রবিবার, ৫ মে, ২০১৩



গয়না ভর্তি অন্তঃসারশূন্য বাক্স

নন্দনের বাইরে এই গরমের দিনে ভরদুপুরেও প্রেমিক প্রেমিকা সহ আপামর বাঙালির বেশ লম্বা লাইন পড়েছে। দেখলেই বোঝা যায় বাঙালি বুঝি এখন বাংলা ছবিকে ভালোবাসে। নইলে এত কষ্ট করেও দেখতে আসে নাকি। কিন্তু দেখার পর সেই খুঁতখুঁতানি নাক সেটকানি যাবে না। আ মোলো দেখতে এসছ দেখ না ভাই খারাপ ছবি হতেই পারে তার জন্য নাক সেটকানোর কি আছে। এত টাকা করে বানিয়েছে তুমি ৩০ টাকা দিয়েই খাল্লাস। দেখ না চুপটি করে ২ঘন্টা ১৫ মিনিট বসে। হাসো, ফিসফিস করে কথা বল, মেসেজ করো, কচমচ করে আলুভাজা খাও কেউ কিচ্ছু বলবে না। কারন তোমার মত সবারই অবস্থা এক, সবাই হাই তুলছে, আর কেউ কেউ আমার মত চুল ছিঁড়ছে। না বিশ্বাস কর চুল ছেড়া আমার অভ্যাস, এর সাথে ছবির কোন লিঙ্ক নেই। এত পরিশ্রম করে বানানো বস্তুকে নিয়ে এভাবে তো আমি আর সমলোচনা করতে পারিনা। পাছে জেলবন্দি হতে হয় যদি আবার। আগেও ভাই কেস খেয়েছি। আর না, সোজা সাপটা লিখছি পড়ার হলে পড়, না হলে পোড়ো না, ভালো না লাগলে সে দায়ভার আমার নয়।

                                   


হ্যাঁ তো কি ছবি নিয়ে কথা বলছিলাম। “গয়নার বাক্স”। নিপাট খাঁটি বাংলা ছবি। খাঁটি কথা বলার কারন সংলাপে ব্যবহৃত ভাষা। যা আমাদের সাথে মিল নেই, আছে ওপার থুড়ি বাংলাদেশের সাথে। কারন ওরাই তো খাঁটি বাঙালি, আমরা তো বাইচান্স হয়ে আছি। যাকগে ভেঙ্কটেস ফিল্মের ব্যানারে অপর্ণা সেন পরিচালিত ছবি। ছবির কাহিনীকার শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। গল্প বলার কোন অবকাশ নেই তাই আমি গল্পের দিকে আর এগলাম না, গল্প বলে দিলে আপনারা যদি আর না দেখেন তাহলে বিক্রি হবে কি করে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালে ছবি শুরু। আর শেষ মুক্তি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এসে। ছবিতে কি আছে? স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালের কি ছবি আমরা দেখতে পাই? না সে সুযোগ নেই, কারন ক্যামেরা তখন ঘরের মধ্যে। ছবির চরিত্রেরা সকলেই ওপার বাংলার থুড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরের, মাঝে মধ্যেই তাদের মুখে বারবার তাদের বসতভূমির নাম আসে। তাই সহজেই মনে থাকে। দেশভাগের সময় তারা এদেশে চলে আসে, নবাবগঞ্জে তারা থাকে। সীমান্তবর্তি এক এলাকা। কিন্তু প্রশ্ন হল তারা তো ছিল ফরিদপুরের জমিদার, এপারে এসেও তারা কিভাবে যশহীন আভিজাত্যহীন থেকেও জমিদার তকমাটা নিজেদের গায়ে সেটকে অতবড় একটা বাড়ি পেয়েগেল কিভাবে? তারমানে ধরে নেওয়া যেতে পারে যে এপার বাংলাতেও তাদের জমিদারী ছিল। তাহলে শুধু মাত্র একটা বাড়িই আছে? জমিজমা কিছু নেই? না থাকলে তো অন্তত দুই ছেলেকে মাছ ধরতে দেখতাম না, আর ছোটছেলেকে বউকে বলতেও হত জমিজমা সব ফরিদপুরেই আছে। প্রশ্ন থেকে গেল উত্তর নেই।

চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা যায় যদি তাহলে প্রশ্ন হয় যে যে জমিদারদের অত সম্পত্তি ছিল, অত প্রভাব ছিল তারা কিভাবে দেশছাড়া হলেন, আর হলেনও যখন তখন সেই মাটির প্রতি টান টা কোথায় গেল? না বলা জেতেই পারে যে সকলের কি আর ভিটের প্রতি টান থাকে, নাও থাকতে পারে। ঠিক আছে ধরে নিলাম যে তাদের কোন টান নেই, কিন্তু তাও তারা ঘরের বউ তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থান থেকেই আনেন। তারবেলা? যখন টাকা পয়সার অভাব চোখরাঙানি দেয় তখন ঘটিবাটি বেঁচে দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম এসে পরে তখনও কি একটুও আফসোস চোখে পড়বে না ভিটে ছাড়ার? প্রশ্ন থেকে গেল উত্তর নেই।

এবারে আসি নারীসুলভ মানসিকতার উদাসীনতা প্রকাশ করার ভঙ্গিমায়। প্রশ্ন হল আমি দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে কি বলতে চাইছি? যা বলতে চাইছি তার জন্য কি প্রয়োজন। ক্যামেরার ফ্রেমের মধ্যে কোন ঘটনাটা ঘটা প্রয়োজন আর কোনটা অপ্রয়োজনীয়। যদি অপ্রয়োজনীয় কিছু ঘটে তাহলে তার কারন ব্যাখ্যা করা দরকার। দর্সকের কাছে পরিষ্কার হওয়া দরকার কেন ঘটছে। জমিদার বাড়ির কন্যা কৈশোরেই বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আবার বছরখানিকের মধ্যেই বিধবা হয়ে যায়। এহেন পরিসরে বিধবার বেশভূষা পরিধান করানোর সময় তার পশ্চাৎ দেশের নগ্ন দৃশ্য যে বন্দি হয় ক্যামেরায় তার প্রয়োজনিতা কোথায়? বলা যেতেই পারে এ ছিল তৎকালীন সমাজের ওপর জোরালো এক থাপ্পড়। ১১ বছর বয়সে দেহ যে বিবাহ উপযোগ্য হয়ে ওঠা না, শারীরিক গঠন যে মিলনের সমতুল্য হয় না, এ যেন তারই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু প্রথম কথা হল আমরা অনেকেই জানি বাড়ির কন্যাকে তখন অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হত। বিয়ে দিয়ে বেশীরভাগ সময়ই নিজগৃহেই রেখে দেওয়া হত। তবে ব্যাতিক্রমও ছিল। কিন্তু অতবড় একজন জমিদার বাড়ির কন্যাকে কি স্বামী গৃহে পাঠানো হবে? তাহলে কি মিলন সম্ভব হয়েছিল? দরকার নেই ছেড়ে দিন এসবের। আজকে ২০১৩ তে আমরা সকলেই জানি সেই কবে বিদ্যাসাগর বাল্যবিবাহ প্রথা রদ করেছিলেন। আজকের সমাজে সেটা কঠিন অপরাধ। তাই পর্দায় দেখানো হলে আমরা সকলেই বুঝতে পারি এটা অপরাধ, আলাদা করে না বললেও। তাহলে কিসের জন্য ছিল সে নগ্ন দেহের উত্তোলন? সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের কথা বলছিল কি? না সেটাও কি করে সম্ভব। আমরা তো শিক্ষিত নাকি। এটা তো জানি ওটা মিলনের বয়স নয়। তাহলে কিসের জন্য? শুধুই কি দর্সকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য? নাকি বোঝানো এ যুগের মত সে যুগেও নারীর শরীর ভোগপন্য ছিল? এত যুগে যুগে সত্যি। নাহলে তারাই কি মুখ খুলে নারী সুরক্ষার কথা বলে যারা তাদের ছবিতে নারীর দেহকে বিক্রি করে। প্রশ্ন থেকে যায় উত্তর নেই।

