও কিছুই যদিও বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে কোনোদিন ছুঁতে পারেনি। ছোঁবেও বা কি ভাবে? তার সময়ের বাজার তার মুল্য হয়ত বোঝেনি তাই অবহেলা জুটেছে। এদিকে আজ এত বছর পর শ্বাসকষ্টে ধুঁকতে থাকা বাংলা বইশিল্প , যেখানে বড় পাবলিকেশন হাউস বইবাজার বিশ্লেষণ করে “খাচ্ছে” বলে একের পর এক রাবিশ পাঠের অযোগ্য বই প্রকাশ করে যাচ্ছে। একটার বদলে সমগ্র প্রকাশে আগ্রহী হচ্ছেন সেখানে এখনো একা একা পাল্লা দিয়ে বিকচ্ছে “চাঁদের পাহাড়”,“আরণ্যক” ।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর চাঁদের পাহাড়ের সেই হীরক খনি যেখানে গড়া গড়ি যায় অসংখ্য হীরের টুকরো সেখান থেকে দু একটা হিরে অপচয় হয় ছবি করতে গিয়ে, পড়ে থাকে আরও অনেক।  আজ বাংলা ছবির সুখের দিন কিন্তু কঠিন সময়ে হয়ত আবার এই খনি থেকে অন্য একটা হীরে নিয়ে ছবি হবে , যেখানে বাজেটের চাপ থাকবে না, মার্কেটের লাল চোখ থাকবে না।  বরং এক মুঠো অক্সিজেন থাকবে , যে অক্সিজেন প্রতিরাতে  ফিল্মস্টাডিজের এক নাম না জানা ছাত্রের বালিশের পাশে রাখা আপনার অ্যাল্ভারেজ, দব্রুপান্না , অপু , দুর্গার থেকে বাহিত হবে স্বপ্ন থেকে স্বপ্নে । আপসহীন ছবি  করার স্বপ্নে। 


ছবিঃ চাঁদের পাহাড়
মূলকাহিনীঃ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
পরিচালনাঃ কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় 


                                                            কৃতজ্ঞতা ঃ আদিত্য। 

বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩

একটা কুড়িয়ে পাওয়া চিরকূট


একটা কুড়িয়ে পাওয়া চিরকূট...
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। দরজায় কে যেন এসে কড়া নাড়লো। একবার...দুবার...তিনবার। ঘুম চোখে উঠে দরজা খুলে দেখি হলুদ পাঞ্জাবি পরা এক ভদ্রলোক। আমার দিকে তাকিয়ে। আমি কিছু বলার আগেই নমস্কার করে বললো “ আমাকে আপনি চিনবেন না। খুব দুঃখিত এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য। আমার নাম হিমু। একটু ঘুরে আসবেন নাকি শাহবাগ থেকে? হাঁটতে কোনো অসুবিধে হবে না তো?” কিছু বলার সুযোগ দিল না লোকটা। আমার দিকে একটা চাদর এগিয়ে দিয়ে বললো “পরে নিন। ঠান্ডা তেমন নেই...তবে।” রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করলাম। মোড়ে মোড়ে পুলিশ। মোড়ে মোড়ে থমথমে বিষণ্ণতা।
আপনাকে খুব চেনা লাগে। আপনাকে কোথায়...?
“দেখেননি...। কী করে দেখবেন? হিমালয়কে সচারচর দেখা যায় নাকি?”
শাহবাগের মোড়ে আলোর রোশনাই। শাহবাগের মোড়ে চিৎকার। “রাজাকারের ফাঁসি চাই।”
একটু এগিয়ে গিয়ে হিমু দাঁড়িয়ে পড়ে। রাস্তার মাঝে সাদা পর্দা টাঙিয়ে একটা ছবি দেখানো হচ্ছে। সামনে বসে আছে কিছু মানুষ। স্লোগান...
জানেন...এই ছবিটা আমার চেনা।




ভদ্রলোক হাসে। শীতের হাওয়ায় চাদর উড়ছে। “মুক্তির গান। আপনারা ক্লাসে দেখতেন। একটা লেখা লিখেছিলেন...। মনে আছে?”
আপনাকে আমি কোথায় যেন একটা...
“দেখেননি...কী করে দেখবেন? আমি ওই ভিড়টায় মিশে থাকি।”
রাস্তার পাশে তরুণদের মিছিল। রাস্তার পাশে বড় ফেস্টুনে লেখা এগিয়ে আসছে ‘বিজয় উৎসব...।’
কিন্তু আমি আপনাকে...
লোকটা ঘুরে তাকায় আমার দিকে।
“কেমন একটা হাস্যকর পরিস্থিতি না ভাই? আমাদের দুই দেশের? আপনাদের মহান আইন ভালবাসাকে ক্রাইম বলে। আর আমাদের দেশ...। না থাক...আপনার এ্যারেস্ট হবার ভয় আছে।”
আমি থমকে দাঁড়াই।
“বাড়ির সামনেটা পৌঁছে গেলে আমাকে একটা মিসড কল দেবেন। আমি বেকার কিনা। মোবাইলে টাকা ভরার টাকা নাই...। ও ভালো কথা...আমার নাম আসলে হিমু নয়...আমি আসলে ছিদাম...আবার ঠিক ছিদামও নয়...আমি আসলে মানুষ...। যে মানুষের মৃত্যু মিছিল আপনি ইতিহাসের বইতে পড়েছেন...। জানি লেটার মার্ক্স ছিল মাধ্যমিকে আপনার।”
**** চিরকূটটা এখানেই শেষ। লেখকের নাম জানি না। ঘটি গরম কেনার সময় হয়তো কেউ ফেলে গেছে নোংরা কাগজ হিসেবে। কিম্বা ফেলেনি...ইচ্ছে করে রেখে গেছে কেউ পড়বে বলে।*****

রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৩



                      দু মুঠো লাল আবীরে রঙিন হয় দৃশ্য
                             ঠোঁট থেকে ঠোঁটে।
                             


ভালোবাসতে তো সবাই পারে কিন্তু তুমি যেভাবে চাও সেভাবে কজন ভালোবাসতে পারে?  প্রেমিকের অভাব তোমার নেই কৃষ্ণকলি কিন্তু কেন বার বার নিজেকে সমর্পণ কর খুব সাধারন একটা মানুষের কাছে? তুমি উত্তরে চোখ দিয়ে ইশারা করেছিলে। ঠিক যে কারনে লীলা বার বার রামের বাহুজোড়ে আশ্রয় পেতে চায়। কিন্তু রাম তো যুদ্ধ করতে পারে না। সে শুধু ভালবাসতে পারে। বন্দুকবিক্রি করা মহল্লার একমাত্র মানুষ যে বিশ্বাস করে “প্রেমে” । অনেকদিন পর সঞ্জয় লীলা বনশালীর একটা রঙিন ছবি  সুরু হয় “রামলীলা” যে ছবির ট্যাগ লাইন “ গোলি মারো তো পাঙ্গা আখ মারো তো পেয়ার” ।


পাশাপাশি দুই পাড়া , পরস্পর বিরোধী যুযুধান দু’পরিবার যাদের ব্যবসা বন্দুক, ড্রাগ , স্মাগ্লিং । এক পরিবারের ছেলে রাম, মহল্লার হিরো প্রত্যেক মেয়ে তার জন্য পাগল। অন্য পরিবারের সুন্দরী লীলা তার রুপে মুগ্ধ গোটা পুরুষকূল এই ফরমুলা তো হিন্দি ছবিতে চিরকালের । তাদের দেখা , চোখে চোখ দিয়ে ইশারা করা সব কিছু তো নিয়ম মেনেই হয়। কিন্তু আমদের কাছে অন্যরকম লাগে শিল্প নির্দেশক ওয়াসিক খানের জাদুতে। হোলির দিনে তাদের “প্রথম দেখা” সব ছেলেরা নীল আবির মাখা আর মেয়েরা লাল আবিরে যেন একদল কৃষ্ণের সাথে একদল সখী। তাদের মাঝে কামুক দৃষ্টি নিয়ে পুরুষালী চেহারার রাম রূপী রনবীর ও লীলা রূপী দীপিকা। দু মুঠো লাল আবীরে রঙিন হয় দৃশ্য ঠোঁট থেকে ঠোঁটে। কবিতা লিখতে সুরু করেন পরিচালক যৌবনের কবিতা, প্রেমের কবিতা।


কিন্তু এই বিরাট রুপকথার মত সেট, ভিন্ন ভিন্ন টেম্পারেচারের আলোতে ভীষণ পরিশ্রম করে সুট করতে হয় চিত্রগ্রাহকদের এখানে সেটাও রবি ভার্মা করেছেন। তবুও গল্পটাকে কেন এভাবে গলা টিপে খুন করেন সঞ্জয় ? ছবির চল্লিশ মিনিটে প্রথম খুন সুরু হয় তার পর সারা ছবি জুড়ে প্রচুর খুন আর গোলাগুলি চলতে থাকে বড্ড রদ্দি মনে হয় এই “ লাভ অ্যান্ড ব্লাড” থিমকে । কেন পালিয়ে যেতে হয় রাম-লীলা কে? কেন ছবির শেষ দৃশ্য পর্যন্ত বার বার “হাম দিল দে চুকে সানামে”র ঐশ্বর্য কে ফেরত আসতে হয় লীলার একাকি দৃশ্যে ? কেন সেই একই “পরিবারতন্ত্র ও প্রেমের মৃত্যু” সংক্রান্ত গুল্প দেখি? লীলা ও রামের নতুন ঘর খোজা , তাদের ঘর ভাঙ্গা পরিবারের চক্রান্ত দেখতে দেখতে “ইসকজাদে” ছবির কথা খুব করে মনে পড়বেই।






এই সঞ্জয় কে তো আমি চিনিনা, বরং দু তিনটি আউট ডোর ফ্রেমে ওয়াড অ্যাঙ্গেল লেন্স এ মরুভূমি ও আকাশের মাঝে পিপাসার্ত ঘর খোজা প্রেমিক-জুগলকে দেখে মনে হয় এটা ওনার কাজ। ইনডোর সেট এঁর রঙের বৈচিত্রের মধ্যে পর্দা ওড়া ঘরে লীলার “অঙ্গ লাগা দে রে মোহে রঙ্গ লাগা দে রে” গানটির দৃশ্যে মনে হয় এটা সঞ্জয়ের ঘরানা।


কিন্তু উত্তরহীন এল-ডোরাডোর  মত প্রেম , চেনা গল্প তো এই পরিচালক কখনো বলেন না। সঞ্জয় তো চিত্রকার যে নতুন নতুন রঙের ছবি করেন, আমাদের কে নতুন প্রেমের কবিতা বলেন, প্রেমে কি? ঠিক কি ভুল সেই দর্শন যার ছবিতে থাকে সেই মানুষটা ২০১৩ তে এসে বাজার চলতি “ উদ্যম প্রেম ও সমাজের চাপে হিন্দি বলয় ভিত্তিক যুগল মৃত্যু” জ্বরে আক্রান্ত? নাকি এই ঘরানার ছবির বাণিজ্যিক দিক থেকে সাফল্যের হার বেশী ?


কয়েক দিন আগে পরিচালক বলছিলেন “ সাওরিয়া ও গুজারিশ সেই ভাবে চলেনি , আমি দীপাবলি রাত ঘরে বসে একা কাটিয়েছি আর সারা শহর জুড়ে আতসবাজির আলো দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি একটা রঙিন ছবি করব” 
সেই অর্থে
“ বুলেট ভি এক হে, এক-ই হে জান
 হর বুলেট পে লিখহা হে মরণে বালো কি নাম”
সব দিক থেকেই রঙিন ছবি। কিন্তু এত রঙের মাঝে কি কোথাও সঞ্জয় তার নিজের কাটা গণ্ডিতে আটকে আছেন?


