“শব্দ” দেখা
শোভা বাজার মেট্রো স্টেশনে নামতেই একটা টেক্সট পেলাম “ তোর সাথে ছবি দেখব বলে কলকাতা এসেছিলাম আর তুই কিনা একা চললি “শব্দ” দেখতে?” । এমন অভিমানী স্বর আমাকে ঘিরে ফেলার আগেই দুকানে হেড ফোন গুঁজে নিই আমি; চোখে পড়ে উত্তর কলকাতার সেই বিখ্যাত রক আজ যেগুলো সিমেন্ট মুড়ে বসার অযোগ্য করে রাখা হয়েছে যাতে আর কোন কুঁড়ে বাঙালি তৈরি না হয়। এমন সব দৃশ্য পেরিয়ে যখন স্টারে পৌঁছলাম ততক্ষণে সেখানে কালচারাল বাঙালিদের ভিড়ে বৈশাখের গরমে বেশ ক্লান্ত। বিরাট লাইন দিয়ে আমরা ঢুকলাম শব্দ দেখতে। দু পাশ থেকে ভেসে আসা বিভিন্ন সব্দে আমি বেশ পুলকিত হলাম যে “ এ ছবি শুধু টাকার অভাবে হলিউড কে ছুতে পারল না বা বহুকাল পরে বাংলা ছবি আবার আন্তর্জাতিক মতামত কে উস্কে দিতে পারে”। দু বার দেখে ফেলেছেন এমন মানুষের মতে এটা দেখলে নাকি কোন সমস্যাকে আর জটিল বলে মনে হবে না, ছবিটি নাকি খুব সহজ করে বোঝানো হয়েছে.........ইত্যাদি।
রুপ দি’র টাকার টিকিট ও বিদেশি মাখন মাখানো ভুট্টা (বাটার পপকর্ন) সহযোগে আমাদের “শব্দ” দেখা সুরু হল। কিন্তু শব্দ কই? প্রথম দু মিনিটেই আমাদের দুটো আলাদা দৃশ্যে বুঝতে বাধ্য করা হয় আপনারারা শব্দ দেখতে আসেন নি এসেছেন শব্দের গুরুত্ব বুঝতে। যেখানে তারক কে নিয়ে ছবি শুরু, সে একজন ফোলিও আর্টিস্ট । আমরা ধীরে ধীরে তারকের কাজের সাথে একাত্ম হয়ে পড়ি ,তখন ঝটকা আসে ;সাথী ডক্টর আসেন তার স্যারকে নিয়ে কঠিন জ্ঞান দান করে আমাদের কে বুঝিয়ে দেন তারকের সমস্যা। যে সমস্যা আমরা বুঝতে চাইনা। ছবির কুড়ি মিনিটের মধ্যে প্রশ্ন আসলে ছবির বিষয় কি?
তারক আর তার সমস্যা নাকি তারক কে ঘিরে থাকা কিছু অবান্তর ভারি মানুষ আর তাদের অপ্রয়োজনীয় জ্ঞান। ছবির সময় যত বাড়তে থাকে তত আমাদের ধৈর্য্য কমতে থাকে । তারক কই? এত শুধু শব্দের অত্যাচার , শুধুমাত্র ডাবল চ্যানেল সাউন্ড ব্যবহার করে দুটো প্যারালাল গল্প বলার চেষ্টা। শুধু মাত্র বাংলার মানুষকে সস্তা ভাবে গল্প বেচতে গিয়ে আমার খুব প্রিয় পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি এত বড় একটা সম্ভবনা কে জলে দিলেন কেন? মানছি এমন বিষয় নিয়ে ছবি এর আগে বাংলা কেন ভারতে হয়নি সে দিক থেকে আপনি অসাধারণ একটা ছবি করেছেন। কিন্তু এমন বিষয় নিয়ে যিনি ছবি ভাবতে পারেন আমি বিশ্বাস করি তিনি নিঃস্পৃহ ভাবে চেষ্টা করলে এ ছবিটি চিরকালীন ছবি হতে পারত।
কেন এত পরস্পর বিরোধী মতামত এছবি জুড়ে? কেন ভিক্টর ব্যানার্জি এত অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন? শুধু মাত্র চুর্নী গাঙ্গুলিকে সফল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে স্বীকৃতি দিতে? যদি তাই হয় তবে তারকের সমস্যা যথেষ্ট । কারন আনন্দ রাগ অভিমান সব এক্সপ্রেসন এক হয়ে যাওয়া ডক্টর কে কিন্তু মাঝে মাঝে বেশি মনে হয়। আর একজন রেকর্ডিস্ট
দিব্যেন্দু এর চরিত্রে সৃজিত মুখার্জি কে কেন বয়ে বেরানো ? শুধু মাত্র শেষ দৃশ্যে এসে যে তার সাফল্যের গল্প বলে যাবে বলে? নাকি প্রচণ্ড ভাল চরিত্র অভিনেতা ঋত্বিক এর বিপরীতে একজন ভারী নামের মানুষ দরকার ছিল বলে?