এরপর চলে আসা যাক শারীরিক চাহিদার কোথায়। বিবাহের পর স্বামীর সুখের অভাব। পূর্ণ যৌবনে শারীরিক চাহিদা মাথা চাড়া দেবেই সে মেনে নেওয়া যায়। চাহিদার বশবর্তী হয়ে বিলাস করার বাসনা নিয়ে তার দিকে এগোনোও যায়। কিন্তু বিচার করলে দেখা যাবে বাড়ির সুঠাম বলিষ্ঠ অবাঙালি কাজের লোকের দেহের লোভে যখন জিভ লকলক করে তখন শুধুমাত্র তা শারীরিক চাহিদাই সেখানে ভালোবাসার কোন স্থান নেই। তাই কামনা পূর্ণ হওয়ার আগেই তার যখন মৃত্যু হয় তখন আবেগতারিত হয়ে পড়াটা বাস্তবিক। কিন্তু তারপর কি আর অন্য কারোর প্রতি কামনার টান আসতে পারে না সেই ভরা যৌবনে? যার জন্য তাকে মৃত্যুর পরও আফসোস করতে হয়। তখনও লোভ হয় দেখার,শোনার কিভাবে পূর্ণ হয় শারীরিক চাহিদার স্বাদ। তাই সে নষ্ট করতে চায় অন্যের সুখের সংসার। কিন্তু আবার সেই বলে পরপুরুষের সাথে মিলনে লিপ্ত হতে, তার ভালোবাসার স্বাদ নিতে। তাহলে এই মহিলা কি চায় স্বামীর সুখ ত্যাগ করে পরপুরুষের সঙ্গিনী হতে সবাইকে? তাকে বলতেও হয় সে কথা যে এক পুরুষের থেকে অনেক থাকা বেশ ভালো। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠতে পারে যে সেই সময় আজকের যুগেও হয়ত প্রযোজ্য যে পুরুষের যদি একের বেশী সঙ্গিনী থাকতে পারে তা হলে নারীর নয় কেন? তসলিমা নাসরিনও কিছুদিন আগেই এই এক সম্পর্ক, এক বিয়ে, এক প্রেম এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। ছবিতেও দেখি আমরা বাড়ির গৃহকর্তা থেকে শুরু করে ছেলেদেরও একের বেশী নারীসঙ্গ আছে। কিন্তু আজ যখন নারী পুরুষ সমানাধিকার নিয়ে লড়াই চলে তখন তো তা ছিল না। এই গোঁড়া হিন্দু সমাজ সেই সময়ও নারীদের সমানাধিকার দেয়নি আজও মুখে যতই চেঁচাক বাস্তবে তা পরিস্ফুটও হয়নি। তা না হলে ছেলে নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করতে পারে কিন্তু বোনের প্রেমের ক্ষেত্রে সেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াত না। কিন্তু যদিও আজকে আমরা মেনে নি যে সমানাধিকার সকলের প্রাপ্ত হবে, তা সে পুরুষ হোক বা নারী। তাহলেও কি নারীর একাধিক পুরুষ সঙ্গ আমরা যারা নিজেদের খোলা মনের মানে ওপেন মাইন্ডেড ভাবি তারাও কি মেনে নেব? তা হলে আজকে যখন এ প্রশ্ন অবান্তর, তাহলে সেই সময় ১৯৪৯ সালে তা কি করে সম্ভব ছিল? প্রশ্ন থেকে যায় উত্তর পাওয়া যায় না।