রনবীর ও দীপিকা অভিনয়টা করেছেন মন ও শরীর দিয়েই, সুপ্রিয়া পাঠক এঁর মত একজন শক্তিশালী অভিনেত্রীর পাশে দীপিকা যত বার আসেন সেই চিরাচরিত দুটো পরস্পর বিরধি স্রোতে ভেসে যেতে থাকে ফ্রেমে ভালোবাসা না হিংস্রতা , খুন না আশ্রয় এই মুহুর্ত গুলতে সিদ্ধার্থ এবং গরিমার সাথে সঞ্জয়ের নিজের লেখা কিছু সংলাপ সিনেমা শেষ হওয়ার পরেও মুখে মুখে ঘোরে। যতেচ্ছ গানের ব্যবহারে ছবিটি অতি দীর্ঘ লাগে এবং এই অবান্তর মেদ কিছুতেই অতি সুন্দর  সেট আর অসাধারন রঙিন ক্যামেরার ফ্রেম কাটতে পারে না।  তবুও রঙিন আলোর লেন্স ফ্লেয়ার আর আবির ওড়া  প্রেমে দর্শক সম্মোহিত হয়। ১৯৯৮ সালের একটা প্রতিভাধর ছেলে ওয়াসিক খান “দিল সে” ছবির সহকারী আর্ট ডিরেক্টর আজ   ২০১৩ তে এসে “রাম-লীলা” তে একজন সম্পূর্ণ শিল্পী । এই ছবিতে সেট তৃতীয় চরিত্র হয়ে উঠেছে পরিচালক যদি সেই ভরসাতেও ছবি থেকে অবান্তর গোলাগুলি , গান বাদ দিয়ে একটা উত্তরণের প্রেমের গল্প বলতেন, যদি রাম সত্যি দায়িত্ব নিয়ে সাম্রাজ্য চালাতেন , যে রাম কে বন্দুক নয় প্রেমে বধ করেন লীলা। সেই লীলা যদি তার চারপাশের ছোট ছোট রাবণদের বধ করতেন তবে দশরাটা অন্যরকম হত। প্রেম বেচে থাকত । রামলীলা উত্তর খুজে পেত প্রেমের পথেই। সঞ্জয় লীলা এটা বোঝেন নি আমি বিশ্বাস করিনা। হয়ত বাজারের কথা ভেবে এই উত্তর মেলাতে চান নি।



পরের কোনও ছবির অপেক্ষায় থাকলাম যেখানে আর অনেক কবিতা থাকবে আর থাকবে উত্তর। সঞ্জয় লীলা বনশালী আপনাকে যে বড় ভালোবাসি শ্রদ্ধা করি । প্রায় একা একটা অন্ধকার হলে বসে “সাওরিয়া ও গুজারিশ” দেখেছি, মানুষ ছবি দুটো নিতে পারেনি কষ্ট পেয়েছি। কিন্তু আপনাকে নিয়ে আলোচনা বন্ধ করিনি । জানি আপনি ফিরে আসবেন নতুন আঙ্গিকে নতুন রঙে , নতুন প্রেমে। ভালো থাকবেন ।  



পরিচালকঃ সঞ্জয় লীলা বনশালী
চিত্রগ্রাহকঃ  রবি ভার্মা
সঙ্গীতঃসঞ্জয় লীলা বনশালী 
আর্ট ডিরেক্টরঃ ওয়াসিক খান
অভিনয়ঃ রনবীর ও দীপিকা



                                             কৃতজ্ঞতাঃ অনসূয়া। 
                                             লেখাঃ মৌন। 

রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৩

এক নিষ্পাপ ভালোবাসার প্রচলিত গল্প।

ও ক্যাহেতে হ্যে না প্যার মে কুছ সেহি গলত নেহি হোতে।।


বর্ষার বৃষ্টি বড় দীর্ঘ সময় ধরে চলে। জানলার বাইরে তবুও চোখ মেলে তাকিয়ে থাকলে বিরক্ত হওয়ার উপায় নেই। এ যেন কোন এক বুদ্ধিমতি গৃহবধূ যে তার সমগ্রটা দিয়ে সকলকে আগলে রেখেছেন কোন উপায় নেই তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার। প্রায়ই এখন দেরি হয় ফিরতে। রাত হয়ে যায় অনেক। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেও রাত করে ফিরি। কেন ফিরি মাঝে মাঝে নিজেও জানিনা। হয়ত কোন এক ভালোবাসার টানে বা ফেলে আসা দিন গুলোকে একবার রাতের অন্ধকারে ফিরে দেখবার আশায়। আসলে ও ক্যাহেতে হ্যায় না প্যার মে কুছ সেহি গলত নেহি হতে।

অগত্যা হিসেব করতে বসে পড়লাম কি সেহি আর কি গলত, কুনদনের সাথেবেনারসের গলিতে গলিতে ভগবান থাকেন। সেই জন্যই তো বলা হয় সিটি অফ গড। গঙ্গার তীরে দশাশ্বমেধ ঘাটে ভোলেনাথের কৃপায় তাই আবার কুনদন কোন এক জোয়ার প্রেমে পড়ে যাবে। মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্তে এটাই ছিল কুনদনের শেষ শব্দ কটা। যে হয়ে যেতে পারত আধুনিক ভারতীয় রাজনীতির নতুন মুখ, কিন্তু দিল্লির ময়দান ছেড়ে হাসপাতালের বিছানায় মুখ থেকে রক্ত বার করে চিরতরে বিদায় নেয়। আসলে ঐ যে প্রথমেই বলে এলাম প্যার মে কুছ সেহি গলত নেহি হতে।

