অন্যমনস্ক ও রূপবান্ : শব্দের অন্য উঠোন
আমাদের সকলেরই এরকম হয় মাঝে মাঝে। এটা সেটা কত কী না ভিড় করে আসে মনে। ভিড়ে ঠাসা বাস।জানালার ধারে বসে তাকিয়ে আছি বাইরের দিকে। কত কী যে মনে আসছে চলেও যাচ্ছে। তৈরি হচ্ছে দৃশ্য, ভেঙে যাচ্ছে। সাজাতে পারছি না কিছুতেই। হঠাত খেয়াল হল সিঁথির মোড় পেরিয়ে যাচ্ছি। কোনোরকমে নেমে পড়ি। সাময়িক বিস্মৃত হই এই কোলাহলে ভরা যাপনের জগতটা। কিন্তু তারক মাঝে মধ্যে নয় প্রায়সময়ই হারিয়ে যাচ্ছে। স্ত্রী কত কী বলছে,চায়ের দোকানের বন্ধু, অফিসের জরুরি উপদেশ সব ছাপিয়ে তারক সেঁধিয়ে যায় অন্য একজগতে।
সমস্যাটা সেখানেই। তারক কি শুনতে পায় না? নাকি চায় না? মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলে। বাবা,বউ নিয়ে তার পরিবার। স্বাভাবিক ভাবেই প্রেমময়ী(নাকি স্নেহময়ী!) বউ এবং অন্যান্যরাও অদ্ভুত এই ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত। অথচ তারকের দাবি শব্দ নিয়েই তার কাজ। আর সে শুনতে পাবে না!! হ্যাঁ, তারক ফোলিও আর্টিস্ট। অনেকগুলি ছবিতে সে ফোলিওর কাজ করেছে।পায়রা ওড়ার শব্দ পাতার ঝটপটানিতে,মুড়ির কৌটো নাড়িয়ে টয় ট্রেন, নখে নখে বোতাম আটকানো ,কাগজ মচমচিয়ে হাতের ভিতর আগুন জ্বেলে ফেলে সে।
বন্ধু, সহকর্মী দিব্যেন্দু তারকের জন্যে একজন সাইকিয়াটিস্ট ঠিক করে, স্বাতী। যাবতীয় পরিক্ষার রিপোর্টে দেখা গেল তারক পাশ। তার কানে কোন সমস্যা নেই। তাহলে ?
এই জিজ্ঞাসা চিহ্নটাই আসলে ছবিটির বিষয়। পরিচালক যার ওপর গুরুত্ব দিলেন- একজন ফোলিও আর্টিস্টের নিজস্ব জগত আর আমাদের দৃশ্যমান জগতের মধ্যে দাঁড়িয়ে তারক। স্বাতী একবার প্রশ্নটি তুলেছে তার স্যার ডঃ সেনের কাছে ঃ আমরা যা বলছি তা শোনার সত্যি কি কোনো প্রয়োজন আছে তারকের? নাকি শব্দের সেই নূতন জগতটাই ভাল,যা তারকের নিজস্ব তৈরি!!
হঠাত জীবনানন্দের কথা মনে পড়ে যাবে কি? নিজস্ব জগতের সেই বাসিন্দাটি, যিনি অদ্ভুত আঁধার পেরিয়ে এই শহরের ট্রামের তলায় চলে গেছিলেন।মগ্ন তারক বিশ্বাসই করতে চায় না তার অসুখের কথা। চাকরি হারিয়েও যে কিনা বাড়ি বসে চায়ের কাপ টেবিলে রাখতে গিয়েখেয়াল করে তার কাজে ভুল রয়ে গেছে। ধীরেধীরে খালি হতে থাকা কাপ টেবিলে রাখার সূক্ষ্ম শব্দনূতন করে আবিষ্কার করে সে।
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে উঠে ফ্যান,দেওয়াল ঘড়ি বন্ধ করে সে কি শব্দ বন্ধ করে দিতে চায়?কিন্তু জীবন?তার অনুরণন!!সে শুনেছে কারুর কাছে, শব্দ নাকি ব্রহ্ম।
বন্ধু দিব্যেন্দু, ডঃ স্বাতি আর তারকের স্ত্রী রত্না কিভাবে স্বাভাবিক সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনল তারককেসেটা পরিচালকের মুনশিয়ানা। আশাবাদী পরিচালক তা ভাল ভাবেই দেখিয়েছেন। ছবির আড়ালে থাকা শ্রম এবং শিল্পির দাম যে কত ন্যূন তা উঠে আসে সংলাপেই। যে মাইক্রোফোন তারক রাগের মাথায় ভেঙে ফেলে,দশ বারোটি ফোলিও করেও তার দাম উঠবে না। শিউরে উঠি!! জীবনানন্দ গভীর রাতে সব্বাই ঘুমিয়ে পড়ার পর পেন্সিলে খসখস করে লিখতেন সেইসব ছাইভস্ম! নিঝুম রাত্রে হেঁটে চলা মাতালের পদক্ষেপ অনুসরণ করছে তারক। সৃষ্টি করছে শব্দে'র অন্যতম দৃশ্য......
লেখাঃ ঊষশী কাজলী
পরিচালকঃ কৌশিক গাঙ্গুলি
প্রযোজকঃ গৌতম কুণ্ডু
সিনেমাতগ্রাফিঃ শীর্ষ
রায়।
অভিনয়ঃ ঋত্বিক চক্রবর্তী , রাইমা সেন , চুর্নী
গাঙ্গুলি প্রমুখ।
porlam ..valo laglo.
উত্তরমুছুন