ধীরে ধীরে আমরা এবারে শেষের দিকে এগোতে থাকি। এগোতে এগোতে হঠাটি এসে পরে গাল ভরা দাড়িওয়ালা এক ভদ্রলোক। আপাতভাবে তাকে দেখে প্রথম দর্শনেই আমার মনে হল এক কাবুলিওয়ালা। পরে জানা যায় তিনি পূর্ববঙ্গের একজন। অকস্মাৎ তার পর্দায় আগমন একটা হাই পাওয়ার ঝটকা দেয়। প্রতিরাতে তিনি বিবাহিত এক মহিলার পিছু নেন। মহিলাকে তার পিছু নেওয়ার ঘটনা জানান দেন তার পিসি শাশুড়ির ভূত। মহিলা জানতে পারে এবং এই পরিস্থিতিতে তার স্বামীর অবর্তমানে তাকে পিসি তার নিজস্ব কামনার লোভে বশীভূত হয়ে সাময়িক মিলনে মিলিত হতে বলছেন। মহিলাও তার ভাবধারা বজায় রাখেন, রুখে দারান এই লোভনীয় প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। যা নিতান্তই কাম্য। পরদিন দেখা হলে তিনি রীতিমত ধমকে দেন ভদ্রলোককে এহেন কার্য করার জন্য। কিন্তু ভদ্রলকের কথা শোনা যায়না, রেলগাড়ি চলে যায়। আমি আপনি যখন এতদূরে বসেও শুনতে পাইনা, আসা করা যায় ভদ্রমহিলাও শুনতে পান না। না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার শোনার মধ্যে কোন আগ্রহ থাকে না। না থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এরপরও পিসিমার লোভনীয় প্রস্তাবের ভান্ডার অটুট থাকে। এরপরও এক সাক্ষাৎকারে ভদ্রলোক কি যেন বলতে যায় কিন্তু শোনা যায়। কিন্তু তার আগে ভদ্রমহিলার বাড়ির চৌকাঠে ভোরের আলো ফোটার আগে সে এক গোলাপ নিবেদন করে রাখে, ভদ্রমহিলা বিছানা ছেড়ে উঠে তার কাছে গিয়ে পৌঁছানোর আগেই সে পগারপার। কিন্তু দুজনের চোখে চোখ মিলেছিল। তাহলে কেন অপেক্ষা নয়, সে কি তাহলে চোখের ভাষা বোঝেনি? কিন্তু তার আগেই তো সে নিজেকে একজন বলিষ্ঠ প্রেমিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তাহলে কিসের জন্য চলে যাওয়া? ধরে নেওয়া যেতে পারে তাহলে সে বুঝে গেছে পরকীয়া প্রেমে তার আর গতি হবে না তাই বিদায় নেওয়াই ভালো। বিদায়কালে নিজের চিহ্ন স্বরূপ একটা গোলাপ। কিন্তু সন্ধ্যেতেই আবার দেখা তার সাথে, আর এবারেও কোন কারন বশত সম্ভবত বর্জ্র বিদ্যুতের শব্দের কারনবশত তার কথা শোনা যায় না, কিন্তু দেখি ভদ্রমহিলা এক তীব্র শ্লেষ্মা জরিত এবড়োখেবড়ো ভঙ্গিতে ঘরে আসতে থাকে আর তীব্রভাবে দরজার ছিটকানি নারাতে থাকে। বোঝা সম্ভব এক গভীর ক্ষতয় বা শারীরিক উত্তেজনায় তিনি উদ্দাম। ক্ষত এখানে আসবে না কারন এখন সেরম কিছুই ঘটেনি। তাহলে কি? শারীরিক উত্তেজনা? তার মানে বলতে চাইছি কি যে ফেরার সময় যে দেখা হল ভদ্রলোকের সাথে তখন সামথিং হ্যাপেন? কি হতে পারে? ভদ্রলোক তাকে রিফিউস করে দিয়েছে? কেননা সে তখন উদ্দাম ছিল গোলাপ পাওয়ার পর। জানা যায় না। কিন্তু বোঝা যায় কারন তৎক্ষণাৎ তার স্বামীর আগমনে সে তার স্বামীর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আদরে, সোহাগে ওষ্ঠ চুম্বনের মাধ্যমে তার প্রকাশ ঘটায়। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হল সেই ভদ্রলোক যিনি নিজেকে প্রেমিক হিসাবে দাবী করে অকস্মাৎ এসে পড়লেন, তার নৈতিক ভাবধারাটা কোথায়? সে কি বলতে চায়? সেকি জানতে পারে সেই ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলে? বলা যেতেই পারে এটা একটা রুপক প্রেম। যে প্রেম হঠাৎ একটা ঝড় একমুঠো ঠাণ্ডা বাতাস আর এক পশলা বৃষ্টি।  কিন্তু এসবের কিছুই দেখা পাওয়া যায় না। পরবর্তী কালে যখন জানা যায় সে ভদ্রলোক একজন ভিনদেশী কবি, এবং এখানে এসে এই ভদ্রমহিলার প্রেমে পরে হাবুডুবু খেয়ে গোটা চারেক কবিতা তার চরণে সমার্পন করে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেন। সেই পরিসরে তখন তার ব্যার্থ প্রেমের এক টুকরো ছবিও চোখে পড়ে না। শুধু বোঝা যায় বারবার লোভনীয় প্রস্তাবের কথা শুনে লোভের বশবর্তী হয়ে ভদ্রমহিলাও তার স্বামীর অবর্তমানে সেই কবির সঙ্গে সোহাগ করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু এই প্রেমের কোন সংজ্ঞা ছবিতে নেই, নেই প্রেমের কোন আবেগ, নেই সোহাগ কোন কারন, হঠাৎই যেন এসে উপস্থিত হল আর গোটা চারেক ফুটেজ খেয়ে চলে গেল। প্রশ্ন থেকে যায় উত্তর মেলে না।