আবার যদি ওপরের সব যুক্তি মিথ্যে হয়ে এটা শুধু শব্দ ও ফোলে বা ফোলিও আর্টিস্ট এর সমস্যার ছবি হয় সেখানে কেন একটাও ট্রানজিসন সটে সাউন্ড মূল চরিত্র হবে না? কেন শুধু মাত্র ইমেজ ব্যবহার করা হবে? কেন আর্টিস্ট কে চেপে ধরে কোণঠাসা করা হবে? কেন ডাবল চ্যানেল সাউন্ডে নয়েজ চোখ করে আমাদেরকে বারবার আঘাত করে বোঝানো হবে এটা অন্য বিষয়ের ছবি? ছবির দৃশ্য বরং আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবে এ ছবির অন্য বিষয়। মনে পড়ে যায় ‘অন্দরমহল’ নামক এক ছবির কথা যেখানে শুধু মাত্র খাটের আওয়াজ দিয়ে সঙ্গম বোঝাতে গিয়ে একটা আস্ত ছবি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল চোখের সামনে। আমাদের মত কম বোঝা দর্শকদের মাথা তো প্রথমে অর্ধেই ঘুরে গেছে এটা বুঝতে যে, তারক আর তার শব্দ এবং পরে শব্দ কেন্দ্রিক তারকের সমস্যা ও কিছু মানুষের অপ্রাসঙ্গিক যোগদান ও জিতে যাওয়া। কেন দ্বিতীয় অর্ধে তারক ছবি থেকে হারিয়ে গেল? আর তারক কিছুতেই ছবিতে ফেরে না , ফেরে জোর করে চেপে ধরা একটা মানসিক রুগী যার বাঁচা-মরা দেখতে আমরা এই গরমে ছবি দেখতে ভিড় করেছিলাম তার অন্তিম ফলাফল-এর জন্য আর একটাও ইমেজ রাখেন নি পরিচালক। কালো পর্দাতে হরফে ভেসে ওঠে ৪৬৮ দিন বাদে তারকের সুস্থ হয়ে ওঠাই আবার বীমা কোম্পানিতে যোগদানের খবর। শব্দ অনেক আগেই ছবি থেকে হারিয়েছে শেষ দিকে ইমেজও হারিয়ে গেল। আসলে সম্পাদক মৈনাক ভৌমিক ইমেজ নিয়ে এত বিলাসিতা করেন যে, শীর্ষ রায় এর তোলা কিছু অসাধারণ কমপ্লিমেন্টারি ইমেজ অবহেলাতে নষ্ট হয় ছবির বিভিন্ন সময়ে।
আবার যদি ওপরের সব যুক্তি মিথ্যে হয়ে এটা শুধু শব্দ ও ফোলে বা ফোলিও আর্টিস্ট এর সমস্যার ছবি হয় সেখানে কেন একটাও ট্রানজিসন সটে সাউন্ড মূল চরিত্র হবে না? কেন শুধু মাত্র ইমেজ ব্যবহার করা হবে? কেন আর্টিস্ট কে চেপে ধরে কোণঠাসা করা হবে? কেন ডাবল চ্যানেল সাউন্ডে নয়েজ চোখ করে আমাদেরকে বারবার আঘাত করে বোঝানো হবে এটা অন্য বিষয়ের ছবি? ছবির দৃশ্য বরং আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবে এ ছবির অন্য বিষয়। মনে পড়ে যায় ‘অন্দরমহল’ নামক এক ছবির কথা যেখানে শুধু মাত্র খাটের আওয়াজ দিয়ে সঙ্গম বোঝাতে গিয়ে একটা আস্ত ছবি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল চোখের সামনে। আমাদের মত কম বোঝা দর্শকদের মাথা তো প্রথমে অর্ধেই ঘুরে গেছে এটা বুঝতে যে, তারক আর তার শব্দ এবং পরে শব্দ কেন্দ্রিক তারকের সমস্যা ও কিছু মানুষের অপ্রাসঙ্গিক যোগদান ও জিতে যাওয়া। কেন দ্বিতীয় অর্ধে তারক ছবি থেকে হারিয়ে গেল? আর তারক কিছুতেই ছবিতে ফেরে না , ফেরে জোর করে চেপে ধরা একটা মানসিক রুগী যার বাঁচা-মরা দেখতে আমরা এই গরমে ছবি দেখতে ভিড় করেছিলাম তার অন্তিম ফলাফল-এর জন্য আর একটাও ইমেজ রাখেন নি পরিচালক। কালো পর্দাতে হরফে ভেসে ওঠে ৪৬৮ দিন বাদে তারকের সুস্থ হয়ে ওঠাই আবার বীমা কোম্পানিতে যোগদানের খবর। শব্দ অনেক আগেই ছবি থেকে হারিয়েছে শেষ দিকে ইমেজও হারিয়ে গেল। আসলে সম্পাদক মৈনাক ভৌমিক ইমেজ নিয়ে এত বিলাসিতা করেন যে, শীর্ষ রায় এর তোলা কিছু অসাধারণ কমপ্লিমেন্টারি ইমেজ অবহেলাতে নষ্ট হয় ছবির বিভিন্ন সময়ে।
মন খারাপ হয় এই ছবি শুধু শব্দ নির্মাণ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে কিন্তু যদি আর এক্টু যত্নবান হওয়া যেত হয়ত পুরস্কারের উর্দ্ধে থাকতো “শব্দ” । তবুও ঋত্বিক কে মনে থাকে তার সাবলীল অভিনয় এর জন্য তার চোখ এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলাতে পেরেছেন তিনি এই ছবির বিভিন্ন পর্বে। বিশেষত মানুষের কথা শুনতে শুনতে যান্ত্রিক শব্দে মোহিত হওয়া পর্যন্ত অংশে ঋত্বিক নির্ভুল।
অনেক প্রশংসা বা অনেক প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও এটা ভাল দিক যে এমন বিষয় নিয়ে ছবি হচ্ছে আমাদের শহরে , এমন ছবি আর আসুক আর অনেক তারক এর কথা আমরা দেখি তবেই না সিনেমার কথা বলা সিনেমা তৈরি হবে।
পরিচালকঃ কৌশিক গাঙ্গুলি
প্রযোজকঃ গৌতম কুণ্ডু
সিনেমাতগ্রাফিঃ শীর্ষ
রায়।
অভিনয়ঃ ঋত্বিক চক্রবর্তী
, রাইমা সেন , চুর্নী গাঙ্গুলি প্রমুখ।
bhalo lglo pore...tobe shobder jnyoi j puroshkrito hoechhe...etai upojukto bole amr byaktigoto vabe mone hoy...
উত্তরমুছুন