অনেকদিন বাদে বেনারস এল ছবির পর্দায় একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে। অনেকদিন আবারও একটা প্রেমের গল্প, ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। অনেকদিন বাদে গলায় গামছা জড়ানো পায় চপ্পল পড়া, বেশী পড়াশুনো না জানা প্রেমে পাগল এক যুবকের গল্প। ঠিক যেন আমার ছোটবেলায় দেখা আমার দুচারজন বন্ধুর কথা যারা প্রেম নিবেদন করতে গিয়ে গালে হাত দিয়ে ফিরে এসেছিল। আর ছোটবেলার প্রেম, তাদের কালো মেম সেই ছোটবেলায়ই হারিয়ে গিয়েছিলকজন কুনদনের মতন ৮ বছর অপেক্ষা করেছিল তা আজ বলতে পারব না।



আমার বজবজ লোকাল স্পিড বাড়ায়, বাইরে বৃষ্টি তখনও গুড়ি গুড়ি পড়ছে। ভাবছি বাড়িতে ফোন করব কিনা, ভাবতে ভাবতেই ওপাশের জানলার সামনে বসে থাকা ছেলে মেয়েটার দিকে চোখ যায়, ছেলেটার হাতে মেয়েটার হাত দুজনে গভীর কথায় মগ্ন। ভালোবাসার কথা। হয়ত আবার বহুদিন পড়ে ওদের দেখা হবে। খুব ইচ্ছে করছিল জানতে ওরা কি হিন্দু দুজনেই না একজন হিন্দু একজন মুসলিম। জোয়া, কুনদন কেউই জানত না তাদের প্রেম পরিনিতি পাওয়ার সামনে ধর্মটা যাজক হয়ে দাড়াবে। তাই প্রেম গড়ে ওঠার আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কে জানত এই মেয়ে আবারও এক হিন্দু ছেলের প্রেমে পড়বে আর বাড়িতে মিথ্যে বলে তাকে বিবাহ করবার ইচ্ছে প্রকাশ করবে। পর্দায় আমরা প্রথমবারের জন্য দেখব এক মুসলিম নারীর প্রেমে পাগল দুই হিন্দু যুবক।

বেনারস পার করে আমরা ঢুকে পড়ি জে এন ইউ এর ক্যাম্পাসে। সেখানে অগোচরে কখনও চে আমাদের পাশে থাকেন কখনও বা স্টুডেন্ট ইউনিয়নের পোস্টার। আমরা একদল নতুন প্রজন্মকে দেখি একটা নতুন স্বপ্নকে দেখি। একটা নতুন দলকে দেখি। সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় মগ্ন একদল নতুন যুবক- যুবতিকে দেখি। যারা স্বপ্ন দেখে একটা নতুন সমাজ গড়ার। যেখানে নব প্রজন্ম এগিয়ে আসবে, হাতে হাত রেখে সমাজের জঞ্জাল পরিষ্কার করবে। এটাই তো আশা। কিন্তু এসবের মাঝেও বড় প্রশ্ন ওঠে মনে যে যারা সমাজকে পরিষ্কার করে নতুন প্রজন্মের কাছে উপহার দেবে ভাবছে তারাও তো সৎ পথে থাকে না, পরীক্ষার হল থেকে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়েও নৈতিক দায়িত্বটা পালন করে না। কিন্তু তা স্বত্বেও যশরাজের গালে প্রেমের স্পর্শ লাগে। আর আমার কপালে একটা হাসি জোটে যখন আমি বলি নিজে যা পারি তাই দিয়েই যদি পাশ করতে পারি তো করব না হলে নাইবা হল।

বজবজ লোকাল অর্ধেকটা পথ চলে আসে। কেমন একটা ঝিমুনি লাগছে, বাতাসের শীতল স্পর্শে যেন গায়ে কাটা লাগছে। বুঝিনা মনে হয় জ্বর আসবে হয়ত। আর মনে পড়ে কুনদন আবার দ্বিতীয়বার সেই একই প্রেমিকার কাছে অস্বীকার যোগ্য হয়ে ওঠে। আর আবার সেই হাত কেটে হাঁসপাতালে। কিন্তু প্রেম যে একটা এমন অনুভুতি যার জন্য অনেক সময় নিজের কাছেও হেরে যেতে হয়, আর সেই হারার মধ্যেই যেন একটা আনন্দ থাকে। আসলে সেই মানুষটার জন্য হারা জেতা তো দূরের কথা জীবন গেলেও যাক। কুনদন তো শেষে গিয়ে এটাই প্রমান করতে চেয়েছে। এদিকে জানলা দিয়ে আরও জোড়ে হাওয়া এসে লাগছে বজবজ লোকাল আরও গতি বাড়াতে থাকে। আর ঐদিকে কুনদন চলেছে তার প্রেমিকার নিজের প্রেম কে সামাজিক মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে।

এরপর এক লড়াই শুরু হয়, চরম লড়াই। সব ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি দেওয়া, নিজের প্রেমিকাকে তার প্রেমের হাতে তুলে দেওয়ার লড়াই। কিন্তু সেখানেও ব্যর্থতা। পরিস্থিতি যেন সব কেড়ে নেয়। ঐ যে বলে ভালোবাসার পরীক্ষা। কেউ তাতে পাশ করে কেউ বা এড়িয়ে চলে। দিল্লির জে এন ইউ এর ক্যাম্পাস এরপর কুনদন বন্দনায় গান গায়। প্রচার সর্বস্বতায় কুনদন এক আইকনিক মুখ হয়ে ওঠে। কিন্তু এসব তারই জন্য যে একদিন তার মুখে থুতু ছিটিয়ে দিয়েছিল। ভালোবাসা কোন বাঁধা মানে না, ভালোবাসা কারও রাগ-অভিমানের তোয়াক্কা করে না। না হলে কি করে পেরেছিল সেদিন সিতা দাদার মুখের ওপর বলে আসতে সে অভিরূপের সাথে গরীবের সংসার ধর্ম করবে।

কেউ কাউকে কতটা ভালবাসলে তাকে মৃত্যুর দুয়ারে ছেড়ে আসতে পারে। কুনদন হয়ত শেষ শয্যায় শুয়ে এটাই ভেবেছিল। যা আমরা কেউ শুনতে পাইনি। একটা প্রেম যে সবসময় তার হতে চেয়েছিল আর একটা প্রেম যা সে চেয়েছিল তা কোনদিন তার হতে চাইনি। তাই তাকে মৃত্যু শয্যায় শুয়ে স্মৃতি রোমান্থনের মাধ্যমে ভাবতে হয়, একটা প্রেম, একটা বন্ধু বা নিজের বাবা আজ থেকে যাবে। হয়ত আবার কোন জোয়ার প্রেমে পড়ে এভাবেই নিজের জীবন দিয়ে তার ভালোবাসাকে রক্ষা করে যাবে কোন এক কুনদন আজও সে বেনারসের গলিতে ছুটে বেরাচ্ছে আর যেই মুহূর্তে জোয়ার দেখা পাবে তারও মনে হবে “ নামাজ মে ও থি পর এইসা লাগা কে দুয়া মেরি পুরি হো রেহি হ্যায়”।

আমার বজবজ লোকাল গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিয়ে গোঙাতে গোঙাতে এগিয়ে যায়। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে সাথে ঝোড়ো হাওয়া। আমি পকেট হাতরাই, মোবাইল খুঁজতে থাকি, মনে হয় এই বুঝি কোন মেসেজ এল সেদিনের মত, যে ঝড় উঠবে হয়ত, তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যাও। মোবাইলের আলো জ্বলে, তবে না আজ আর কোন মেসেজ আসেনি। আমি বাড়ির পথে পা বাড়াই ঝোড়ো বৃষ্টি নিয়ে, আর ভাবতে থাকি হয়ত একটু পড়েই মেসেজটা আসবে, বাড়ি ফিরেছ? ঝড় উঠেছে যে। আসলে সেই যে এক বিশ্বাস প্যার মে সেহি গলত কুছ নেহি হোতে। ভালোবাসা অবিনশ্বর। এর কোন সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না। শুধুমাত্র তা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মের দিকে এগিয়ে যায়। তাই সেকালের হির-রাঞ্ঝা আজকের কুনদন-জোয়ার মধ্যেও নতুন ভাবে থেকে যায় রাঞ্ঝানাতে।  

ছবিঃ রাঞ্ঝানা।
অভিনয়ঃ ধানুস, সোনম কাপুর, অভয় দেওয়াল প্রমুখ।
সঙ্গীতঃ এ.আর রহমান
পরিচালনাঃ আনন্দ.এল.রাই

শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৩


“প্রেম তো সঞ্চয়”
তবুও
কেন লুঠ হয়?
 

“প্রেম তো সঞ্চয়” যেদিন একটু একটু করে জমানো সোহাগ চুরি হয়ে যায় মেনে নিতে কষ্ট হয় একাকীত্ব, তারপর ভালোবাসার সমান্তরালে জমে ওঠে অভিমান , যে অভিমান বলে “ফিরে এলেও আর ফিরিয়ে নেবো না”। আসলে কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায়না “প্রেম” নামক আমানত যে তালা বন্ধ হৃদ কোঠরে আছে সেই চাবি।




কেন লুঠ হয়? “কেন একবার অন্তত ‘মন’ রাখার জন্য বলতে পারনা যে আমি তোমাকে ভালবাসি” অনেকদিন পর হিন্দি ছবির পর্দা জুড়ে প্রেম আলপনা তৈরি করে নিজের মত করে। “লুটেরা” সদ্য স্বাধীন একটা দেশে জমিদার কন্যা আর এক ঠগ ছেলের রূপ কথার মত প্রেমের / না প্রেম নামক ফাঁদের কথা বলে? কিন্তু এগল্প তো প্রথমবার বলা হচ্ছে এমন তো নয় তবে কিসের এতো আবেশ?




বাংলাদেশের মানিকপুরের জমিদারের বিরাট রাজত্ব আর আদরের কন্যা ‘পাখি’ নিয়ে ভীষণ সুখের দিন এর মাঝে বরুন শ্রীবাস্তব এর আগমন , পেশাগত ভাবে যে ‘প্রত্নতত্ববিদ’ । এক মিষ্টি গাড়ি দুর্ঘটনাটতে প্রথমবার দু চোখের দৃষ্টি বিনিময় আর নিস্তব্দতার মাঝে হাল্কা সুরে বেজে চলা আবহসঙ্গীত ফিস ফিস করে আমাদের কানে বলে প্রেম আসছে প্রস্তুত হও। ‘পাখি’ বড় হয়ে লিখতে চাই, বরুন এর দ্বারা খনন কাজ ছাড়া আর কিছু হয় না। এমত অবস্থাতে তাদের আড্ডা বা প্রেম জমানো একমাত্র পথ হয়ে ওঠে “ছবি আঁকার ক্লাস”। কিন্তু সে ক্লাস জুড়ে আমরা ছবির পরিচালক আর চিত্রগ্রাহকের মুন্সিয়ানাতে দারুন সুন্দর বাংলার রূপ দেখি। ছবি যত এগোতে থাকে জমিদারের ক্ষমতা এবং অর্থনৈতিক শক্তি কমতে থাকে। হঠাৎ  ছন্দ পতন হয়, বরুন জমিদারের মন্দিরের দেবতার সোনার মুর্তি ও “পাখির” মন চুরি করে পালিয়ে যায়। প্রেমের ছবিতে এতক্ষণ যে “ভালোবাসা” একটু একটু করে জমা হয়েছিলো , যে ভালোবাসা আগের দিন রাতে পাখিকে সবথেকে বেশি সুখে রাখতে চেয়ে বিয়ে করতে চেয়েছিল সেই ভালোবাসা চুরি হয়। বরুন শ্রীবাস্তব , পাখির প্রেম আসলে সমান্তরাল পথ ঘুরে “লুটেরা”। সিনেমা সেকেন্ড স্পেস এ প্রবেশ করে। এখান থেকে কেন যেন কিছুটা সময় ব্যক্তিগত ভাবে আমার আর ছবিটাকে ভালো লাগে না  । মনে হয় “ফানাহ”র মত বড্ড চেনা ছকে চলছে ছবিটা। ধীরে ধীরে সেরকম ঘোটতে থাকে । ডালহৌসি নামক কোনও এক পাহাড়ি শহরে সে এখন একা থাকে, তার বাবা গত হয়েছেন, ‘পাখি’ এখন লেখে । এই রকম  পটভূমি আবার সেই ভালোবাসা  ফেরত আসে মুখমুখি দাড়ায় ঘেন্নার , অপছন্দের। তবুও প্রেম সুগন্ধি হয়ে রয়ে যায় ছবির সঙ্গীতে ।




কোথাও গিয়ে পরিচালক কি বানিজ্যের কথা ভেবে ছবির যে সেকেন্ড স্পেস তৈরি হয়েছিলো সেই পথকে অস্বীকার করে কেন পাখিকে অসুস্থ করেন? কেন এতো দ্রুত বরুনকে এর দ্বিতীয়বার পাখির কাছে ফিরে আসতে হয়? কেন বরফ শহর? কেন গুলিবিদ্ধ হয়ে বরুন আশ্রয় খোঁজে ? এই চেনা পথ তো অতিপরিচিত “ফানাহ” সিনেমার দ্বিতীয়ভাগের মত সব মশলাদার রসদে থাসা। ও হেনরির “দ্যা লাস্ট লিফ” অবলম্বনে এ  ছবি নির্মিত হয়েছে কিন্তু অন্য পথে হাটার সব উপাদান তো পরিচালক নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন। যদি এমন হত যে বরুন অন্য কোথাও স্থির, পাখির লেখা বই তার কাছে পৌঁছল কোনও একদিন। যদি দুটো সমান্তরাল গল্প একসাথে চলত একে ওপরের অভিমুখে যেমন ভাবে পাখি তার অতীত ভালোবাসার স্মৃতিচারনা করে শেষের দিন গুনছিল , সেই দিনগুলো কি হতে পারতোনা পাখির লেখা বইয়ের এক একটা পাতা। তারপর না হয় আবার দৃষ্টি বিনিময় আবার অভিমান আবার প্রেমজ্বর। আবার রূপকধর্মীগাছটির এক একটা করে পাতা গুনে জীবনের অবশিষ্ট দিন গোনা। এটুকু সাহস কিন্তু দেখানো যেতো। কারন ছবির সঙ্গীত ও আবহ সঙ্গীত তো ততক্ষণ দর্শককে প্রেমে ডুবিয়ে রেখেছে।  


সম্ভবনার বাইরে ছবিটি কিন্তু একটু হলেও মনে করিয়ে দেয় আমাদের একান্ত ব্যাক্তিগত ভালো লাগার কথাগুলো এমন অনেক লুটেরা আজও তো আছে যারা রূপকথা দিয়ে চিঠি লেখে, যে রূপ কথার একটা চরিত্র তুমি আর একটা ............। তারপর একদিন শীতের ময়দান বা বৃষ্টির প্রিন্সেপ ঘাটে অন্য কারো হাত ধরে ভো কাট্টা বা প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনা করা গালেটোল পড়া বা না পড়া মিষ্টি স্বভাবের মেয়ে দুটো যারা এপর্যন্ত একবারও লুটেরা হতে চেষ্টা করল না। বা সেই ‘২০১৩’ র পাখি যে ঘুম জড়ানো ভোরে এসএমএস লিখতে থাকে “হ্যাঁ বলিস আর না বলিস এই বৃষ্টি ভেজা দিনে আমি তোর প্রেমে পড়েই গেলাম , একটা কদম গাছ দেখে রাখ দুজনে ...............” । আমার খুব একটা ভালো না লাগা ছবির দ্বিতীয় ভাগটা জুড়ে না হয় এ সব মানুষের ভালো লাগা থাক।    



পরিচালকঃ বিক্রমাদিত্য মাতয়েন।
দৃশ্যগ্রহণঃ মহেন্দ্র জে
সুর ও আবহসঙ্গিতঃ অমিত ত্রিবেদী।
                                                        লেখাঃ মৌন।
 



কৃতজ্ঞতা ঃ  সুরঙ্গমা
 






রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩


ঋত্বিক ঘটককে লেখা এক খোলা চিঠি-



কী বলে সম্বোধন করব ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না আসলে চিঠি লেখার অভ্যেস আমাদের কোনোকালেই ছিল না আমরা হলাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর প্রজন্ম আমদের দৌড় ওই মসজিদ পর্যন্ত আর ভনিতা না করে আপনাকে কাজের কথা বলি



আচ্ছা, আপনার অহল্যাকে মনে আছে নিশ্চয় সেই কাকদ্বীপের মেয়েটি যাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল, আর কাকদ্বীপ হয়ে উঠেছিল মুক্তাঞ্চল আপনিও তো কেঁদেছিলেন সেই সময়, পাগলের মতো স্বপ্নে, মৃতদেহ নিয়ে ছুটেছিলেন প্রতিকারের আশায় জানেন সে তো অনেক বছর হল তখন এক অহল্যার জন্য আপনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন আজ থাকলে কি করতেন? আপনি বোধহয় লজ্জায় আত্মহত্যাই করতেন জানিনা ঠিক কী করতেন আজ রোজ একটা করে ধর্ষণ হয় ঋত্বিকবাবু আর তারপর তাকে টুঁটি টিপে মেরে ফেলা হয় পরিবারের লোক কান্নায় হতাশায় ভেঙে পড়েন, আমরা খবরের কাগজে পড়ে আবার মুড়িয়ে সেটাকে যথাস্থানে রেখে দি, আর সরকারি আমলারা পরিবারের লোকেদের চাকরি দেবার কথা বলে সেই স্কুলে থাকতে ধনঞ্জয়য়ের ফাঁসি হয়েছিল দেখেছিলাম, তারপর আর তেমন কিছু শুনিনি অথচ দিল্লির দামিনী, পার্ক ষ্ট্রীটের মেয়েটি, বারাসাতের নাম না জানা অনেকে, কাল কামদুনি, আজ গাইঘাটা, একের পর এক হয়ে চলেছে আপনার মতো নারীকে আজ আর কেউ দেবী রূপে দেখেনা নারী আজ প্রয়োজনীয় চাহিদার ভোগ্যপণ্য অথচ একটু ভেবে দেখেলে বোঝা যায় যে নারীর মায়াতেই আমরা পুরুষেরা বেঁচে আছি থাক আর বেশী কিছু বলে কি হবে যা হচ্ছে হয়ে যাবে, এইভাবেই চলবে যতই চেল্লামেল্লি হোক মানুষের পাশে দাড়িয়ে সহযোগিতা করা মানুষ আজ ভুলে গেছে মানুষের জন্য কেউ কিছু করতে চায় না আপনার মতো কেউ পিপলস আর্টিস্ট নেই সবাই এখন শেল্ফ আর্টিস্ট



এই প্রসঙ্গে আসি আপনাকে নিয়ে একটা ছবি বেরিয়েছে আপনার ছবির নামাকরনেইমেঘে ঢাকা তারা পরিচালক কমলেস্বর মুখোপাধ্যায় জীবিত কালে তো কিছুই পেলেন না মৃত্যুর এতদিন পর না হয় ভালোবাসার অনুপ্রদান ছবিতো কেউ দেখেনি আপনার, আপনার লেখাতেই পড়েছি, কেউ বোঝেনি আপনার ছবি আর দেখুন এখন আপনাকে দেখার জন্য কী তোড়জোড় বাঙালির আঁতলামোটা মূল্যবৃদ্ধির মতো দিনের পর দিন বাড়ছে শুনেছিলাম আপনি নেশাগ্রস্থ ছিলেন কিন্তু মাইরি বলছি ছবিটা না দেখলে সত্যিই জানতে পারতাম না আপনি এই হারে বাংলা টানতে পারেন আর সাথে বিড়ি সিগারেট পর্যন্ত খেতেন না, এত অভাব ছিল, সরকারি টাকায় তো শুনেছিলাম বেশ কিছু তথ্যচিত্র বানিয়েছিলেন, গাড়িও কিনেছিলেন পড়েছিলাম, কিন্তু এখানে যে দেখলাম আপনার সংসারের দৈন্য দশা খেতেও পারেন না ঠিক ভাবে কিজানি বাপু ঠিক বুঝতে পারিনা প্রথম জীবনে তো গণনাট্য করতেন তারপর ছবিতে এলেন তো আর তাছাড়া আপনি তো বিখ্যাত ঘটক পরিবারের ছেলে ছিলেন, তাহলেও এই দুর্দশা ছিল! ঠিক আছে চলো দুঃখ আমাদের সকলের সঙ্গী আছে থাকুক

চলুন এবারে আপনাকে ছবির কথাটা বলি যেহেতু ছবির বিষয়বস্তু আপনি, কিন্তু আপনার জীবনী নিয়ে ছবি নয় শুধুমাত্র সেই সময়টা নিয়ে যখন আপনি পাগলাগারদে আর বদ্ধ উন্মাদদের নিয়ে নাটক করার কথা ভাবছেন আপনার এই সময়ে বারেবারে আপনি ফিরে গেছেন আপনার অতীত জীবনে কীভাবে আপনি এলেন এই পাগলাগারদে সোজা কথা উন্মাদ ছিলেন তাই এলেন কিন্তু উন্মাদ হলেন কেন শিল্পী তো, ক্ষ্যাপা তো হবেনই, ক্ষ্যাপামো ছাড়া কি শিল্পটা হয়? কিন্তু ছবিতে দেখি আপনার শিল্পকর্ম ছাড়া আর বাকি সবকিছু শিল্প করার ঔদাসিন্যতা ছাড়া বাকি সব কিছু থাকে আপনার ভাবনা চিন্তা, নাটকের প্রতি ভাবধারা, সমাজ সংস্কারক হিসাবে নিজেকে মেলে ধরা কিন্তু বিশ্বাস করুন আপনাকে খুঁজে পাইনা যে ঋত্বিক বলতে পারে আমি সিনেমার প্রেমে পড়িনি, সিনেমাকে নিজের হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করি সেই ঋত্বিক নেই ছবিতে



আমরা তো সবাই জানি আপনি মেনে নিতে পারেন না ৪০ লক্ষ মানুষের পিঠে ছুরি বসিয়ে দেশভাগ করে দেশ স্বাধীন হওয়ার আনন্দ যে বাংলাকে ভাঙলো ওরা, আপনি তা মেনে নেননি আপনার কথা মতো আজও আমরা বলি বাংলার আবার এপার ওপার কী কিন্তু বিশ্বাস করুন আজকে ২০১৩ তে এসে এসব নিয়ে কেউ ভাবে না কর্পোরেট দুনিয়ার জমকালো জীবনধারণ, মোটা মানিব্যাগের কচকচানিতে বড় জোর সময় কাটাতে যাওয়া যেতে পারে আপনাকে দেখতে কিন্তু যারা আপনাকে চেনে না তারা কেউ যাবে না কোন বাল বাংলা খেয়ে মাতলামো করত, বয়ে গেল তাঁকে দেখতে যেতে কিন্তু বিষয়টা অন্য আপনার ছবিতে যে দেশভাগের যন্ত্রণা আমাদের আবেগকে অনুভূতিতে সঞ্চারিত করে, সেই আবেগ কমলেস্বর বাবুর ছবিতে ফুটে ওঠে না খাপছাড়া ভাবে আসে আপনার ছবির অংশবিশেষ যা আমরা বহুকাল ধরে দেখে আসছি নতুন ভাবে দৃশ্যত এই অংশ আমার আবেগকে ছোঁয় না



বেশ করেছিলেন পাগলামো করেছিলেন, যে সময় চলছিল তখন আপনার মতন মানুষ আজকের বাঞ্চতদের মতো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারত না একের একের পর এক কিশোরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার নামে গুলি করে খুন করা হচ্ছিল আর কিছু মানুষ এসবের ফায়দা লুটে নিজেদের আখের গোচ্ছাচ্ছিল কে বলেছিল গান্ডুদের বিদ্রোহে করতে? কী হয়েছিল এর ফলে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ ছেড়ে সমাজ বদলাবার দায় নিয়েছিল বাল ছিঁড়েছিল আত্মবলিদান কেউ মনে রাখেনি, আর রাখবেও না ওরা নকশালই রয়ে গেল তাই আজকের দিনে এসে বিনায়ক সেনের হাজতবাস বা কিসেনজীর মৃত্যু রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিষয় হয়ে যায় আপনার কথাই ঠিক রাষ্ট্র থাকলে রাষ্ট্র দ্রোহিতাও থাকবে কিন্তু কি জানেন ছবিতে এই আত্ম বলিদানের পিরিয়ডটা কেমন যেন নিঃসার কোন আগুনের ঝলকানো নেই বিদ্রোহে ফুঁসে ওঠা নেই, সময়কে ডাক দিয়ে সময় বদলানোর বাসনা শুধু গুলি করে মৃত্যু দেখি আর দেখি অজ্ঞাতবাসরে আপনিও কীভাবে মিশে যান ওদের সাথে আজ আমরা স্ট্যাটিস্টিক মেলাই, গত বছরের তুলনায় কজন বেশী ধর্ষণ হোল আর কটা মাওবাদী মারা গেল আর দেখি আমাদের রাজ্য এবারে এসবের বিচারে শীর্ষস্থান অধিকার করেছে আজ বলতে ভয় লাগেকটা বাঙালি আপ দেখা হ্যায়সব বাঙালিই হয় কর্পোরেট ঢ্যামনা, নয় ধর্ষণকারী বাঞ্চত আর আমরা হলাম তৃতীয় শ্রেণী, দুটোর কোনটাই সাপোর্ট করি না, শুধু মুখ বুজে সহ্য করে যাই একটু বেশি পদক্ষেপ নিলেই আবার রাষ্ট্রের চোখ রাঙানি





আপনাকে কেন্দ্র করে আপনার চারপাশের সব চরিত্ররা সবাই ছিলেন, কিন্তু তারা চরিত্রই রয়ে গেলেন, চরিত্রের বাইরে এসে রক্তমাংসের আসল মানুষটা হতে পারলেননা নতুন আর কিছু বলার নেই জানেন, পয়সা পেয়েছিলেন তাই সেট, আর্ট, ক্যামেরা এসব তো ভালো হবেই কিন্তু এসবকে আলাদা ভাবে চেনা যায় একটা সেট চরিত্রদের থেকে বেরিয়ে এসে নিজে একটা চরিত্র হয়ে উঠতে পারে না একটা দৃশ্যের আর্ট ডিরেকসন আমায় কোন সময়ের কথা মনে করায় না কেমন মোনোটোনাস আর সঙ্গীত, মুহূর্তে আবেগ সৃষ্টি করে না, রাগে বিদ্রোহের প্রকাশ ঘটায় না বেজে চলে শুধু দৃশ্য থেকে দৃশ্যের পর লোক সঙ্গীতের ব্যাবহারও, শুধুমাত্র ব্যাবহার করার জন্যই থেকে গেল মানুষের জীবন দর্শন হয়ে উঠল না তা



আর কী বলি বলুন তো সময়টা কেমন স্থির হয়ে আছে মেঘ করেছে বুঝতে এই বুঝি বৃষ্টি নামবে নামুক, কিছু এসে যাবে না তাতে আর কেউ স্পর্ধা দেখানোর সাহস করবে না আমরা গুটিয়ে যাব ধীরে ধীরে আপনি থাকুন যেখানে আছেন যেমন তবে আপনাকে মনে করিয়ে দিই এই হাড়হাভাতে সময় যখন বাংলা ছবি বলতেই মানুষ কোমর দুলিয়ে বিদেশি নাচের কথা ভাবত এমন একটা সময়ে কমলেস্বরবাবু একটু অন্য ভেবেছেন তাই তাঁকে কুর্ণিশ



আমরা কেউ উদ্বাস্তু দেখেনি ঋত্বিক বাবু এপারে জন্মেছি শুনেছি, পড়েছি সেই সময়ের কথা, কেমনভাবে মানুষ ঘরছাড়া হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল সর্বস্বান্ত হয়ে সেই সময়ের বেদনা যেভাবে আপনার ছবিতে উঠে এসেছিল, এবারে আপনি পর্দায় উপস্থিত থেকেও সেই বেদনাকে স্পর্শ করাতে পারলেন না আমায় আমরা আপনার ভূমিকায় শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ভালো অভিনয় দেখি, আমরা আপনাকে নির্মাণের ভূমিকায় কমলেস্বর মুখোপাধ্যায়ের ছবি দেখি, কিন্তু সারা ছবি জুড়ে আপনাকে দেখি না দেখি না সেই মানুষটাকে যে সগর্বে বলতে পারেসিনেমার জগতটা আদ্যোপান্ত শুয়োরের বাচ্চায় ভরে গেছেমাফ করবেন আপনার থেকে খানিকটা স্পর্ধা রপ্ত হয়েছে, তাই সামান্য জ্ঞানের ঝুলি নিয়ে এর চেয়ে ভালো ভাষায় আর লিখতে পারলাম না যাই হোক ভালো থাকবেন প্রণাম নেবেন





                                                  ইতি



      অন্ধকার গলিতে হারিয়ে যাওয়া, সমঝোতা করতে না পারা এক বঞ্চিত বাঞ্চত


লেখাঃ আদিত্য।
ছবিঃ ওয়েব।