এবারে আসা যাক ছবির শেষের অংশে, মুক্তিযুদ্ধের সময়। সকল বাঙালির মনের এক বেদনাদায়ক পিরিয়ড। আপামর বাঙালি তা সে এপারের হোক আর ওপারের, (এবারে এপার ওপার তা বাধ্য হয়েই লিখলাম, কারন সীমান্তের কাঁটাতার তখন এপার ওপারকে যতই আলাদা করুক, কিন্তু এই সময় বাঙালি মনের দিক থেকে সকলে এক ছিল।) কোমর বেঁধে নেমেছিল মুক্তির জন্য, সেই মুক্তির চিহ্ন আমরা দেখি পরোতে পরোতে, কখন বা আন্ডার গ্রাউন্ডের পোস্টারে, কখনও বা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদে, কখনও বা ফরিদপুরের বাসভূমিতে খানসেনাদের তদারকি করার মাধ্যমে। সবই ঠিক ছিল এই পরিসরে কিন্তু একটাই দৃশ্য বড় কেমন যেন, অন্তত আমার তো বরই অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। দুটো মন যখন জ্ঞানের পরিসরে অটুট, দুটো মন যখন স্বাধীনতা লাভের আনন্দে উদগ্রীব, দুটো মন যখন ভালবাসায় পরিপুর্ন, দুটো মন যখন দীর্ঘ সময়ের মিলনের বিরতির বিরহে বেদনাতিত এমন সময় সবুজ ঘেরা পরিবেশের মাঝে দাড়িয়ে যখন স্বপ্ন দেখছে যদিওবা যুদ্ধে প্রাণ যায় তবুও যদি ফিরে আসি তাহলে “আবার আসিবো ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়”। তখন ওষ্ঠ মিলনের ছোঁয়ার বদলে যদি দুটি বাহুবন্ধন সবুজ চিরে এগিয়ে যেত, আর কণ্ঠ জুড়ে বাংলায় ফিরে আসার গান আবর্তিত হত, ওষ্ঠ চুম্বনের মাঝে তা থেমে যেত না, তাহলে বোধহয় দুই বাংলার মাটির ঘ্রাণ যে এক তার সুগন্ধ মনে এসে লাগতো বলে একান্ত ভাবে আমার মনে হয়। গল্পের বাইরে গিয়ে এ গল্প ছবিতে বসানো হয়েছে জোড় করে, কোন প্রয়োজন ছিল কি? আমরা কি জানতে চেয়েছি গয়নার বাক্সের গয়না কি কাজে লাগবে? শীর্ষেন্দুবাবু কি লিখেছিলেন? আসলে ঐ সোশ্যাল মেসেজ টুকু না দিলে বোধহয় চূড়ান্ত আঁতলামোটা করা যায় না, নিজেকে শিক্ষিত পরিচালক হিসাবে প্রমাণিত করা যায় না। তাই বোধহয় মাঝে মাঝে এই ঠুনকো টোকা ঠিক তো? প্রশ্ন থেকে যায় উত্তর পাওয়া যায় না।

গল্প নিয়ে তো একটা জোরদার আলোচনা করলাম বোঝাবার চেষ্টা করলাম কি হল আর তা কেনই বা হল। এবারে কিছু ঠুনকো টোকার দিকে আসি ভেবেচিন্তে বলতে হবে উহা কি সঠিক ছিল নাকি উহা কি ছিল কে জানে? গুরুচণ্ডালী দোষ তো ঠিক ধরেছেন। ছবির যে কথা এবারে বলব তা আসলে গুরুচণ্ডালী দোষের মতই। অতীতকে আধুনিকতার সাথে জড়িয়ে ফেলেছেন উনিপ্রিয় গোপাল বিষয়ী এর বিজ্ঞাপন চলাকালিন ভাগ্যিস উনি বলে ফেলেননি যে যে কোন অনুষ্ঠানে চলে আসুন গড়িয়াহাটের মোড়ে হাল্কা বিপরীতে। নইলে যে কি কেলেঙ্কারি হত। তবে ফায়দা কিন্তু আছে ভুলে গেলে চলবে না নারীবাদী বলে যার ছবি দাবী করে এবারে কিন্তু নারীদের একটা ফায়দা হয়েছে, বেশ কিছু নতুন শাড়ির নাম জানা গেছে কেনা যাবে। কিন্তু মুশকিলটা হল সবই তো ঠিক আছে আপনি শাড়ির বিজ্ঞাপন দিলেন সেটাও মেনে নিলাম কিন্তু দিদি পঞ্চাশের দশকে অমন ক্যাটরিনা কাইফ মার্কা বৃষ্টি ভেজা সিল্কের শাড়ি সত্যিই কি পাওয়া যেত আমি ঠিক জানি না? আপনার ছবি দেখে মনে হয় পাওয়া যেত নিশ্চয়। কিন্তু কারা পড়ত একটু বলবেন? মানে ঐ যে যারা রক্ষিতা হয় তারাও তো দেখলাম এসে ভালো ভালো বেনারসিই কিনছে, মানে তারা অন্তত তো ঘোমটা দিয়ে বেরাতেন না তো তারা পরতেই পারেন তাই বললাম। আবারও প্রশ্ন উত্তর নেই।

এবারে একটা মস্তবড় প্রশ্ন যেটা অন্তত সবার মনেই এসেছে। ১৯৫৩ সালে কিভাবে অতবড় একটা টেডিবিয়ার এসে পড়ল। ভারতবর্ষে তখন কি উহা আমদানি হয়ে গেছে? সেই প্রশ্ন আবার কোন উত্তর নেই।

শেষ একটা ছোট প্রশ্ন ১৯৭১ কি মফঃস্বলে একটু ধনি পরিবারের মেয়েরা স্কুটার চালাতো? ব্যাস এইটাই আর কিছু না। এই শেষ প্রশ্ন যার কোন উত্তর নেই।

পরিশেষে বলব হয়ত এটা আমারও ভুল হতে পারে দেখার, ক্যমেরা যখন পর্দার ডান দিক থেকে বাম বা বাম দিক থেকে ডান দিকে ঘুরছিল, একটু জোরেই ঘুরছিল না কেমন যেন সব কিছু ঝাপসা লাগছিল, আমি যদিও সামনের রো তে বসেছিলাম হতেই পারে আমার দেখার ভুল, কিন্তু তবুও সর্বত ভাবে মনে হল ল্যান্ডস্কেপ দেখানোর সময় সিনেমাটোগ্রাফার একটু বেশীই তাড়াহুড়ো করেছেন। আরও কিছু বলা যেত, রবি ঠাকুরকে বাদ দিয়ে কেন ভাবা যায় না, বেশ কিছু বছরের এই চল কবে বন্ধ হবে, বাঙালীর আবেগ ধরার এক ব্যর্থ প্রচেষ্টা ইত্যাদি ইত্যাদি  তবে না থাক অনেক হল সমলোচনা, আলোচনা, প্রশ্ন উত্তর খোঁজার পালা, একটাই কথা বলার, যে ছবি আমার কাছে এতগুল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না সে তো আমার মনকে স্পর্শ করতে পারে না, স্বাভাবিক ভাবেই তখন প্রশ্ন আসে এই কাঠফাটা রোদেও কিভাবে এত মানুষ তাহলে আসতে পারে, আসলে সবটাই বিজ্ঞাপনী কায়দায় প্রোডাক্ট বেচার মতন, তা না হলে শেষ ২০ বছর ধরে একটা ভালো বাংলা ছবির জন্য বাঙালিকে হাপিত্যেশ করতে হত না।। 

লেখাঃ আদিত্য। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন